দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানসিক রোগীদের যত্ন নেওয়া খুব সহজ কাজ নয়। সেজন্য লাগে ধৈর্য, সহনশীলতা ও সহানুভূতি। তবে নিজের যত্ন না নিলে শেষ পর্যন্ত নিজেরাই অবসাদের শিকার হতে পারেন।
সাম্প্রতিক সময় মানসিক ব্যাধি বেড়েই চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছেন এমন মানুষদের সঙ্গে মানিয়ে চলা খুব সহজ কাজ নয়। অবসাদগ্রস্ত মানুষের স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তান কিংবা ভাই-বোন, যিনি কিংবা যারা সবসময় সঙ্গে থাকেন, তাদের নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলতে হয়।
দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগীর যত্ন নেওয়া অসম্ভব ধৈর্যের একটি বিষয়। যারা এই ধরনের মানসিক রোগীর সেবা করেন, তাদের মধ্যেও এক ধরনের অবসাদ, হতাশা, বিরক্তি, উদ্বেগ তৈরি হওয়া খুব সাধারণ একটি ব্যাপার। অবসাদের কারণগুলো দেখে নিন:
সময়
মূলত মানসিক রোগ দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধি। এর থেকে মুক্তি পেতে বেশ সময় লাগে। বহুদিন ধরে চিকিৎসা চালানোর প্রয়োজন পড়ে। এতোদিন ধৈর্য ধরে সেবা করা খুবই ক্লান্তিকর একটি কাজ হতে পারে।
অনিশ্চয়তা
মানসিক অসুস্থতার নিরাময় কখনই নিশ্চিত নয়। রোগীর অবস্থা কখন কীভাবে পরিবর্তিত হবে, তা কখনও বলা যায় না। এতে আরও চাপও সৃষ্টি হতে পারে।
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা
পরিচর্যাকারীরা প্রায়শই নিজেদের জন্য সময়ই বের করতে পারেন না কিংবা নিজের যত্ন নেওয়ার বিষয়ে মনোনিবেশ করতেও পারেন না। যে কারণে তারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন বোধ করতে পারেন ও একাকীত্বে ভুগতে পারেন।
অর্থনৈতিক সমস্যা
মানসিক রোগের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল হতে পারে। পরিচর্যাকারীরা প্রায়শই তাদের প্রিয়জনের যত্নের খরচ বহন করার জন্য অর্থনৈতিক চাপেরও সম্মুখীন হন।
অপরাধবোধ
শত চেষ্টাতেও রোগের নিরাময় নাহলে, অনেক সময় পরিচর্যাকারীরা অপরাধবোধেও ভুগতে থাকেন। তারা মনে করতে পারেন যথেষ্ট ভালোভাবে যত্ন নিতে না পারাই রোগ নিরাময় না হওয়ার মূল কারণ।
অবসাদের লক্ষণসমূহ :
# দুঃখ, হতাশা ও কোনও কিছুতেই আনন্দ বোধ না করা।
# সর্বক্ষণ ক্লান্তি বোধ হওয়া।
# ঘুমের অসুবিধা কিংবা অতিরিক্ত ঘুমের প্রবণতা।
# ক্ষুধা বোধের পরিবর্তন ও ওজনবৃদ্ধি কিংবা হ্রাস।
# মনোনিবেশ করতে অসুবিধা হওয়া।
# সিদ্ধান্ত নিতে অসুবিধা হওয়া।
# হীনম্মন্যতায় ভোগা।
# অপরাধবোধ হওয়া।
# মৃত্যুচিন্তা কিংবা আত্মহত্যার প্রবণতা।
প্রতিরোধ এবং চিকিৎসা :
মানসিক রোগীদের পরিচর্যাকারীদের অবসাদের ঝুঁকি কমাতে ও চিকিৎসা করাতে বেশ কিছু পদক্ষেপও করা যেতে পারে। যেমন পরিবার, বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে সমর্থন চাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ। আবার আত্মগ্লানিতে না ভোগা উচিত, রোগীর রোগ নিরাময় না হওয়ার দায় নিজের কাঁধেই তুলে নিয়ে সেইভাবে কোনও লাভ হবে না। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org