দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মাইগ্রেনের সমস্যা ছিল পঞ্চাশ ছুঁইছুঁই চপল রায় নামে ব্যক্তির। একদিন সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার কারণে সবাই ভেবেছিলেন নির্ঘাৎ মাথা ঘুরে গিয়েছিলো তার।
কোমর ভেঙে ভর্তি হন হাসপাতালে। দেখা গিয়েছিল, ৫০% দৃষ্টিহীনতার শিকার তিনি আদতে গ্লকোমার শিকার। প্রথম জন দেখতেই পাননি যে কারণে সিঁড়ির ধাপটাই বুঝতে পারেননি। উপর-নীচে, ডান-বামে তার দৃষ্টির ক্ষেত্রটাই (ফিল্ড অফ ভিশন) সঙ্কুচিত হয়ে গিয়েছে। তবে নিজের রোগ ধরা পড়ার আগে গ্লকোমা কথাটাই তিনি আগে কখনও শোনেননি!
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, একেবারেই বিচ্ছিন্ন কোনো নজির নয় এগুলো। ৯-১৫ মার্চ বিশ্ব গ্লকোমা সপ্তাহে আয়োজিত বিভিন্ন সেমিনার, আলোচনাচক্রে চোখের এই অসুখ নিয়ে চিকিৎসকদের মুখে শোনা যায় একটিই আক্ষেপ- সচেতনতার এতো অভাব বোধহয় অন্য কোনো রোগ নিয়েই নেই জনমানসে। চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য হলো, সে জন্যেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গ্লকোমাকে অন্ধত্বের নীরব ঘাতকও বলেছে। চুপিসারে মানুষকে এই রোগ স্থায়ী অন্ধত্বের দিকে ঠেলেও দেয় তাৎপর্যপূর্ণ উপসর্গ ছাড়াই। সেই ক্ষতি ও পূরণ করা যায় না কখনও।
গ্লকোমা বিশেষজ্ঞ টুটুল চক্রবর্তী বলেছেন, ‘ভারতের চল্লিশোর্ধ্ব জনতার মধ্যে ১.২০ কোটি মানুষ গ্লকোমায় আক্রান্ত ও এর মধ্যে ১২ লক্ষ মানুষ পুরোপুরি অন্ধও হয়ে যান।’ তিনি জানিয়েছেন, ২০ বছরের নীচে অনেকেই জুভেনাইল গ্লকোমাতে আক্রান্ত হয়। তার ব্যাখ্যা হলো, মূলত গ্লকোমা হচ্ছে কয়েকটি অসুখের সমাহার যা চোখের অপটিক নার্ভকে ক্ষতিগ্রস্তও করে ও তার জন্যে দৃষ্টিশক্তির অপূরণীয় ক্ষতিই হয়। এই ক্ষয় রোধ না করতে পারলে পরিণাম হবে অন্ধত্ব। টুটুলের ভাষায়, ‘শুরুতেই ধরা পড়লে ও যথাযথ চিকিত্সা হলে এই অসুখটির বাড়াবাড়ি ঠেকানো যায়। দৃষ্টি হারাবার কিংবা দৃষ্টিশক্তি আরও কমে যাওয়ার আশঙ্কাও তখন কমে।’
ওয়ার্ল্ড গ্লকোমা অ্যাসোসিয়েশনের কমিটি মেম্বার টুটুলের আক্ষেপ হলো, সচেতনতার অভাবে বাস্তবে গ্লকোমা এতো দেরিতে ধরা পড়ে যে ততোদিনে অপূরণীয় এক ক্ষতি হয়ে যায় অপটিক নার্ভের। যে কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে ক্ষীণতর হতে শুরু করে। তখন ‘ফিল্ড অফ ভিশন’ও ছোট হতে থাকে ক্রমাগতভাবে যা আর কখনও সংশোধন করা যায় না। ভারতের রিজিওনাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজির (আরআইও) অধিকর্তা তথা রেটিনা বিশেষজ্ঞ অসীম ঘোষের ভাষায়, ‘কখনও আর দৃষ্টি ফিরবেই না, এমন অন্ধত্বের জন্যে গ্লকোমাই সবচেয়ে বেশি দায়ী।’
জ্যোতির্ময় দত্তের মতো চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞরা এই অসুখকে চোখের সবচেয়ে ভয়াবহ অসুখ হিসেবেও আখ্যা দিচ্ছেন। ন্যাশনাল মেডিক্যালের চক্ষুরোগ বিভাগের এই প্রাক্তন প্রধানেরও আক্ষেপ হলো, ‘অন্ধত্ব নিবারণ কর্মসূচিতে যতোটা গুরুত্ব ছানিকে দেওয়া হয়, এর সিকিভাগও যদি গ্লকোমার জন্যে ধার্য হতো সরকারি নীতিতে, তাহলে পরিস্থিতি এতোটা খারাপ হতো না।’ তবে আগের চেয়ে কিছুটা হলেও সচেতনতা বেড়েছে বলে মনে করছেন টুটুল। তার অভিজ্ঞতা হলো, ‘গত এক দশকে সচেতনতা যেমন বেড়েছে, তেমটি বেড়েছে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও। কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রোম এবং ড্রাই আইজে়র ঝামেলা। গ্লকোমা রোগী বাড়ার নেপথ্যে এগুলোও বড় একটি কারণ।’ তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org