দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মূলত ‘এমআরএনএ’ প্রযুক্তিতেই কোভিডের টিকায় বড় সাফল্য এসেছিল। একই প্রযুক্তিতে ক্যান্সারের প্রতিষেধকও কী এবার সাফল্যের পথে? মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে কী দেখেছেন বিজ্ঞানীরা?
করোনা নিরাময়ে বিশল্যকরণীর মতো কাজ করেছিল মেসেঞ্জার আরএনএ কিংবা ‘এমআরএনএ’ প্রযুক্তি। করোনার সংক্রামক প্রজাতির বিভাজন থামিয়ে দিতে মানব শরীরে বার্তাবহ আরএনএ (রাইবো নিউক্লিক অ্যাসিড)-কে কাজে লাগিয়েছিল আমেরিকার ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মডার্না। সেই পথে একই প্রযুক্তিতে ক্যান্সারের টিকা তৈরি করে এবার চমকে দিয়েছেন মডার্নার বিজ্ঞানীরা। বেশ কয়েক মাস ধরে এই প্রতিষেধকের ‘ক্লিনিকাল ট্রায়াল’ কিংবা পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছিল মানুষের শরীরে। সম্প্রতি সংস্থাটির তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, প্রথম পর্বের ট্রায়ালে আশার আলো দেখা গেছে। এই প্রতিষেধক কয়েক জন ক্যান্সার রোগীর শরীরে টিউমারের বৃদ্ধিও থামিয়ে দিতে পেরেছে।
অর্থাৎ প্রতিষেধক বলতে বোঝায়, রোগের প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাও। আগে থেকেই শরীরে ওষধ ঢুকিয়ে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে রাখা হয়। তবে ক্যান্সারের প্রতিষেধক একটু ভিন্ন রকমের। শরীরে টিউমার কোষের উপস্থিতি ধরা পড়লে তবে ক্যান্সারের প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হবে। এর কাজই হবে সেই টিউমার কোষের বৃদ্ধি এবং বিভাজনকে থামিয়ে দেওয়া, যাতে করে ক্যান্সার শরীরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে। ক্যান্সারের প্রতিষেধক তৈরির চেষ্টা বিশ্ব জুড়ে চলছে। বিভিন্ন পদ্ধতি এবং প্রযুক্তিতে ক্যান্সারের টিকা এবং ওষুধ তৈরির চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ‘এমআরএনএ’ প্রযুক্তি, যাকে কাজে লাগিয়ে ক্যান্সারের প্রতিষেধক তৈরি করেছে মডার্না।
কী ধরনের প্রতিষেধক তৈরি হলো?
সংস্থার তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই প্রতিষেধকের নাম ‘এমআরএনএ-৪৩৫৯’। ক্যান্সার শরীরে ছড়াতে শুরু করলেই এই প্রতিষেধক প্রয়োগ করা হবে। এর কাজ হবে টিউমার কোষের অনিয়ন্ত্রিত বিভাজনকে থামিয়ে দেওয়া। শুধু তাই নয়, এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তৈরি প্রতিষেধক সুস্থ কোষ এবং টিউমার কোষের মধ্যে পার্থক্যও করতে পারবে। আর তখন বেছে বেছে ক্যান্সার কোষগুলোকেই খুঁজে বের করে ধ্বংস করবে। কেমোথেরাপিতে যেমন ক্যান্সার কোষের পাশাপাশি অনেক সুস্থ কোষও নষ্ট হয়, সেই সমস্যা হবে না এই প্রতিষেধকে। এই পদ্ধতি যন্ত্রণাহীন এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন বলেও দাবি করা হয়।
ক্যান্সার ছড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারে তলানিতে উঠে আসে। টিউমার কোষের যতো বেশি বিভাজন হয়, ততোই শরীরের রোগ প্রতিরোধী কোষ, যেমন টি-কোষ, ম্যাক্রোফাজ এবং ডেনড্রাইটিক কোষগুলো নষ্ট হতে শুরু করে দেয়। তারা লড়াই করার ক্ষমতাও তখন হারায়। তাই বিজ্ঞানীদের লক্ষ্যই ছিল, এমন প্রতিষেধক বানানো যা শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে সজাগ এবং সক্রিয় করে তুলতে পারে। এমআরএনএ প্রযুক্তিতে তেমনটিই সম্ভব করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
এদিকে এমআরএনএ-৪৩৫৯ প্রতিষেধকের প্রথম পর্বের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে আশার আলো দেখা গেছে বলে দাবি করা হয়। ৮ জন ক্যান্সার রোগীর শরীরে টিউমার কোষ নির্মূল করেছে ওই প্রতিষেধকটি। কোনও রকম জটিল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নাকি দেখাই যায়নি। তবে প্রতিষেধকটির যতো বেশি পরীক্ষা হবে মানুষের শরীরে, ততোই তার কার্যকারিতা আরও বেশি ভালোভাবে বোঝা যাবে বলে জানানো হয়। এই প্রতিষেধকটি যদি সফল হয়, তাহলে অবশ্যই তা হবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তবে সেইসঙ্গে কিছু প্রশ্নও থেকেই যায়। প্রতিষেধক প্রয়োগে ক্যান্সার নির্মূল হলেও তা আবার ফিরে আসতে পারে কি-না, সেই বিষয়ে অবশ্য নিশ্চিত করে কিছু জানাতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। ক্যান্সার চিকিৎসায় এই প্রতিষেধক কতোটা খরচসাপেক্ষ হবে, তাও অজানা এখনও। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org