দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ইতিমধ্যেই আমরা দেখেছি সম্প্রতি CEOWorld Magazine-এর ১৯শে এপ্রিল ২০২৪-তে প্রকাশিত Best Countries for Hiring Freelancers 2024-এর ৩০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম হয়েছে! এখন প্রযুক্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার পরও কেনো তলানিতে বাংলাদেশ? সেই প্রশ্ন উঠে এসেছে।
গত সাড়ে ৪ বছর ধরে বাংলাদেশ দাবি করে আসছিল যে, পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম আউটসোর্সিংয়ের কাজ হয় বাংলাদেশ থেকেই। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইন্টারনেট সোসাইটির ২০১৯-এর ডিসেম্বরের এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, পৃথিবীর প্রায় ২৪% আউটসোর্সিংয়ের কাজ করে থাকে ভারতের ফ্রিল্যান্সাররা; এবং এর পরেই ১৬% কাজের ভাগ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান। বিভিন্ন কান্ট্রি-ব্র্যান্ডিং প্রেজেন্টেশনেও এটা বলে আসছিল বাংলাদেশ।
ওই রিপোর্টটি বলছে যে, ঐতিহ্যগত কাজের মডেল বিশ্বব্যাপী একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনেরও সম্মুখীন হচ্ছে। অতিরিক্ত অর্থনৈতিক চাপ, একটি ভালো কর্ম—জীবনের ভারসাম্যের আকাঙ্ক্ষা ও দূরবর্তী কাজের প্রতি প্রবণতার মতো কারণগুলো অনেক কর্মীকে আরও স্বাধীন কাজের ব্যবস্থা খুঁজতে পরিচালিত করেছে। এর ফলস্বরূপ, বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্স কর্মশক্তি অভূতপূর্ব হারে বৃদ্ধিও পাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী প্রায় অর্ধেক কর্মীই এখন ফ্রিল্যান্সার। নিউইয়র্ক, লন্ডন ও মুম্বাইয়ের মতো শহরের প্রতিভাবান পেশাদাররা আবিষ্কার করেছেন যে, ফ্রিল্যান্স কাজ আর্থিক পুরস্কার ও কাজের সন্তুষ্টি প্রদান করে থাকে। এই নির্দেশিকাটি সিইও এবং প্রকল্প পরিচালকদের লক্ষ্য করে ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগের জন্য শীর্ষ দেশগুলোর রূপরেখা। এই তালিকার প্রতিটি দেশই স্বতন্ত্র সুবিধা প্রদান করে যা এটিকে উচ্চ-মানের ফ্রিল্যান্স প্রতিভা সোর্সিংয়ের জন্য একটি নিখুঁত গন্তব্য করে তুলতে সাহায্য করে।
বেশ কিছু দেশ ফ্রিল্যান্সারদের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ-সুবিধা দেয়। যেমন উচ্চ চাহিদা সহায়ক নীতি ও সহজ অর্থপ্রদানের পদ্ধতি। আরও ব্যবসার সুযোগের সুবিধা নিতে, অবস্থান নির্বিশেষে বিশ্বব্যাপী ক্লায়েন্ট বেজ প্রসারিত করার বিষয়টিও বিবেচনা করা মূল্যবান। এটি কপিরাইটিং, ডেভেলপমেন্ট, ডিজাইন, কোচিং ও আরও অনেক কিছুসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পেশাদারদের জন্যও প্রযোজ্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ফ্রিল্যান্সারদের জন্য দু’টি শীর্ষ গন্তব্য, তাদের বৃহৎ ও বৈচিত্র্যময় বাজারে বিভিন্ন শিল্পজুড়ে যথেষ্ট সুযোগ প্রদান করে থাকে। সিইও ওয়ার্ল্ড-এর গবেষণা অনুসারে জানা যায়, ফ্রিল্যান্সারদের নিয়োগের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেরা একটি দেশ, এরপর ভারত, যুক্তরাজ্য, ফিলিপাইন ও ইউক্রেন রয়েছে।
অনেকেই হয়তো জানেন যে, ফ্রিল্যান্সাররা বিশ্বব্যাপী কর্মশক্তির একটি বড় অংশ নিয়েই গঠিত। পুরোবিশ্বে প্রায় ১.৫৭ বিলিয়ন ফ্রিল্যান্সার রয়েছে। ফ্রিল্যান্স প্ল্যাটফর্মের বাজার পুরোবিশ্বে ৩.৩৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের অনুমান করা হয়। কেবলমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই ফ্রিল্যান্সাররা গত বছরও অতিরিক্ত ১০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছে, যা তাদের মোট ডলার ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে নিয়ে আসে। গড়ে, ফ্রিল্যান্সাররা বিশ্বব্যাপী প্রতি ঘণ্টায় ২১ ডলার উপার্জন করে। আর একটি মজার বিষয় হলো, প্রায় ৭০% ফ্রিল্যান্সারদের বয়স ৩৫ বা তারও কম।
বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং বিশ্বব্যাপী কর্মশক্তির একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে বর্ধিত কাজের কারণে যা দূর থেকে অনলাইনে সম্পন্ন করা যায়। ফ্রিল্যান্সাররা অবস্থান নির্বিশেষে যে কাওকে কাজের সুযোগ দেয় ও কম খরচে সমস্যা সমাধানে সাহায্যও করে, বিশেষ করে আইটি টিমের ক্ষেত্রে। ফ্রিল্যান্সিং-এর লাইফস্টাইল সুবিধাগুলোও আকর্ষণীয়, স্বাধীনতার পাশাপাশি রয়েছে নানা ধরনের সুবিধা। এই পরিসংখ্যানগুলোর ওপর ভিত্তি করেই সম্ভবত আরও কর্মী ও কোম্পানিগুলো একটি কার্যকর সমাধান হিসাবে ফ্রিল্যান্সিং বেছে নেবে- সেটিই স্বাভাবিক।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো দ্বিতীয় থেকে বাংলাদেশ এক লাফে ২৯তম কেনো হলো? বিষয়টি দেশের প্রযুক্তিবিদদের ভাবাচ্ছে। বাংলাদেশে এমনিতেই বেকারের সংখ্যা অনেক। আর এইসব বেকারের বেশিরভাগই উচ্চ শিক্ষিত। বাংলাদেশে একদিকে যেমন শিক্ষিতের হার বাড়ছে, আর সেই তুলনায় কর্ম পরিধি কিন্তু বাড়েনি। একমাত্র অনলাইনভিত্তিক কাজগুলো এইসব শিক্ষিত যুবকদের পথ দেখাচ্ছে। আর তাই ফ্রিল্যান্সিং এখন আমাদের দেশের জন্য আশির্বাদ বলা যায়। কিন্তু হঠাৎ কী কারণে এর অবনতি? সেই বিষয়টি আমাদের ভাবাচ্ছে। সরকার ফ্রিল্যান্সারদের নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে আসছে। তারপরও কেনো এতো অবনতি? সেই বিষয়টি গুরুত্বসহকারে ভাবতে হবে। এই খাতের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে তেমনি সরকারকেও ভাবতে হবে কি কি সুবিধা দিলে এই ক্ষেত্রে আরও উন্নতি ঘটবে। নিশ্চয়ই সরকার বিষয়টি বিবেচনায় এনে ব্যবস্থা নেবেন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org