দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতে প্রচণ্ড গরম ও তাপপ্রবাহে হিটস্ট্রোকে অশান্ত হয়ে উঠেছে দেশটির বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িষা ও ঝাড়খণ্ড। ৩৩ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। মৃতদের মধ্যে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার এবং গতকাল শুক্রবার মারা গেছেন এই ৩৩ জন। ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) পূর্বাভাষে জানিয়েছে, আজ শনিবারও (১ জুন) এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে।
মে মাসের শুরু থেকেই ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে এই তাপপ্রবাহ। এ সপ্তাহে রাজধানী নয়াদিল্লিতে তাপমাত্রা ওঠে ৫২ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ভারতের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়।
আইএমডির শুক্রবারের পূর্বাভাষে বলা হয়, আগামী দিনগুলোতে উত্তরপশ্চিম এবং মধ্যাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে তাপপ্রবাহ নেমে আসতে পারে, তবে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে তা আরও দুই দিন অব্যাহত থাকবে। আবহাওয়া দপ্তর আরও বলেছে যে, গ্রীষ্মকালে ভারতে যে গড় তাপমাত্রা থাকে—তার তুলনায় এই গ্রীষ্মে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ৪ দশমিক ৫ থেকে ৬ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি গরম পড়তে দেখা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য বিহারে গরম ও হিটস্ট্রোকে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে ১০ জনই চলমান লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ তত্ত্বাবধানের বিভিন্ন দায়িত্বে ছিলেন। ভারতের নির্বাচন আয়োজোনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মীদের সারাদিন কাজের মধ্যেই থাকতে হয়, অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময় তাদের বাইরেও কাটাতে হয়।
বিহারের অনেক এলাকায় এখনও ভোটগ্রহণ চলছে। সম্পূর্ণ বিহার রাজ্যে ভোটগ্রহণ শেষ হবে আজ (শনিবার)।
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য হিসেবে খ্যাত উত্তর প্রদেশে গতকাল (শুক্রবার) হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৯ নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মী। মৃতদের মধ্যে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মী রয়েছেন। এছাড়াও গরমজনিত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৩ জন।
গত দু’দিনে হিটস্ট্রোকের শিকার হয়ে ওড়িষার মৃত্যু ঘটে অন্তত ১০ জনের। ওড়িষার রাজ্য সরকার বেলা ১১টা হতে বিকেল ৩টা পর্যন্ত জনগণকে বাড়ির বাইরে যাওয়া থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান, কারণ ওই সময় তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে।
এছাড়াও বিহারের প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও ওগত দু’দিনে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরও ৩ জন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org