ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ এবারই প্রথম বাংলাদেশে প্রতিবন্ধীদের জরিপ শুরু হচ্ছে। প্রতিবন্ধীরাও যে মানুষ, তাদেরও এ সমাজে অন্য মানুষদের মতো অধিকার আছে তা সরকার প্রমাণ করতে যাচ্ছে।
সরকার প্রতিবন্ধী জরিপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রথমে পাইলট কর্মসূচি হিসেবে কয়েকটি উপজেলায় জরিপ করা হবে। এরপর একযোগে সারাদেশে প্রতিবন্ধী জরিপের কাজ শুরু হবে। দেশে প্রথমবারের মতো এই জরিপের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী শনাক্তকরণসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে মোট প্রতিবন্ধীর সংখ্যা নির্ধারিত হবে। জরিপের মাধ্যমে চিহ্নিত প্রতিবন্ধীদের প্রত্যেককে বিশেষ পরিচয়পত্র প্রদানসহ পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও গ্রহণ করা হবে।
প্রতিবন্ধীদের জরিপ প্রসঙ্গে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব রণজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, সরকার প্রতিবন্ধীদের যথাযথ মর্যাদা দিতে জরিপের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া উদ্যোগটি শুধু জরিপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। প্রত্যেক প্রতিবন্ধীকে তার সক্ষমতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও আনুষঙ্গিক সাপোর্ট দিয়ে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। তিনি মনে করেন, সরকারের এ উদ্যোগটি জাতির কাছে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে সময়ে সময়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও প্রকৃত প্রতিবন্ধীর কোন সংখ্যা সরকারের কাছে নেই। জরিপ না থাকায় কোন ক্যাটাগরিতে কী ধরনের প্রতিবন্ধী আছে তাও সরকারের জানা নেই। এসব কারণে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ বাস্তবতায় বিষয়টি নিয়ে ১২ এপ্রিল এ সংক্রান্ত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির সভায় আলোচনা করে জরিপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রথম পর্যায়ে ৮ জেলার ৮টি উপজেলায় জরিপ করা হবে। এগুলো হল গোপালগঞ্জ সদর, জামালপুর সদর, কুমিল্লার বরুড়া, রাজশাহীর পবা, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ, বরিশাল সদর, হবিগঞ্জের চুনারুঘাট এবং দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলা।
জানা গেছে, জরিপ কাজ শুরু করতে ১৯ এপ্রিল সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক নাছিমা বেগম সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠির দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যে জরিপ কাজ শেষ করতে হবে। এর আগে কিভাবে, কারা জরিপ করবেন তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হবে। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শনাক্ত করবে মেডিকেল অফিসার, কনসালটেন্ট, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সেবা ও সাহায্যকেন্দ্রে আনা-নেয়ার দায়িত্ব পালন করবে উপজেলা কমিটি ও নির্বাচিত এনজিও। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তালিকা চূড়ান্ত করা, ডাটা এন্ট্রি ও সংরক্ষণ করবে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। উপজেলা কমিটি কর্তৃক প্রতিবন্ধী তালিকা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করবে জেলা কমিটি। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিবন্ধন করাসহ পরিচয়পত্র বিতরণ করবে সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কার্যালয়। একটি নির্ধারিত ফরমের মাধ্যমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের তালিকা প্রস্তুত করা হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ছবি তোলার জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে ডিজিটাল ক্যামেরা সরবরাহ করাসহ যাবতীয় লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করা হবে।
জানা গেছে, প্রতিবন্ধীদের জরিপ কাজের জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৮টি উপজেলার পাইলট কর্মসূচি সম্পন্ন করতে ৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। জরিপে শারীরিক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধীসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধীকে চিহ্নিত করা হবে। প্রতিবন্ধিতার কারণ, কার কী ধরনের সমস্যা এবং সমাধানের ক্ষেত্রে কী ধরনের পরিকল্পনা নেয়া যায় সে বিষয়েও নিবন্ধিত ফরমে সুপারিশ করা থাকবে। এর ফলে এক নজরে একজন প্রতিবন্ধী সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যাবে। এসব তথ্য ডাটাবেজ আকারে সমাজসেবা অধিদফতরের বিশেষ সফটওয়্যারে যুক্ত করা হবে। এদিকে এ বিষয়ে জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) গাজী মোঃ নূরুল কবীর বলেন, পাইলট কর্মসূচিভুক্ত প্রতিটি এলাকায় তাদের টিম রয়েছে। এ কাজে যাবতীয় সহায়তা দেয়ার জন্য সব রকম প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিলম্বে হলেও প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে এই প্রথম আসল কাজটি হতে যাচ্ছে। জরিপ সম্পন্ন হলে সারাদেশের চিত্র একসঙ্গে পাওয়া যাবে এবং এর ভিত্তিতে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে বলে বিষয়টিকে একটি ভালো উদ্যোগ বলে ধারনা করা হচ্ছে।