গাজা গণহত্যায় ৬৩টি দেশ জড়িত: সরকারগুলোকে আইনি পরিণতি নিয়ে সতর্কবার্তা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে জাতিসংঘের বিশেষ দূত ফ্রান্সেসকা আলবানিজ যুক্তরাজ্য, ইতালি ও জার্মানিসহ প্রধান ইউরোপীয় শক্তিগুলোকেই গাজায় গণহত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এইসব দেশের সরকারি কর্মকর্তাদের আইনি পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।

এ মাসের শুরুতে এক্সপার্ট উইটনেস পডকাস্টে উপস্থিত হয়ে তার সবশেষ প্রতিবেদন “গাজা গণহত্যা: একটি যৌথ অপরাধ’-এর ফলাফল নিয়েও আলোচনা করেন। সেখানে তিনি ইসরায়েলিদের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনকে সহায়তার জন্য ৬৩টি রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতার প্রমাণও উল্লেখ করেছেন।

মিডল ইস্ট আইকে তিনি বলেন, গাজা এবং পশ্চিম তীরে গণহত্যা ও ব্যাপক নৃশংসতার অপ্রতিরোধ্য প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো ইসরায়েলকে কূটনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক আবরণ প্রদান করে চলেছে।

Related Post

তিনি গণহত্যার ঝুঁকি স্বীকার করতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য ও ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আচরণে ব্রিটিশ সরকারের জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকার করতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমারের প্রতিও আহ্বান জানান।

আলবানিজ বলেন, “যুক্তরাজ্য সেইসব আকর্ষণীয় উদাহরণগুলোর মধ্যে একটি- যেখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব গাজার জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েল যে যুদ্ধ শুরু করেছে, তার চারপাশে ঐকমত্য তৈরি করতেও সাহায্য করেছে।’

ফিলিস্তিনিদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার ব্রিটিশ সংগঠন ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর ওপর যুক্তরাজ্যের দমন-পীড়নের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এটি গণহত্যায় “জড়িত থাকার পরিবেশ’ তৈরিতেও সহায়তা করেছে।

তিনি আরও বলেন, “সরকার যখন নাগরিক সমাজের কর্মকাণ্ডকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে চিহ্নিত করার, কিংবা সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে গণহত্যার তদন্তকারী সাংবাদিকদের থামিয়ে দেওয়ার ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে- তখন কার্যত অসহায় জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসকে ব্যবহার ও অনুশীলনকারী রাষ্ট্রকে (ইসরায়েল) সমর্থন অব্যাহত রাখার কারণে, জড়িত থাকার পরিবেশও তৈরি হয়।’

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইইউ যৌথ পদক্ষেপও নিতে চেয়েছিল। তবে এতে বাধা দেওয়ার জন্য আলবানিজ জার্মানি ও ইতালিকে দায়ী করেন।

আলবানিজ বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত দুঃখজনক কাকতালীয় ঘটনা যে, এক শতাব্দী পরেও, এই দু’টি দেশ এখনও ইতিহাসের ভুল দিকে রয়েছে।’

তিনি উল্লেখ করেন যে, “গণহত্যা প্রতিরোধে এই দু’টি দেশেরই সর্বোচ্চ দায়িত্ব রয়েছে- বিশেষ করে জার্মানি’র, তাদের রেকর্ডের কারণে।’

ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞার কারণেও দমে যাননি ফ্রান্সেসকা আলবানিজ

গাজায় গণহত্যা তদন্তের কাজের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন গত জুলাই মাসে আলবানিজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। নিষেধাজ্ঞার দলে কার্যকরভাবে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করতে পারেন না। সেখানে তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

২৮ অক্টোবর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সদর দপ্তরে এই বিশেষজ্ঞ আনুষ্ঠানিকভাবে তার প্রতিবেদনও প্রকাশ করতে পারেননি। পরিবর্তে, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন হতে পরিষদে বক্তব্য রাখেন।

তিনি মিডল ইস্ট আইকে বলেন, “এটা হতাশাজনক যে, একজন জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ জাতিসংঘের সদর দপ্তরে ভ্রমণ করতে না পারার কারণে ও তার ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণে নানা ধরণের সীমাবদ্ধতাও ভোগ করছেন।’

আলবানিজের বিরুদ্ধে মার্কিন পদক্ষেপের কারণে জাতিসংঘের অন্যান্য বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞদের যে কূটনৈতিক অধিকার রয়েছে, তা লঙ্ঘনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা দায়েরের আহ্বান জানান।

এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ফিলিস্তিন এবং আফগানিস্তানে নৃশংসতার তদন্তের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান প্রসিকিউটর ও তার দুই ডেপুটিসহ ৬ বিচারকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। পরবর্তীতে ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংস্থা ও কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে নিষেধাজ্ঞাগুলো দেওয়া হয়।

সাক্ষাৎকারে আলবানিজ তার ও অন্যদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলোকে “মাফিয়া-ধাঁচের’ ব্যবস্থা বলে সমালোচনা করেন। তিনি আইসিসি’র প্রসিকিউটর ও বিচারকদের প্রতি এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার আহ্বানও জানান।

তিনি আরও বলেন, “অবশ্যই তাদের তদন্ত চালিয়ে যাওয়া ও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা উচিত। আন্তর্জাতিক বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি ধ্বংস করে দেওয়া এই মাফিয়া-ধাঁচের ব্যবস্থার কারণে কী আমরা পেছনের দিকে ঝুঁকে পড়বো? আমাদের আগে অনেক কাজ ও অনেক জীবনের ত্যাগ হয়েছে। এখান থেকে আরও বড় আহ্বানের জবাবও দিতে হবে।’ সূত্র: ইত্তেফাক।

>>>>>>>>>>>>>>

ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।

লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর

২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।

সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-

১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।

২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।

৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।

৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।

৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।

৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।

৭. ত্বকে র‌্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।

রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :

১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।

২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।

এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অপরদিকে

জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:

১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।

২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।

৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।

৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।

৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।

৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।

৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।

৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org

This post was last modified on নভেম্বর ১৭, ২০২৫ 8:55 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

দেশজুড়ে বাংলালিংকের ‘সেফটি অ্যান্ড ওয়েলনেস উইক ২০২৫’ উদ্বোধন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশের শীর্ষস্থানীয় ডিজিটাল উদ্ভাবনী অপারেটর বাংলালিংক গতকাল (শনিবার) ঢাকা, চট্টগ্রাম,…

% দিন আগে

দীপিকা ছেলের জন্য সুস্থ হয়ে উঠতে চান

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ভারতীয় অভিনেত্রী দীপিকা কক্কর যে কোনো মূল্যেই হোক না কেনো…

% দিন আগে

নাখোশ ইউরোপ: যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিরাপত্তা কৌশল নিয়ে খুশি রাশিয়া

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদিত নতুন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলকে…

% দিন আগে

কানাডায় বরফের নিচে আয়োজন হলো পার্টি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কানাডার কুইবেকে কিছু তরুণ বরফে জমে যাওয়া হ্রদের নিচে ডুব…

% দিন আগে

বরফে আচ্ছাদিত রাস্তা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২…

% দিন আগে

শীতে ঠোঁট ফাটা হতে রক্ষা পেতে করণীয়

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতকালে বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়া এবং ঠাণ্ডা হাওয়ার কারণে মুখের…

% দিন আগে