তেল দিয়ে তৈরি ভাজা–পোড়া এড়িয়ে চলবেন কেনো?

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ভাজা–পোড়া খাবারের উপস্থিতি খুবই সাধারণ। পেঁয়াজু, বেগুনি, চপ, সামুচা, ফ্রাইড চিকেন কিংবা ফাস্টফুড- এইসব খাবারের চাহিদা সবসময়ই বেশি।

তবে নিয়মিত তেলে ভাজা খাবার খাওয়া শরীরের জন্য যে কতটা ক্ষতিকর, তা অনেকেই জানলেও গুরুত্ব দেন না। অতিরিক্ত তেল ও উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না করা খাবার শরীরের নানা সমস্যার জন্ম দেয়। তাই স্বাস্থ্যসচেতন হতে চাইলে ভাজা-পোড়া খাবার এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি।

ভাজা-পোড়া খাবারে থাকে উচ্চমাত্রার ক্যালোরি ও অস্বাস্থ্যকর ফ্যাট। অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার ওজন দ্রুত বাড়িয়ে দেয় এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়ায়। স্থূলতা আবার হৃদ্‌রোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হরমোনজনিত নানা সমস্যার কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যে তেল বারবার ব্যবহার করা হয়, তাতে ট্রান্স ফ্যাট তৈরি হয়, যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) বাড়ায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (HDL) কমায়।

Related Post

ভাজা খাবারের উচ্চ তাপমাত্রায় রান্না হওয়ার ফলে খাবারের প্রাকৃতিক পুষ্টি নষ্ট হয়ে যায়। শুধু তাই নয়- উচ্চ তাপে তেলে ভাজার সময় অ্যাক্রিলামাইড নামক একটি ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি হতে পারে, যা শরীরের কোষের ক্ষতি করে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষ করে ফাস্টফুড, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই বা অতিরিক্ত ঝলসানো ভাজা খাবারে এই ঝুঁকি বেশি থাকে।

ভাজাপোড়া খাবার হজমপ্রক্রিয়ায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অতিরিক্ত তেল পাকস্থলীতে অস্বস্তি, গ্যাস, অম্বল ও বদহজমের সমস্যা বাড়ায়। যাদের লিভার বা পিত্তথলির সমস্যা আছে, তাদের জন্য ভাজা-পোড়া আরও ক্ষতিকর। কারণ এসব খাবার লিভারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং পিত্ত নিঃসরণে ব্যাঘাত ঘটায়। ফল হিসেবে খাবারের স্বাভাবিক হজম ব্যাহত হয় এবং পেটব্যথা বা অস্বস্তি দেখা দেয়।

এ ছাড়াও ভাজা খাবার রক্তনালীর ভেতরে ফ্যাট জমতে সাহায্য করে, যা ধীরে ধীরে ধমনীর সংকোচন বা ব্লক তৈরি করে। এই ব্লক হৃদ্‌রোগ, ব্রেন স্ট্রোকসহ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে নিয়মিত ভাজা খাবার খাওয়া ইন্সুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ায়।

ভাজা–পোড়া খাবার স্বাদে যতই লোভনীয় হোক, স্বাস্থ্যের জন্য ততটাই ক্ষতিকর। তাই দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় ভাজা খাবারের পরিমাণ কমিয়ে বাষ্পে রান্না করা, সেদ্ধ, গ্রিল বা বেকড খাবারের প্রতি ঝোঁক বাড়ানো উচিত। এতে শরীর স্বাস্থ্যকর থাকবে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়বে এবং দীর্ঘমেয়াদে গুরুতর রোগের ঝুঁকি কমে যাবে। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সচেতন খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্পও নেই।

>>>>>>>>>>>>>>

ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে

মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।

লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর

২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।

সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-

১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।

২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।

৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।

৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।

৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।

৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।

৭. ত্বকে র‌্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।

রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :

১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।

২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।

এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অপরদিকে

জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:

১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।

২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।

৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।

৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।

৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।

৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।

৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।

৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org

This post was last modified on ডিসেম্বর ৮, ২০২৫ 5:16 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

শীতে হাঁচি–কাশি থেকে রেহাই পেতে যা করবেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতের শুরুতেই অনেকের সবচেয়ে সাধারণ স্বাস্থ্যসমস্যায় হলো হাঁচি-কাশি। তাপমাত্রা কমে…

% দিন আগে

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ও গণভোট ১২ ফেব্রুয়ারি

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আাজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ…

% দিন আগে

শুটিংয়ে দগ্ধ আরিফিন শুভ এখন ভালো আছেন

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হঠাৎ করে কিছুদিন আগেই খবর ছড়িয়েছিল, নতুন সিনেমার শুটিংয়ে অগ্নিদগ্ধ…

% দিন আগে

খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক ব্যবহার: বন্ধ্যাত্ব বাড়াসহ বিশ্ব জুড়ে ভয়াবহ ঝুঁকিতে মানবস্বাস্থ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ রাসায়নিক ব্যবহার নিয়ে গবেষণাটি করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন…

% দিন আগে

ফরাসি মহিলা ও তার ঘুমন্ত বিড়ালের কারণে জরিমানা

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এমন খবর শুনলে সত্যিই আজব মনে হয় কিন্তু বাস্তবে তাই…

% দিন আগে

সূর্যদয়ের দৃশ্য ও মনের অনুভূতি

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২…

% দিন আগে