দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা জানি হাওরের জীবন বরাবরই একটু ভিন্ন ও আশ্চর্যজনকও বটে। প্রতি মৌসুমে হাওরের রূপ বদলায়, পাল্টে যায় মানুষের জীবনযাপনের চিত্র।
গ্রীষ্মের এই কাঠফাটা রোদে এখানকার মানুষ শস্যদানায় জীবিকা খুঁজে নেন, আর বর্ষায় বেরিয়ে পড়ে ডিঙি নৌকা নিয়ে। তবে কিছু মানুষ হাওরে আসেন শুধু এক মৌসুমেই। চৌচির প্রান্তরে গড়ে তোলেন অস্থায়ীভাবে বসতি, পরিবার নিয়ে হাওরের বুকে চলে তাদের এক কর্মযজ্ঞ। তাদেরকে হাওরাঞ্চলের মানুষরা ‘জিরাতি’ বলে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে তাদেরকে সাধারণ কৃষক মনে হয়, কিন্তু তাদের গল্প শুনে বলা যেতে পারে তারা ‘হাওরের আশ্চর্য এক অস্থায়ী বাসিন্দা’।
মূলত ফেব্রুয়ারিতে কিশোরগঞ্জের নিকলী হাওরে ছিল বোরো ধানের সমারোহ। যেনো সোনালি ধানের এক সাম্রাজ্য! কষ্টার্জিত সেই ধান গোলায় ভরতে সময় লেগে গেলো মে মাসের প্রথমদিন পর্যন্ত। আর এখন গোলাভরা ধানসহ বাড়িঘর গুটিয়ে অন্য গন্তব্যে চলে যাওয়ার পালা! কারণ হলো বৃষ্টি শুরু হলেই হাওর ভরে যাবে এক থৈ থৈ পানিতে!
কার্তিকে আগমন ও বৈশাখের বিদায় হয় যেভাবে
বোরো মৌসুমে হাওরে ধানখেতের মাঝখানে চোখে পড়বে অস্থায়ী ‘গ্রাম’ এবং ছোট ছোট কুঁড়েঘর। এইসব ঘর বানিয়ে বসবাস করেন জিরাতিরা। আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে গাছপালা বা ছায়া নেই। গবাদিপশুর সঙ্গে গাদাগাদি করে গোলাঘরে রাত কাটান তারা। এইসব মানুষের নেই বিশুদ্ধ পানির কোনো ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানার টয়লেট বা রাতে ঘুমানোর মতো জায়গা।
কিশোরগঞ্জের নিকলী, মিঠামইন, ইটনা এবং অষ্টগ্রাম—এই ৪টি হাওর উপজেলায় কার্তিক থেকে বৈশাখ মাস পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে গোলাঘরে বসবাস করেন বিভিন্ন এলাকার প্রায় ৩০ হাজার জিরাতি। এই অস্থায়ী গ্রামগুলোতে প্রায়শই: মাত্র কয়েকটি বাঁশের তৈরি ঘর থাকে। এগুলো শুধু শুষ্ক মৌসুমের জন্য তৈরি করা হয় ও বর্ষায় বন্যার পূর্বে ভেঙে ফেলা হয়। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বছরের ৬ মাস জীবনকে তুচ্ছ করে মাঠে পড়ে থাকেন হাজার হাজার কৃষক।
একদিন দুদিন নয় বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ এভাবেই চলছে জিরাতিদের জীবনযাপন! বাপ-দাদা থেকে শুরু করে তাদেরও পূর্বের বংশধররা এভাবেই চালাচ্ছেন নিজেদের কৃষিকর্ম। তবে নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই খাদ্য সৈনিকদের খবর রাখেন না কেউও। তাদের জিরাতিকালে জীবনমান উন্নয়ন বা সামান্য পানীয়জল ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করা হলে দেশের জন্য তারা আরও বেশি অবদান রাখতে পারতেন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org