দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক অর্থাৎ যাকে আমরা শর্টে বলি ভিপিএন। এটি ব্যবহারে ব্যবহারকারীর প্রাইভেসি সুরক্ষা, নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং কনটেন্টে প্রবেশের ক্ষেত্রেও ভিপিএনে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট বিক্ষোভ-সহিংসতার কারণে সরকার ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে বিধিনিষেধ আরোপ করায় দেশে ভিপিএনের ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়ে গেছে।
দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এবং নিউজ ওয়েবসাইটগুলোতে অ্যাক্সেস সীমিত করা হয়েছে, যাতে বিক্ষোভকারীরা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে না পারে ও উসকে দেওয়ার মতো তথ্যের প্রচার রোধ করা যায়। তবে, এর কারণে ভিপিএন এর ব্যবহার বেড়েছে। গত কয়দিনে বাংলাদেশ থেকে ভিপিএন ব্যবহারের হার ৫ হাজার গুণ বেড়েছে। কারণ হলো, মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার এবং নিরাপদে যোগাযোগের বিকল্প উপায় তালাশ করছেন।
এখন একটি প্রশ্ন উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশে ভিপিএন ব্যবহার করা কী বৈধ নাকি অবৈধ? এককথায় এর উত্তর হলো বাংলাদেশে ভিপিএন ব্যবহার করা অবৈধ নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশে এখনও ভিপিএনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়নি। তাছাড়া প্রযুক্তিগত কারণে এর ব্যবহার বন্ধ করার উপায়ও নেই।
ডাক, টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের ভিপিএন ব্যবহার না করার পরামর্শও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ভিপিএন থেকে বিরত থাকি। তথ্য সুরক্ষার জন্যই বিরত থাকি। ভিপিএন যে দিচ্ছে, সে পুরো তথ্য-উপাত্তই পাচ্ছে। ভিপিএন চালু রেখে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আর্থিক লেনদেন করলে গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল তথ্য অন্যের কাছে চলেও যেতে পারে। ভিপিএন ব্যবহার সাইবার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিদ্যুৎ জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ, ব্যাংক এবং তৈরি পোশাকসহ রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের সাইবার হামলার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রের মদদে দেশে সাইবার হামলার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।’
এই বিষয়ে নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ ও এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টারের (এপিনিক) নির্বাহী কমিটির সদস্য সুমন আহমেদ সাবির একটি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘ভিপিএন ব্যবহার করা হয় নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে এবং তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে। ধরুন গুলশান এবং ধানমন্ডিতে একই অফিসের দু’টি শাখা রয়েছে। কিংবা ঢাকা এবং চট্টগ্রাম কিংবা দুই দেশে দু’টি শাখার মধ্যে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। ভৌত কাঠামো কিংবা তারের মাধ্যমে এই নেটওয়ার্ক তৈরি বেশ ব্যয়বহুল, ক্ষেত্রবিশেষে অসম্ভবও হয়ে পড়ে। তাই ইন্টারনেটকে ভিত্তি করেই নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়। আর সেটিই হলো ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক। আর প্রাইভেট মানেই ব্যক্তিগত। অর্থাৎ ইন্টারনেট প্রটোকলভিত্তিক যে নেটওয়ার্কটি গড়ে উঠলো, সেটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহৃত হবে। পাবলিক কিংবা উন্মুক্ত নেটওয়ার্কের সঙ্গে এটি কখনও যুক্ত থাকবে না। যে কারনে ফাইল কিংবা তথ্য আদান-প্রদান করা যায় নিজেদের নিয়ন্ত্রিত নিরাপদ এক মাধ্যমে।’
এইসব বিবেচনায় সুমন আহমেদ আরও বলেন, ‘ভিপিএনের মূল উদ্দেশ্য হলো সাইবার জগতকে নিরাপত্তা দেওয়া। তাই বলা যায়, ভিপিএন সাইবার ঝুঁকি বাড়ায় না- বরং কমায়।’
তবে আরেকটি বিষয় হলো ভিপিএন ব্যবহার করতে ইন্টারনেটের বেশি ব্যান্ডউইডথের প্রয়োজন পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেটিও অবশ্য ১০ শতাংশের বেশি না। ব্যবহারকারী ব্যান্ডউইডথ তথা ইন্টারনেট নিজের টাকায় কিনেই ব্যবহার করেন। এতে আর্থিক ক্ষতি হলে তারই হবে, অন্য কারও ক্ষতি হচ্ছে না। ভিপিএন ব্যবহার করে কেও প্রতারণাও করতে পারে, এই ধরনের সাইবার প্রতারণা কিংবা সাইবার হামলা ওয়েবসাইট কিংবা সফটওয়্যারের মাধ্যমেও হতে পারে। তথ্যসূত্র: আরটিভি অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org