দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ঋতুস্রাবের সময় কোন পণ্যটি ব্যবহার করা উচিত? আর এটি কতোক্ষণ অন্তরই বা পরিষ্কার করা দরকার? এই বিষয়ে কী বলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরা?
মেয়েদের কাছে পিরিয়ডের দিনগুলো বড়ই অস্বস্তিকর। প্যাড ব্যবহার করলে চুলকানি কিংবা স্যাঁতসেঁতে ভাবের শেষ থাকে না। তার উপর প্যাড পরিবর্তনের ঝামেলা তো আছেই। যদিও বর্তমান সময়ে প্যাডের বদলে অনেক মহিলাই ট্যাম্পন বা মেন্সট্রুয়াল কাপকেও বেছে নিচ্ছেন। তবে অনেকেই এই মেন্সট্রুয়াল পণ্য ব্যবহার নিয়ে ও এই সময় কী-কী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চলা উচিত, তা নিয়ে মোটেও সচেতন নন। এখানেই ভুল করে বসছেন বেশিরভাগ নারী। আর তখনই মনে জাগছে সংক্রমণের ভয়। ঋতুস্রাবের সময় কোন পণ্য ব্যবহার করা উচিত ও কতোক্ষণ অন্তরই বা পরিষ্কার করা দরকার, সেই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: পূরবী মুখোপাধ্যায় এবং ডা: জয়তী মণ্ডল।
কতোক্ষণ অন্তর প্যাড পরিবর্তন করবেন?
মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করুন কিংবা স্যানিটরি ন্যাপকিন, তা নির্দিষ্ট সময় অন্তর পরিবর্তন এবং পরিষ্কার করাও জরুরি। ডা: পূরবী মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘সারাদিনে অন্তত ৩ বার স্যানিটারি প্যাড বদলাতে হবে।’ সাধারণত ৪-৬ ঘণ্টার মধ্যে স্যানিটারি প্যাড পরিবর্তন করাটা জরুরি। অবশ্য, কতোটা পরিমাণ রক্তপাত হচ্ছে- তার উপর নির্ভর করছে আপনি কতোক্ষণ অন্তর প্যাড পরিবর্তন করবেন।
মেন্সট্রুয়াল কাপ পরিষ্কার করবেন কতো সময় পর?
সাধারণত মেন্সট্রুয়াল কাপ রক্তে ভরে গেলে সেটি পরিষ্কার করে নেওয়াটা জরুরি। ডা: জয়তী মণ্ডল বলেছেন, “মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা পুরোপুরি সুরক্ষিত, যদি আপনি সঠিকভাবে হাইজিন (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা) বজায় রাখতে পারে। মেন্সট্রুয়াল কাপ ৬-৮ ঘণ্টা অন্তর পরিষ্কার করাটা জরুরি।” যদি আপনি মেন্সট্রুয়াল কাপ ঘণ্টার পর ঘণ্টা একইভাবে ব্যবহার করেন, তাহলে বিপদে পড়তে পারেন। এ সম্পর্কে ডা: পূরবী মুখোপাধ্য়ায় বলেছেন, “মেন্সট্রুয়াল কাপ সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ নয়। এই কাপ ব্যবহার করলে রক্তগুলো জমে থাকছে। শরীরের বাইরে বের হতে পারছে না। এতে করে সংক্রমণের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেতে পারে।”
ট্যাম্পন কতক্ষণ অন্তর বদলাবেন?
স্যানিটারি প্যাড এবং মেন্সট্রুয়াল কাপের মতো ট্যাম্পনও দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা যাবে না। এতেও যৌনাঙ্গে সংক্রমণের ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে। ডা: পূরবী মুখোপাধ্যায় বলেন, “ট্যাম্পনও ২-৩ ঘণ্টার মধ্যেই পরিবর্তন করা উচিত।” যে মেন্সট্রুয়াল পণ্যই আপনি ব্যবহার করুন না কেনো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে ঋতুস্রাবের দিনগুলো অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাবেন। তাতে করে আগামী দিনে সংক্রমণের ঝুঁকি এড়িয়ে চলা যাবে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org