Categories: জাতীয়

বাঁধের বিরুদ্ধে বাঁধ বানাতে হবে: ভারতের কারণে বন্যায় ভাসছে দেশের পূর্বাঞ্চল

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতের ত্রিপুরার উজান থেকে নেমে আসা ঢল এবং কয়েক দিনের প্রবল বর্ষণে দেশের অন্তত ১১ জেলায় আকস্মিক বন্যায় ৩৬ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। সৃষ্টি হয়েছে এক মহা মানবিক বিপর্যয়।

হঠাৎ করে ভারতের ত্রিপুরার বাঁধ খুলে দেওয়ায় পূর্ব প্রস্তুতি নিতে না পারায় অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রেও যেতে পারেননি। বেশিরভাগ মানুষের ঘরেই খাবার পর্যন্তও নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত থেকে নেমে আসা ঢলই আকস্মিক বন্যার সৃষ্টি করে।

সম্প্রতি ভারতের বাঁধগুলোর কাছাকাছি দূরত্বে বাংলাদেশ সীমান্তে আরও উঁচু বাঁধ তৈরি করে পানির প্রবাহ ঠেকানোর পরামর্শ দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বানও জানাচ্ছেন নেটিজেনরা। তবে প্রশ্ন হলো- ভারত থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বাংলাদেশে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভারতের বাঁধের কাছাকাছি বাংলাদেশও বাঁধ নির্মাণ করলেই কী এই সমস্যার সমাধান হবে?

Related Post

ভারতের বাঁধের কাছাকাছি বাংলাদেশও বাঁধ নির্মাণ করতে পারে কি-না, এ বিষয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে ইঞ্জিনিয়ার মো. তানভীরুল ইসলাম অমিয় বলেছেন, “পরিকল্পনা ছাড়া ভারতের সব ট্রান্সবাউন্ডারি নদীর বাঁধের সামনে আরেকটা বাঁধ নির্মাণ শুরু করলে বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে মরুভূমিতে পরিণত হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেছেন যে, তিস্তা নদীর উপর ভারত যে বাঁধ নির্মাণ করেছে সেটির নাম ‘গাজলদোবা বাঁধ’। তার একটু ভাটিতেই বাংলাদেশের নীলফামারীতে তিস্তা নদীর উপরেই রয়েছে এই “তিস্তা বাঁধ’। এই তিস্তা বাঁধ উত্তরাঞ্চলে “মঙ্গা’ মোকাবেলায় খুবই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখলেও এতো অল্প দূরত্বে দুটি বাঁধ নদীর ভাটি অঞ্চলকে একদম ধূ ধূ বালুতে পরিণত করেছে।

বাঁধ নির্মাণ সম্পর্কে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া আরও একটি স্ট্যাটাস এমন যে, ‘সময় হয়েছে, ফারাক্কার ৪০ কিলোমিটার দুরে ৭৫০০ মিটার উচ্চতার দ্বিতীয় ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণ করার। তারপর তারা বর্ষায় বাঁধ খুলে দিলে পানি এই ৪০ কিলোমিটারের মধ্যেই থাকবে, যদি এর চেয়েও বেশি পানি ছাড়ে, তাহলে সেই পানি তাদের দেশেই আবার ফেরত যাবে, কারণ তাদের বাঁধের উচ্চতা থাকবে আমাদের চেয়ে কম, ৭৩৫০ ফিট!’ এই দাবির বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার তানভীরুল ইসলাম অমিয় বলেছেন, ‘ভারত বাঁধ খুলে দিলে আমরা আমাদের বাঁধ বন্ধ করে দিবো, বন্যার পানি আবার ভারতে চলে যাবে, এটা শুনতে খুব মজার মনে হলেও বিষয়টি এতো সহজ না। নদীর ধর্ম হচ্ছে উজান থেকে ভাটির দিকে প্রবাহিত হওয়া। তাই আপনি বাংলাদেশ অংশে একটা বাঁধ নির্মাণ করে দিলেন আর তখন নদী উল্টো দিকে প্রবাহিত হওয়া শুরু করবে এমন সম্ভাবনা খুবই কম। এইক্ষেত্রে দুটো জিনিস হতে পারে— এক. নদী ব্যারেজের আশেপাশে আরেকটা বিকল্প পথ তৈরি করে সেদিক দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করবে, দুই. নয়তো নদীর পানি বাঁধের একদম উজানের দিকেই জমা হতে হতে এক সময় বাঁধ ভেঙে ফেলবে বা বাধের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। দুই ঘটনাতেই পরিস্থিতি একই হবে— বাংলাদেশে আরও ভয়ানক আকস্মিক বন্যা ও তীব্র নদী ভাঙন দেখা দেবে।

