দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ডিমেনশিয়ার রোগীরা তরুণ বয়সের কথা মনে রাখতে পারলেও, কয়েক মাস আগে ঘটা ঘটনাগুলো কিন্তু ভুলে যান। নতুন তথ্য মনে রাখতে পারেন না তারা।

অ্যালঝাইমার্স, ভাস্কুলার, লিউই বডিজ়, ফ্রন্টোটেমপোরাল, পার্কিনসন্স- ডিমেনশিয়ার বিভিন্ন ভাগও রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, রোগী কয়েক দিন আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাও ভুলে গিয়েছে। স্মৃতি শক্তি লোপ পায়। তবে চিকিৎসকরা বলেছেন, ডিমেনশিয়া মানে শুধুই স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যাওয়া নয়। এই রোগের আরও বেশ কিছু লক্ষণ রয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে ডিমেনশিয়া হলো এমন একটি রোগ, যেখানে মস্তিষ্কের কোষ কিংবা নিউরন ধীরে ধীরে নষ্টও হতে থাকে। এর জেরে চিন্তাভাবনা করার ক্ষমতা ও মনে রাখার ক্ষমতাও লোপ পেতে থাকে। তাই ডিমেনশিয়ার রোগীরা মূলত তরুণ বয়সের কথা মনে রাখতে পারলেও, কয়েক মাস পূর্বে ঘটা ঘটনাগুলো ভুলে যান। নতুন কোনো তথ্য মনে রাখতে পারেন না। মূলত ৬০-এর শুরুর দিক থেকেই এই সমস্যাও বেশি দেখা দেয়।
নিউরোসাইকায়াট্রিস্ট ডাঃ কৌস্তভ চক্রবর্তী বলেন, ‘ডিমেনশিয়ার লক্ষণ শুধুই স্মৃতিশক্তি লোপ পাওয়া নয়। চেনা মানুষের নাম ভুলে যাওয়া থেকে শুরু করে আচরণে বদল আসাও কিন্তু ডিমেনশিয়ার লক্ষণ।’ বিষয়টি সম্পর্কে ব্যাখ্যা করেছেন ডাঃ চক্রবর্তী। চেনা মানুষের নাম ভুলে যাওয়া, পেন-পেন্সিল-ঘড়ির মতোই অতি সাধারণ বস্তুর নাম ভুলে যাওয়া ডিমেনশিয়ার অন্যতম লক্ষণ। এ ছাড়াও মানুষের আচরণে বেশ কিছু বদলও দেখা যায়। যেমন- একজন প্রাণোচ্ছ্বল ব্যক্তি, হঠাৎ করেই ভীষণ শান্ত হয়ে গেলেন। কারও সঙ্গে কথাও বলছেন না, চুপচাপ বসে থাকছেন, জীবনেও কোন লক্ষ্যই নেই- এ রকম হয়ে যেতেই পারেন।
ডাঃ চক্রবর্তীর ভাষায়, ‘ডিমেনশিয়ার আরেকটি লক্ষণই হলো ‘ডিলিউশন অফ থেফট’। অর্থাৎ, মানুষকেও সন্দেহ করা। এই লক্ষণে রোগীর সারাক্ষণই মনে হয়, কেও আবার আমার জিনিস চুরি করে নিচ্ছে। এই ধরনের লক্ষণ দেখলে কেও চট করেই ভাববে না যে, এটিও ডিমেনশিয়া হতে পারে।’ ডিমেনশিয়ার অন্যতম লক্ষণ হলো ‘অ্যাপ্রাক্সিয়া’। এই ক্ষেত্রে রোগী চুল আঁচড়ানো, জামায় বোতাম লাগানোর মতোই অতি সাধারণ কাজগুলোও করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই ধীরে ধীরে কথা হারিয়ে যায় রোগীর। ধরুন একটা বাক্যও বলা শুরু করলেন ডিমেনশিয়ার রোগী, দু’-তিনটি শব্দ বলার পর রোগীর ও মনে পড়ে না পরের শব্দটা কী বলবে। কথা না বলতে বলতে বোবার মতোই হয়ে যায় রোগী।
মোটামুটি ৬০ বছরের পর থেকেই এইসব লক্ষণ প্রকাশ পেতেই থাকে। প্রতি দশকে ৫ শতাংশ করে ডিমেনশিয়ার লক্ষণও বাড়তে থাকে। চিকিৎসকদের মতে, ডিমেনশিয়া যতো প্রাথমিক স্তরে ধরা পড়বে, এর উপসর্গগুলোকেই নিয়ন্ত্রণ করা ততোই সহজ হবে। মস্তিষ্কের কোষও বিভাজিত হয় না। মস্তিষ্কের কোষ মরে যাওয়া মানেই, সেখানে নতুন কোষ গঠিত হয় না ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতাও বন্ধ হয়ে যায়। অতএব, ডিমেনশিয়া যদি অনেকটা বেড়েও যায়, তখন চিকিৎসা শুরু করেও বিশেষ কোনো লাভ হয় না।
ডিমেনশিয়া রোগীর সুরক্ষার দিকে বিশেষ নজরও দিতে হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। এই ধরনের রোগীরা হঠাৎ করে পড়ে যেতে পারে। তাই বিছানার চারপাশেও রেলিং লাগাতে হবে, বাথরুম গেলে সেখানেও সতর্ক হতে হবে। সেইসঙ্গে এই ধরনের রোগীকে একা ছাড়া যাবে না। প্রয়োজনে ফোনে ট্র্য়াকার ডাউনলোডও করে রাখতে পারেন। ডিমেনশিয়া রোগীর ক্ষেত্রে নার্সিং কেয়ার ভীষণভাবে জরুরি। তথ্যসূত্র: এই সময়।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org