দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দেশে এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা ব্যবহারের কারণে মানব দেহের স্বাস্থ্যঝুঁকি ক্রমেই এক নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, সামপ্রতিক সময়ে দেশের বাজারে উচ্চমাত্রার এন্টিবায়োটিকসহ হাজার হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ বাজারজাতকরণের অসুস্থ প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। উন্নত বিশ্বের যে কোন দেশে ওভার দি কাউন্টার (ওটিসি) তালিকাভুক্ত ছাড়া অন্য যে কোন ওষুধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও মগের মুল্লুক প্রবাদের মতো এদেশের পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান থেকে শুরু করে গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা হাজার হাজার ফার্মেসিতে সব ধরনের ওষুধ অবাধে বিক্রি হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণ ঠাণ্ডা, জ্বর, হাঁচি-কাশি থেকে শুরু করে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটসহ (আইসিইউ) ছোট-বড় প্রায় সব ধরনের রোগের চিকিৎসায় যথেচ্ছভাবে এন্টিবায়োটিকের অপব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। ফলে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। সৃষ্টি হচ্ছে নানা ধরনের উপসর্গের। যা থেকে এক সময় মারাত্মক আকার ধারণ করছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়লেও এসব নিয়ে মাথাব্যথা নেই ওষুধের বাজার দেখভাল করার সামগ্রিক দায়িত্ব পালনকারী সংস্থা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের। প্রয়োজনীয় জনবল সংকটের দোহাই দিয়ে বছরের পর বছর তারা দায়িত্ব এড়িয়ে চলেছেন। বাজারে যেসব ওষুধ বিক্রি হচ্ছে সেগুলোর মান ও দাম নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে দীর্ঘদিন থেকে। ওষুধের অপব্যবহারজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরূপণে কখনও দেশে বড় ধরনের কোন গবেষণাও পরিচালিত হয়নি।
ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নিষ্ক্রিয়তায় ওষুধের বৈধ উৎপাদনকারী ও লাইসেন্সপ্রাপ্ত আড়াই শতাধিক ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিরা দেশজুড়ে বেপরোয়া ও আগ্রাসী মার্কেটিং করছে। তাদের প্রায় সবার বিরুদ্ধে অভিযোগ- সারাদেশের বড়-ছোট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারের খ্যাতনামা অধ্যাপক থেকে শুরু করে সাধারণ মেডিকেল অফিসার, কোয়াক চিকিৎসক, পাড়া-মহল্লা ও গ্রাম্য হাটবাজারের ফার্মেসিতে বিক্রয় প্রতিনিধিরা অনৈতিকভাবে নানা উপহার-উপঢৌকন প্রদান করে নিজ নিজ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধ বিক্রির জন্য প্ররোচিত করছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিক্রয় প্রতিনিধিরা চিকিৎসক বা ব্যক্তিভেদে মাসিক কিংবা বার্ষিক চুক্তিতে নগদ টাকা, দামি মোবাইল ফোন, ফ্রিজ, এয়ারকন্ডিশন, বিদেশে সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণের জন্য বিমানের টিকিট, স্থানীয় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠানের খরচ, পিকনিক, দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভ্রমণ খরচ জুগিয়ে চিকিৎসকদের দিয়ে ওষুধ লিখতে ও বিক্রিতে প্রভাব খাটান। এমনও দেখা গেছে, এক মাস আগে সিরিয়াল নেওয়া একজন রোগিকে বসিয়ে রেখে ওষুধ কোম্পানির এসব বিক্রয় প্রতিনিধি ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে যাচ্ছে।
জানা যায়, এন্টিবায়োটিক বিক্রির ব্যাপারে কোন নীতিমালা বা বিধিনিষেধ না থাকায় চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ‘ওভার দি কাউন্টার’ থেকে মানুষ আলু- পোটল ও মুদি পণ্যের মতোই তা কিনতে পারছে। এর ফলে বহু এন্টিবায়োটিক (এমপিসিলিন, এমোক্সাসিলিন, সিপ্রোপ্রক্সাসিলিন এমনকি অ্যাজিথ্রোমাইসিন) আগের মতো কাজ করছে না। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, গ্যাসট্রোএনটারটিস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, এইচআইভি এইডস্্সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ সারতে দেরি হচ্ছে। বাড়ছে চিকিৎসা খরচ।
