শাহাদাত হোসেন এবং আবদুর রাজ্জাকের পর তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিক করলেন রুবেল। হ্যাটট্রিকের সঙ্গে একাই নিউজিল্যাণ্ডের ছয়টি উইকেট তুলে নিয়ে রুবেল বাংলাদেশকে এনে দেন ৪৩ রানের দারূণ জয়!
অথচ বাংলাদেশ ব্যাটিংয়ের শুরুটা হয়েছিলো করুণ! মাত্র ২৫ রানে সাজঘরে ফিরে যান তামিম ইকবাল, মমিনুল হক এবং আনামুল হক। তবে এর মাঝে মমিনুলের আউট হওয়াটা দূর্ভাগ্যই বলা যেতে পারে। কারণ আনামুলের সাথে ভুল বোঝাবুঝিতে রান নিতে গিয়ে কোনো বল না খেলেই ডায়মণ্ড ডাক পেয়ে আউট হয়ে যান এই বাঁহাতি। কিন্তু এরপরই ব্যাট হাতে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়ে যান অধিনায়ক মুশফিক এবং নাইম ইসলাম।
নাইম ইসলাম ধীরগতিতে খেলে ১৭ বলে ১ রান নিলেও অন্যপাশে ব্যাট হাতে কিউইদের ছড়ি ঘোরাচ্ছিলেন ক্যাপ্টেন্স নক মুশফিক। খোলসের আড়ালে না গিয়ে তিনি বলের সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেশ মারমুখী ভঙ্গিমাতেই খেলে যাচ্ছিলেন, ফলস্বরুপ ৫৪ বলে ফিফটি তুলে নেন অধিনায়ক। অন্যদিকে নাইম ইসলামও ধীরে ধীরে হাত খুলে চার মারা শুরু করলে বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে। তৃতীয় উইকেট জুটিতে মুশফিক-নাইম গড়ে তোলেন ১৫৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। নার্ভাস নাইন্টিনে এসে ব্যক্তিগত ৯০ রানে মুশফিক আউট হয়ে যান নিশামের বলে। কিছুক্ষণ পরই নাসির হোসেনও বোল্ড হয়ে যান নিশামের বলেই।
এরপর ষষ্ঠ উইকেটে সহ অধিনায়ক মাহমুদল্লাহ এবং নাইম ৫২ রানের আরেকটি জুটি গড়ে বাংলাদেশকে বেশ ভালো অবস্থানে নিয়ে আসেন। নাইম ইসলাম ব্যক্তিগত ৮৪ রানে আউট হবার সময় বাংলাদেশ ছয় উইকেটে ২৩২ রান। এরপর লোয়ার অর্ডারে সেরকম প্রতিরোধ গড়ে না ওঠাতে ৪৯.৫ ওভারে বাংলাদেশ অল আউট হয় ২৬৫ রানে।
২৬৬ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই নিউজিল্যাণ্ডকে পরীক্ষাতেই ফেলে দেয় বাংলাদেশ। মাত্র ৯ রানের মাথায় সোহাগ গাজীর বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান রাদারফোর্ড। এরপর দ্বিতীয় উইকেটে Devcich এবং এলিয়ট ৩৪ রানের জুটি গড়ে আপাত সামাল দেয়ার চেষ্টা চালালেও মাহমুদুল্লাহ বোল্ড করে দেন Devcichকে। এরপর টেইলর যখন রুবেলের বলে আউট হয়ে যান তার কিছুক্ষণপরই হানা দেয় বৃষ্টি।
বৃষ্টি শেষে ডার্ক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে নিউজিল্যাণ্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩ ওভারে ২০৬ রানে। বেশ দারুণভাবেই সমীকরণ ভীষণভাবে হেলে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ডের দিকে। কিন্তু তখনও বাকী ছিলো রুবেল চমক! বৃষ্টির পর রুবেল তার ওভারে আক্রমণে আসতেই তৃতীয় বলে স্টাম্প উপড়ে ফেলে ফেরালেন ৩১ বলে ৪৬ রান করে হুমকি হয়ে ওঠা কোরে অ্যান্ডারসনকে। পরের বলে ব্যাক ওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ বানালেন নিউজিল্যাণ্ড অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে। হ্যাটট্রিকের সামনে দাঁড়িয়ে থেকে ঠিক পরের বলে নিশামের গ্লাভস ছুঁয়ে বল চলে গেল উইকেটের পেছনে। ডানে দুর্দান্তভাবে ঝাঁপিয়ে ক্যাচটা লুফে নিলেন মুশফিকুর রহিম। রুবেল ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে নিজেকে অমর বানিয়ে ফেললেন হ্যাটট্রিক করে! কয়েকদিন আগেই অবশ্য ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও হ্যাটট্রিক করে বোধহয় প্র্যাকটিসটা সেরেই রেখেছিলেন রুবেল!
মূলত এরপর নিউজিল্যাণ্ড আর দাঁড়াতেই পারেনি। নাথান ম্যাককালাম এবং ৭৭ বলে ৭১ রান করা এলিয়টকেও তুলে নেন রুবেল, ২৯.৫ ওভারে ১৬২ রান করে অল-আউট হয়ে নিউজিল্যাণ্ড! তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ৪৩ রানে জয় করে বাংলাদেশ। দারূণ হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি মাত্র ৫.৫ ওভারে ২৬ রান দিয়ে ৬ উইকেট তুলে নেয়ায় রুবেলই হন ম্যাচ অব দ্য ম্যাচ!
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বাংলাদেশঃ ৪৯.৫ ওভারে ২৬৫ (তামিম ৫, এনামুল ১৩, মুমিনুল ০, মুশফিক ৯০, নাঈম ৮৪, নাসির ১, মাহমুদুল্লাহ ২৯, সোহাগ ৬, মাশরাফি ৬, রাজ্জাক ১২, রুবেল ৩*; নিশাম ৪/৪২, সাউদি ৩/৩৪, অ্যান্ডারসন ২/৪৬)
নিউজিল্যাণ্ডঃ ২৯.৫ ওভারে ওভারে ১৬২ (রাদারফোর্ড ১, ডেভিসিচ ২২, এলিয়ট ৭১, টেইলর ৮, অ্যান্ডারসন ৪৬, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ০, নিশাম ০, নাথান ম্যাককালাম ১০, সাউদি ০, ম্যাকক্লেনাগান ১*; রুবেল ৬/২৬, মাহমুদুল্লাহ ১/২৭, সোহাগ ১/৩৬, রাজ্জাক ১/৪৫)