দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মানব শরীরে কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়লে নানাবিধ শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। জীবন যাপনে ছোটখাটো যে অসুখ কিংবা সমস্যা লেগেই থাকে, এর কারণও এই হরমোন নয় তো?
কাজের চাপ থাকে প্রায় সব জায়গায় ঘরে-বাইরে। অফিসে কাজ শেষ করার তাড়া, সংসারের দায়দায়িত্ব— সব মিলিয়ে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা যেনো ঘিরে ধরছে। মনের উপর চাপ বেড়েই চলেছে একাধারে। এই মানসিক চাপের সঙ্গে লড়তে লড়তে নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। অনিদ্রা, অনেক সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত খেয়ে ফেলা, ওজন বাড়া তো রয়েছেই, স্নায়ুর সমস্যাও দেখা দিচ্ছে অনেক সময়। এই সবের কারণই হলো ‘স্ট্রেস হরমোন’-এর ভারসাম্য বিগড়ে যাওয়ার বিষয়। মানসিক চাপে ভুগলে স্ট্রেস হরমোনের কর্টিসলের ক্ষরণও তখন বেড়ে যায়। তখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়ে, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও তখন দেখা দেয়।
কর্টিসল হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে?
এই বিষয়ে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেছেন, “অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি কর্টিসল হরমোনটি নিঃসরণ করে। অতিরিক্ত মানসিক চাপ থাকলেও এটি হতে পারে। শরীর যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত কর্টিসল ক্ষরণ করেই, তখন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের আশঙ্কা তৈরি হয়। এই অতিরিক্ত কর্টিসলের কারণে মেদ জমে। ওজনও তখন বাড়তে থাকে।” আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যেমন- ঘুমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এই চিকিৎসকের কথায়, যার কম ঘুম কিংবা অনিদ্রার সমস্যা নেই, তিনিও ঘুমের ঘাটতিতে ভুগতে পারেন। শুলেও ঘুম আসতে চাইবে না। মাথায় হাজারও চিন্তা ঘুরপাক খাবে। দিনভর ক্লান্তি ভাবও থাকবে। কাজেও কোনো উৎসাহ পাওয়া যাবে না।
স্নায়ুতন্ত্রের উপরেও কর্টিসল প্রভাব ফেলতে পারে। হঠাৎ মনখারাপ, অবসাদ, ভুলে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত উদ্বেগ থেকে ‘প্যানিক অ্যাটাক’ হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়।
“কর্টিসলের ক্ষরণ বাড়লে তার খুব খারাপ প্রভাব পড়ে শরীরের মধ্যে। সব সময় ঝিমুনি আসবে, ত্বক নিস্তেজ হয়ে পড়ার সমস্যা হবে। ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগও আসতে পারে, এমনকি, অস্টিয়োপোরসিসের লক্ষণও দেখা দিতে পারে। সেই ক্ষেত্রে গাঁটে গাঁটে ব্যথা ভোগাবে, হাড়ের প্রধান উপাদান ক্যালশিয়াম এবং ফসফরাসের ঘাটতি হয়ে হাড় দুর্বল হয়ে পড়তে পারে।” তাই কর্টিসল হরমোনের প্রভাব কমাতে হলে মানসিক চাপ অবশ্যই কমাতে হবে। সে জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা, মেডিটেশন কিংবা ধ্যান জরুরি। রাতে টানা ৭ হতে ৮ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। সবচেয়ে বেশি জরুরি সুষম আহার। বাইরের যে কোনও খাবার, ভাজাভুজি, প্রক্রিয়াজাত খাবার হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করার জন্য দায়ী। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org