দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ একদিকে সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। অপরদিকে সিমলা চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে পাকিস্তান। আর তাই ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে যে, যুদ্ধবিরতি হলেও সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে সরে আসবে না ভারত। আবার কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের সমস্যাও রয়েছে দীর্ঘদিনের। সহসাই এর সমাধান হওয়ার আশাও কেও দেখছেন না।
যুদ্ধবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় কেনো?
চার দিনের যুদ্ধ বা যাকে বলা যায় সংঘর্ষের পর পরমাণু শক্তিধর দুই প্রতিবেশী ভারত এবং পাকিস্তান অবশেষে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির কথা জানিয়েছেন। তারপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও একই তথ্য জানিয়েছেন। তারপর দুই দেশের পক্ষ থেকেও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এই যুদ্ধবিরতি দুই শত্রু দেশের মধ্যে কতদিন স্থায়ী হবে সেটি নিয়ে সংশয় রয়েছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা পৃথক পৃথক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। কারণ যুদ্ধবিরতির কয়েক ঘণ্টা পরই যুদ্ধবিরতি লংঘনের অভিযোগও ওঠে।
ভারত-পাকিস্তান সত্যিই কী যুদ্ধে লিপ্ত ছিল?
এক কথায় বলা যায়-‘না’। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ড্রোন হামলা ও কামানের গোলাবর্ষণসহ তীব্র সামরিক সংঘাত সত্ত্বেও কোনো সরকারই আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণাই করেনি। ভারত এবং পাকিস্তান তাদের সামরিক পদক্ষেপগুলোকে নির্দিষ্ট সমন্বিত ‘সামরিক অভিযান’ হিসেবেই চিহ্নিত করেছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে পর্যটকদের ওপর এক মারাত্মক হামলার জবাবে ভারত ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করার কয়েক দিন পরই শনিবার পাকিস্তান ‘বুনিয়ান মারসুস’ নামে একটি প্রতিশোধমূলক আক্রমণ শুরু করে, যার আরবি অর্থ হলো “সিসার প্রাচীর’।
পহেলগামে হামলার জন্য ভারত আক্রমণের পেছনে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করেছে। তবে এই দুই দেশের জন্য এটি মোটেও অস্বাভাবিক নয়। পূর্ববর্তী বড় সংঘর্ষেও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি, এমনকি হাজার হাজার সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হওয়ার পরও।
যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতা নিয়েও ভিন্নমত
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার পরই দুই দেশই সেটিতে সম্মত জানায়। মার্কো রুবিও জানিয়েছিলেন যে, দুই দেশের সংকট নিয়ে নিরপেক্ষ কোনো একটি দেশে আলোচনায় বসবে দুই দেশ।
তবে ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই চুক্তি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সরাসরিই যোগাযোগ হয়েছে। তবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ সংকট সমাধানে কাজ করার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। তিনি চীনকে অত্যন্ত কাছের, খুব বিশ্বাসযোগ্য এক বন্ধু দেশ বলেও উল্লেখ করে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতিতে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একজন পাকিস্তানি সূত্র সিএনএনকে বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশেষ করে রুবিও এই চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, উভয় পক্ষই যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তিনি জানান, দুই দেশের সামরিক অভিযানবিষয়ক মহাপরিচালক ১২ মে আলোচনা করবেন। আর ইশাক দার জানিয়েছেন, দুই দেশের মধ্যকার সামরিক এবং হটলাইন চ্যানেলও চালু করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসির একটি থিংক ট্যাংক হাডসন ইনস্টিটিউটের ভারত এবং দক্ষিণ এশিয়ার গবেষণা ফেলো ড. অপর্ণা পান্ডা বলেছেন, ‘ভারত কখনও কোনো বিরোধে মধ্যস্থতা গ্রহণ করেনি, তা সে ভারত-পাকিস্তান হোক কিংবা ভারত-চীন হোক, অথবা অন্য কোনো বিরোধই হোক।’ তিনি আরও বলেন, অপরদিকে পাকিস্তান সর্বদা আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতার চেষ্টা করেছে, তাই তারা এর প্রশংসাও করবে। কারণ হলো কাশ্মীর বিরোধ নিয়ে আলোচনা ও সমাধানের জন্য এটি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করার একমাত্র উপায়।
যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাত্র দুই দিন পূর্বে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ফক্স নিউজকে বলেছিলেন যে, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে আমেরিকা কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। কারণ হলো, এখানে আমেরিকার কোনো স্বার্থই নেই। তবে এরপরই কেনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতায় জড়িয়ে পড়লো? এই বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, শুক্রবার প্রশাসন এই সংঘাত নিয়ে খুবই ভয়াবহ এক তথ্য পায়। তারপরই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় যে, যুদ্ধ বন্ধে মধ্যস্থতা করা ছাড়া কোনো উপায়ই নেই।
যুদ্ধবিরতি কী স্থায়ী হবে?
পরে দুই দেশই যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে। তবে এর দুই ঘণ্টা পরই ভারতশাসিত কাশ্মীরে বড় ধরনের বিস্ফোরণও ঘটে। বিস্ফোরণের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা না গেলেও বিভিন্ন শহরে ব্ল্যাকআউটের ঘটনাও ঘটে। তারপর পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি যুদ্ধবিরতি লংঘনের জন্য পাকিস্তানকেই দায়ী করেন। তবে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে যে, নিরপেক্ষ কোনো দেশে দুই দেশই আলোচনায় বসবে। তবে ভারতের তথ্য মন্ত্রণালয় জানায়, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের কোনো আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত হয়নি।
লন্ডনের এসওএএস (সোয়াস) বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়ান ইনস্টিটিউটের পরিচালক সুবীর সিনহা আলজাজিরাকে বলেন, বৃহত্তর দ্বিপাক্ষিক আলোচনা একটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং প্রক্রিয়ার মধ্যে যাবে। কারণ ভারত ইতিপূর্বে এই ধরনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিল। সিনহা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের পাকিস্তানের প্রতি এই তথাকথিত কঠোর নীতির একটি যুক্তিও ছিল যে, সমস্যা সমাধানের জন্য একটি বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়।’ তার মতে, এটি ভারত সরকারের অবস্থানের বিপরীতেও পরিণত হবে। কারণ হলো ভারতের ডানপন্থিরা এটা মানবেও না। তাদের সদস্যরাও পাকিস্তানের ওপর আক্রমণের আহ্বান জানিয়ে আসছে।
সিনহা আরও বলেন, ভারত সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে। অপরদিকে পাকিস্তান সিমলা চুক্তি হতে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে যে, যুদ্ধবিরতি হলেও সিন্ধু পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে সরে আসছে না ভারত। আবার কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের সমস্যা রয়েছে দীর্ঘদিনের। ওই সমস্যাও সহজে মেটার নয়। সব মিলিয়ে এক অনিশ্চয়তার দিকেই ধাবিত হচ্ছে ভারত-পাকিস্তান বিষয়টি।
>>>>>>>>>>>>>>
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org
This post was last modified on মে ১২, ২০২৫ 11:19 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়ার কঠোর নিন্দা জানিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় “তোমক” নামে এক জনপ্রিয় বিড়ালকে শহরের ‘সম্মানিত…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শসা আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্যতম পরিচিত এবং সহজলভ্য একটি সবজি।…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অ্যাপল ও গুগল বিশ্বজুড়ে তাদের ব্যবহারকারীদের আবারও নতুন করে সাইবার…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় সবচেয়ে পরিচিত ও সহজলভ্য একটি সবজি হলো…