দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে ভারতে পালানোর পর থেকেই বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমে হিন্দুসহ সংখ্যালঘুদের ওপর সাম্প্রদায়িক হামলা হচ্ছে বলে দাবি করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
ওই সব গণমাধ্যমের প্রতিবেনে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে ভুয়া ছবি এবং ভিডিও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এমন সব অপপ্রচারে মেতে রয়েছে ষড়যন্ত্রকারীদের অনেকেই। নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়া এমন এক ভিডিও ফুটেজে দাবি করা হয় যে- হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে, যেটির কোনো সত্যতা পায়নি ভারতীয় ফেক্ট চেকিং সংস্থা ‘বুম’। এবার তেমনটিই জানালো খোদ ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
গতকাল শুক্রবার (৬ ডিসেম্বর) এনডিটিভি তাদের এক প্রতিবেদনে জানায় যে, ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি কী আসলে বাংলাদেশের শেরপুরে হিন্দুদের বাড়ি, ফসল এবং গবাদিপশুর ওপর বাংলাদেশি মুসলমানদের হামলার? বুম তাদের অনুসন্ধান শেষে জানিয়েছে যে, ভিডিওটি ভুয়া দাবিতে প্রচার করা হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশের শেরপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সহিংসতার দাবিতে প্রচারিত ফুটেজটি ছিলো আসলে মুর্শিদপুর দরবার শরীফে হামলার। এটি মূলত বাংলাদেশের শেরপুরে মুসলমানদের একটি মাজার।
শুক্রবার বাংলাদেশের ফ্যাক্ট চেকিং সংস্থা রিউমার স্ক্যানার তাদের এক প্রতিবেদনে জানায় যে, ভারতের অন্তত ৪৯ গণমাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে ভুয়া খবর প্রকাশ করা হয়।
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাষ্ট্র ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর ১২ আগস্ট হতে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত অন্তত ১৩টি ভুয়া খবর পাওয়া যায়। এমন ভুয়া খবর প্রচারের তালিকায় ভারতের অন্তত ৪৯টি গণমাধ্যমের নামও উঠে এসেছে।
কোন গণমাধ্যমে কতটি ভুয়া খবর
রিপাবলিক বাংলা সর্বাধিক ৫টি গুজব প্রচার করেছে। পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে হিন্দুস্তান টাইমস, জি নিউজ ও লাইভ মিন্ট, যারা প্রত্যেকেই অন্তত ৩টি করে গুজব প্রকাশ করেছে। এছাড়াও, রিপাবলিক, ইন্ডিয়া টুডে, এবিপি আনন্দ ও আজতক অন্তত দু’টি করে গুজব প্রচার করেছে। বাকি ৪১টি গণমাধ্যম অন্তত একটি করে গুজব প্রচার করা হয়েছে।
গুজবে যা ছিল
শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর তার নামে লেখা ভুয়া খোলা চিঠি, মুসলিম ব্যক্তির নিখোঁজ পুত্রের সন্ধানে মানববন্ধন করার ভিডিওকে হিন্দু ব্যক্তির দাবিতে প্রচার করা, ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার এক ভুয়া খবর, বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ভিত্তিহীন দাবি, ট্রাম্পের বিজয়ের পর ড. ইউনূস ফ্রান্সে পালিয়ে যাওয়ার ভুয়া দাবি, পাকিস্তানী জাহাজের মাধ্যমে অস্ত্র আনার মিথ্যা দাবি, নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবী হিসেবে প্রচার করা, বাংলাদেশে ভারতীয় চ্যানেল বন্ধ হওয়ার গুজব, বাংলাদেশে মুসলিমদের হামলায় হিন্দু মন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের দাবিতে ভারতের প্রতিমা বিসর্জনের ভিডিও প্রচার করা হয়, শ্যামলী পরিবহনের বাসে হামলার মিথ্যা তথ্য, চিন্ময় কৃষ্ণের আইনজীবীর ওপর হামলার ভুয়া দাবি ও বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে জানিয়ে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ সতর্কতা জারির বিভ্রান্তিকর খবরও ছিলো।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org