শুধু তাই নয়, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে এন্টিবায়োটিক সেবনে কোন ধরনের প্রটোকল মানা হয় না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের হাসপাতালে কোন অসুখে কখন কোন এন্টিবায়োটিক সেবন করা হবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন থাকলেও বাংলাদেশে তা নেই। অপারেশন থিয়েটারগুলো সংক্রমণমুক্ত না থাকার কারণে ক্ষতস্থান শুকাতে রোগীদের এন্টিবায়োটিক খেতে হয়। যেসব ওষুধ দেয়া হয় সেগুলোর সেনসিটিভিটি পরীক্ষা করা হয় না। সার্বিকভাবে কোন প্রটোকল/নীতিমালা বা গাইডলাইন না থাকায় উদ্বেগজনক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশংকা সৃষ্টি হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ডা. বে-নজীর আহমেদ জানান, এন্টিবায়োটিক ওষুধের অপ্রয়োজনীয় ও অযৌক্তিক ব্যবহার রোধে খুব শিগগিরই স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগে ওটিসি ওষুধের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু হবে। এ তালিকা প্রণীত হলে কমপক্ষে মানুষ কোনগুলো নিরাপদ ওষুধ তা জানতে পারবে। এছাড়া বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে বিভিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ভেদে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জেলা সদর হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বিশেষায়িত হাসপাতাল) ওষুধ ব্যবহারের তালিকা তৈরি করা যায় কিনা সে বিষয়টি নিয়ে অধিদফতরের শীর্ষ কর্মকর্তারা জোর চিন্তাভাবনা করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বর্তমানে দেশে আড়াই শতাধিক এলোপ্যাথিক ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে দেড় হাজারেরও বেশি জেনেরিক নামের ২২ হাজার ব্র্যান্ডের ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাত হচ্ছে। এত বিপুলসংখ্যক ওষুধের মধ্যে কতসংখ্যক ওষুধ প্রেসক্রিপশন ছাড়া অর্থাৎ ওটিসি বিক্রি হবে, এ সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের নেই। ১০ মে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার উদ্যোগে ‘ফরমুলেশন অব স্ট্রাটেজি টু এন্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স’ শীর্ষক কর্মশালায় এন্টিবায়োটিকের অপ্রয়োজনীয় ও অবাধ সেবনের ফলে ওষুধ ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স হয়ে ওঠার ভয়াবহ অবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. খন্দকার মোঃ শিফায়েত উল্লাহ বলেন, বর্তমানে ওষুধের বাজারের অবস্থা এতটাই বেহাল যে, দেশের যে কোন প্রান্তে ছোটখাটো মার্কেট কিংবা হাটবাজার নির্মিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে একাধিক ফার্মেসি দোকান গড়ে ওঠে। ওষুধের ব্যবহার সম্পর্কে সামান্যতম ধারণা নেই এমন অপেশাদাররা নিজেদের চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে এন্টিবায়োটিকসহ সব ধরনের ওষুধ বিক্রি করে থাকে। দেশের মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে ওষুধের অবাধ বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করা এখন সময়ের দাবি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোঃ সায়েদুর রহমান বলেন, অন্যান্য ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার শুধু রোগীর নিজের ক্ষতি করলেও এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারে প্রতিরোধী জীবাণুর জন্ম হওয়ায় তা মাটি ও বাতাসের মাধ্যমে অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। দেশের বিপুলসংখ্যক চিকিৎসক (বিশেষজ্ঞ/হাতুড়ে) অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইভ করছেন। রোগীর বয়স ও ওজন না দেখেই গরপড়তা এন্টিবায়োটিক সেবনের পরামর্শ দিচ্ছেন। সেক্ষেত্রে অনেক সময় কম পাওয়ারের বদলে বেশি পাওয়ারের এন্টিবায়োটিক দিচ্ছেন। অনেক চিকিৎসক আন্দাজে এক অসুখের জন্য ব্যবহূত এন্টিবায়োটিকের স্থলে ভুল এন্টিবায়োটিক দিচ্ছেন। ওষুধটি কত ঘণ্টা পরপর কতটুকু করে খেতে হবে তা বুঝিয়ে বলছেন না। ফলে রোগী এন্টিবায়োটিক সেবন করছেন ঠিকই; কিন্তু সময়, পরিমাণ ও মাত্রানুপাতে খাচ্ছেন না। ফলে রোগীর দেহে এন্টিবায়োটিক সঠিকভাবে কাজ করছে না। অনেক সময় ভুলের কারণে ওষুধ জীবাণু প্রতিরোধী হয়ে উঠছে।