পানি ব্যবস্থাপনার বিষয়ে প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম অমিয় আরও বলেন, ভারতের সঙ্গে অতিদ্রুত পানিবন্টন চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। ভারত সরকার বাংলাদেশের বর্ডারে প্রায় ৩০টি বাঁধ নির্মাণ করেছে। অথচ একমাত্র ফারাক্কা বাঁধ ছাড়া কোনো বাঁধের ব্যাপারে পানিবণ্টন চুক্তি নেই বাংলাদেশের সঙ্গে। এছাড়াও কোনো প্রকার গাইডলাইন ফলো না করে এক রাতের মধ্যে বাঁধের সব কয়টি দরজা খুলে দেওয়ার মতো কাজ কখনও মেনে নেওয়া যায় না। তিনি বলেছেন যে, সেচ প্রকল্প কিংবা মেগা স্কেলে রিজার্ভার প্রকল্প হাতে নিতে হবে। কৃত্রিম খাল কিংবা রিজার্ভার খনন করে রাখা যেতে পারে, যা প্রতি বর্ষা মৌসুমে বন্যার সময় নদীর পানি উপচে পড়ার পর সেখানে জমা করবে। খরার মৌসুমে চাষাবাদের কাজেও এই পানি ব্যবহার করা যাবে। আরেকটি সহজ প্রক্রিয়া হলো, নদীর নাব্যতা রক্ষা করা। উজানের ঢলে আসা পলি জমা হয়ে নদীর প্রস্থ ও গভীরতা দ্রুত কমে যাচ্ছে, পানি ধারণ ক্ষমতা কমছে। পরিকল্পিত ড্রেজিংও এইক্ষেত্রে জরুরি পড়েছে।

তবে যেভাবেই হোক কার্যকরি পদক্ষেপ নেওয়া বাংলাদেশের জন্য জরুরি হয়েছে পড়েছে। কারণ শুষ্ক মৌসুমে পানি না পাওয়া এবং বর্ষায় পানি ছেড়ে দিয়ে বন্যা সৃষ্টি করা যেনো প্রতিবছরের রুটিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গত তিন দিনের বন্যায় বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বহু মানুষ গৃহহারা হয়েছেন। বহু ফসলের ক্ষতি হয়েছে। মাছের ব্যবসায়ীদের পুকুর তলিয়ে গেছে, ঘরবাড়ি বিদ্ধস্ত হয়েছে। মানুষের দাঁড়ানোর জায়গা নেই। এক মহা মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।

এদিকে দুর্গত এলাকায় সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী এবং সাধারণ ছাত্র-জনতা ও স্বেচ্ছাসেবিরা ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। অনেকেই বন্যার্তদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন।তবে দেশের এই ক্রান্তিকর সময় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। আসুন আমরা সবাই একযোগে জাতির এই বিপর্যয় কাটিয়ে তুলি।

>>>>>>>>>>>>>>

ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।

লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর

২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।

সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-

১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।

২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।

৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।

৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।

৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।

৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।

৭. ত্বকে র‌্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।

রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :

১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।

২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।

এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অপরদিকে

জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:

১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।

২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।

৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।

৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।

৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।

৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।

৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।

৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org

This post was last modified on আগস্ট ২৩, ২০২৪ 8:59 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

শরীর ভালো রাখতে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দরকার

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমিষ ছুঁয়েও দেখেন না অনেকেই। তাহলে শরীরের প্রয়োজনীয় ওমেগা থ্রি…

% দিন আগে

বিনোদনের সেরা অভিজ্ঞতা পেতে চাই কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন আধুনিক টিভি

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সর্বপ্রথম স্বয়ংক্রিয় কোনো বস্তুর ধারণা করেছিলেন প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা। আর…

% দিন আগে

কর্টিসল হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলেই কী বিগড়ে যাবে জীবনের ছন্দ?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানব শরীরে কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়লে নানাবিধ শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা…

% দিন আগে

ফারুকীর প্রশ্ন: শেখ হাসিনাকে আমরা কিভাবে দানব হয়ে উঠতে সাহায্য করলাম?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের জনপ্রিয় নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু…

% দিন আগে

ডোনাল্ড লু’র ঢাকা সফর নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট যা জানালো

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের আর্থিক স্থিতিশীলতা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বর্তমান…

% দিন আগে

গোসাপের পিছু ধাওয়া করে বিপত্তি: ঘরে ঢুকে পড়লো ১১ ফুট লম্বা গোখরো!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গোসাপের পিছু ধাওয়া করে ঘটে বিপত্তি। শেষমেষ ঘরে ঢুকে পড়লো…

% দিন আগে