দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যা ৬ টার দিকে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’-এ রূপ পরিগ্রহ করে প্রবল গতিতে রুদ্রমূর্তি নিয়ে এগিয়ে আসছে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অভিমুখে। এটি আজ (রবিবার) রাতে আঘাত হানবে বলে আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ অপরিবর্তিত থাকলে আজ (রবিবার) রাতে বাংলাদেশের পটুয়াখালীর খেপুপাড়া এবং পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মধ্যভাগে কেন্দ্রমুখ রেখে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে এই অতি শক্তিশালী ক্রান্তিয় সাইক্লোন রেমাল। খুলনার সুন্দরবন থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম পর্যন্ত উপকূলীয় জেলাগুলোতে পড়বে এর ব্যাপক প্রভাব। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যা থেকে সাগর উপকূলভাগে থেমে থেমে বইছে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি। গভীর সঞ্চারণশীল সজল মেঘমালায় দেশের অধিকাংশ এলাকার আকাশ যেনো ছেয়ে গেছে। ইতিমধ্যেই উপকূলভাগে জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ এবং ভারতের আবহাওয়া দফতর ও কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, পূর্বের সাইক্লোন আম্ফান, ইয়াসের থেকেও শক্তিশালী রূপে আবির্ভূত হচ্ছে রেমাল। বিশাল আকৃতির রেমালের বাম দিকের ৩০ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার উপর দিয়ে যাবে এবং ৭০ ভাগ অংশ খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপর দিয়ে স্থলভাগে প্রবেশ করার সম্ভাবনা রয়েছে। স্থল ভাগে আঘাত করার সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ থাকার কথা ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। আঘাত হানার সময় ৮ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলভাগ প্লাবিত হতে পারে। এই সময় অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। রাত সাড়ে ৮ টায় আমেরিকার নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টার জানিয়েছে যে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এবং খুলনা জেলার উপর দিয়ে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত করার সম্ভাবনায় বেশি। এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষ উপকূলীয় এলাকায় লঞ্চসহ সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধের নির্দেশও দিয়েছে।
এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের এক সভা শেষে প্রতিমন্ত্রী মো. মহিববুর রহমান জানিয়েছেন, রেমাল মোকাবিলায় সার্বিকভাবে সব রকম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ডকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র ও ৮০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরা হতে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকা কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ৭ থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছাস হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
গতকাল (শনিবার) রাতে ঘূর্ণিঝড় রেমালের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করা গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় রেমাল এ পরিণত হয়েছে। উপকূলের ১৩টিসহ ১৮ জেলায় রেমাল আঘাত হানতে পারে। আজ (রবিবার) ভোরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেওয়ার প্রস্তুতিও চলছে। রেমাল অতিক্রমের সময় বাতাসের গতিবেগ হতে পারে ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত, কখনও কখনও এই গতিবেগ ১৩৫ কিলোমিটার পর্যন্তও হতে পারে।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org