২০০৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাস অবধি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধ প্রযুক্তি বিভাগ ও লন্ডনের নটিংহ্যাম ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় জেলা সদর হাসপাতালে এন্টিবায়োটিকের ব্যবস্থাপত্রে দেখা যায়, সেখানে এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার সঠিকভাবে হচ্ছে না। সেখানে দেখা যায়, বহুল ব্যবহূত এজিথ্রোমাইসিনে শতকরা ৪০ ভাগ রোগ প্রতিরোধী জীবাণু জন্ম নিচ্ছে। ফলে ওষুধ যথার্থভাবে কাজ করছে না। ই-কলাই ডায়রিয়ায় ব্যবহূত সিপ্রোপ্রক্সাসিলিনের যথেচ্ছ ব্যবহার শতকরা ৮০ ভাগ ক্ষেত্রে কাজ করছে না। এর বদলে আরও অধিক মাত্রার লিবোফ্লোক্সাসিলিন ব্যবহার করে রোগ সারাতে হচ্ছে। অথচ আগে এমোক্সাসিলিন ও এমপিসিলিনে এসব রোগ খুব সহজেই সেরে যেত। ২০০৭ সালে বিএসএমএমইউ’র মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইম্যুনোলজি বিভাগের এক গবেষণায় দেখা যায়, রক্ত পরীক্ষায় শতকরা প্রায় ১০ ভাগ ও মূত্র পরীক্ষায় ৮ ভাগ রোগীর দেহে ব্যাকটেরিয়া জীবাণুর অস্তিত্ব পাওয়া যায়।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলন জাতীয় কমিটির সভাপতি প্রফেসর ডা. রশীদ-ই-মাহবুব বলেন, ওভার দি কাউন্টার এন্টিবায়োটিক বিক্রি হওয়ায় স্বাস্থ্যঝুঁকির আশংকা বহুলাংশে বাড়ছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে চিকিৎসকদের ওরিয়েনটেশন, এন্টিবায়োটিক ব্যবহারে হাসপাতালে প্রটোকল চালু, ওটিগুলোতে সংক্রমণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি ও যে কোন এন্টিবায়োটিক ব্যবহারের আগে সেনসিটিভিটি পরীক্ষা করা এখন সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন।
বিষয়গুলো দেশের সচেতন মানুষকে ভাবিয়ে তুলেছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন বলে আমাদের ধারণা। তথ্যসূত্র: দৈনিক যুগান্তর।
This post was last modified on জানুয়ারী ৪, ২০২৩ 11:27 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ যে ছবিটি আপনারা দেখছেন সেটি দেশের জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রীর ছোটবেলার…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় গণহত্যা ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরায়েলের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ছবিতে লুকিয়ে রয়েছে একটি কাঁচি। তবে এই কাঁচির প্রতিকৃতিটি এই…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ‘ইনস্ট্যান্ট নুডলস’ স্বাদে মিষ্টি না হলেও এই ধরনের খাবারে শর্করার…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পেমেন্ট প্রযুক্তিতে বিশ্বের নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ভিসার বাংলাদেশ, নেপাল এবং ভুটানের…
View Comments
Regards for this howling post, I am glad I found this site on yahoo.
Uncovered your content pretty interesting in fact. I seriously enjoyed browsing it so you make quite some excellent factors. I’ll bookmark this web page with the long term! Relly good short article.
You are my intake, I possess few web logs and rarely run out from brand :).
I in basic terms had to thank you vastly a good deal once extra. I'm not positive what I would have ended to happen in the absence of the genuine solutions recognizable by you regarding my field. It totally was a unfeigned threatening accident in my view, excluding human being clever to view a new specialised taste you resolved it complete me to leap ended gratification. I will live happier for this assistance as fine as really wish you recognize what a powerful vacancy you are forever putting in instructing people now with the abet of a web locate. I know that you have by no means extend across any of us.
I rattling pleased to find this internet site on bing, just what I was looking for :D as well bookmarked.
I’ll right away clutch your rss as I can't in finding your email subscription hyperlink or e-newsletter service. Do you have any? Kindly let me know so that I may subscribe. Thanks.
I view something correctly elite in this site.
I really appreciate this post. I've been looking everywhere for this! Thank goodness I found it on Bing. You've made my day! Thx again!
If you're still on the fence: grab your preferred headset, cranium along to a Paramount Purchase and solicit to plug them into a Zune next an iPod and comprehend which one sounds healthier to you, and which interface makes you smile more. So therefore you'll get which is acceptably in support of you.
Really nice in order can live bring into being by trap blog .