দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এক মাসের বেশি সময় ধরে আপনি কী কাশিতে ভুগছেন? তারপরও চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছেন না? তাতে যে বড় বিপদ হতে পারে সেটি কী আপনি জানেন?
আবহাওয়া বদলে যাচ্ছে। এমন সময় অনেকেই কাশির ফাঁদে পড়ে কষ্ট পাচ্ছেন সেটি খুব একটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কাশি তাদের অনেকদিন ধরেই হচ্ছে। সঙ্গে উঠছে কফও। এমন সমস্যার পিছনে ভাইরাসের কারসাজি রয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশিষ্ট মেডিসিন চিকিৎসক আশিস মিত্র। তার ভাষায়, ‘ঋতু পরিবর্তনের সময় কিছু ভাইরাস সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং সেটিই স্বাভাবিক। যে কারণে কাশি হতে পারে। এই ধরনের ভাইরাল কাশি মোটামুটি ৩০ দিনের মধ্যেই কমে যায়। তবে কোনও কারণে কাশি যদি এক মাসের বেশি সময় ধরে চলে, সেই ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া ছাড়া কোনও উপায় নেই।’
হয়তো আপনি জিজ্ঞেস করতেই পারেন, মাস খানেকের বেশি কাশি থাকার পিছনে ঠিক কোন কোন কারণ আসলে থাকতে পারে?
টিবি
এখন কার দিনে টিবি তেমন কোনো সিরিয়াস রোগ নয়। এটি হলো এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন। এই রোগে আক্রান্তের কাশিও হতে থাকে। সেইসঙ্গে জ্বর থাকে, ওজনও কমে যায়, বুকে ব্যথা হয়। সেইসঙ্গে খুব ক্লান্তিও থাকতে পারে। তাই এই ধরনের লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে চেস্ট এক্স রে ও কফের পরীক্ষা করাতে হবে। রোগ ধরা পড়লে খেতে হবে অ্যান্টিবায়োটিক। এই নিয়মটা মেনে চললে অনায়াসে সমস্যাকে বশে রাখতে পারবেন।
অ্যাজমা
যদি দিনের পর দিন কাশি না কমে তাহলে অ্যাজমার কথাও ভেবে দেখতে হবে। এই রোগে ভুক্তভোগীদের ফুসফুসে প্রদাহ হতে পারে। সেইসঙ্গে এই অঙ্গের পেশি শক্তও হয়ে পড়তে পারে। যে কারণে কাশি হতে পারে। সেইসঙ্গে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। তাই এই ধরনের কোনও লক্ষণ দেখলেই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। চিকিৎসকের কথামতো ওষুধ খান। তিনি ইনহেলার নিতে বলতে পারেন। তা হলেই সমস্যাকে কাবু করে ফেলতে পারবেন অনায়াসে।
ফুসফুসে ক্যান্সার
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। এই রোগে ভুক্তভোগীদেরও প্রাথমিকভাবে কাশি হয়। কাশি কমতেই চায় না। কাশির সঙ্গে অনেক সময় রক্ত বের হতে পারে। ওজন দ্রুত গতিতে কমে যেতে পারে। এমনকি শ্বাসকষ্ট হতে পারে। তাই কাশি না কমতে চাইলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শে করে ফেলুন টেস্ট। কিছু ধরা পড়লে দ্রুত শুরু করতে পারবেন চিকিৎসা। অনায়াসে প্রাণ বেঁচে যাবে।
থাইরয়েডের প্রদাহ
অনেক সময়ই নানা কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডে ইনফ্লামেশন হওয়ার আশঙ্কাও থাকে। যে কারণে গলা ব্যথাও হতে পারে। সেইসঙ্গে থাকতে পারে কাশি।
এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে ধূমপান করলেও অনেক সময় কাশি হতে পারে। এই সমস্যাকে স্মোকার্স কাফ বলা হয়ে থাকে। তাই এক মাসের বেশি সময় কাশি থাকলে চেষ্টা করুন ধূমপান ছেড়ে দিতে। কিছুদিন বশে থাকলে সমস্যাকে কাবু করতে পারবেন।
অ্যাসিডিটি
আপনি হয়তো জানলে অবাক হয়ে যাবেন, নিয়মিত অ্যাসিডিটির সমস্যায় ভুক্তভোগীদেরও অনেক সময় কাশি হতে পারে। এই সমস্যা সাধারণ কিছু অ্যান্টাসিড খেলে সেরে যায়। তবে নিজের বুদ্ধিতে কোনও ওষুধ খাওয়া যাবে না। এই ভুলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তিনি যে ধরনের ওষুধ দেবেন, তা খেয়ে যান নিয়মিতভাবে। সমস্যাকে কাবু করে ফেলতে পারবেন অনায়াসে। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org