দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গৃহপালিত বিশ্বস্ত পশুর মধ্যে কুকুর অন্যতম। কুকুরের প্রভুভক্তির নিদর্শন এর শেষ নেই। প্রশ্ন আসতে পারে, কি করে কুকুর মানুষের বশে এলো? কোন সময়টাতে কুকুর মানুষের বশ্যতা স্বীকার করে নিলো? নতুন এক গবেষণায় দেখো গেছে, কুকুরের পোষ মানানোর প্রক্রিয়া শুরু হয় ইউরোপে।
কুকুরের পূর্বপুরুষ ছিল নেকড়ে। প্রায় ১৫ হাজার বছর আগে এক প্রকার আদিম নেকড়ে, মানুষের শিকার করার ক্ষেত্রে সাথী হয়। মানুষ এই নেকড়েদের ব্যবহার করতে থাকে তাদের নিজের প্রয়োজনে। প্রাত্যহিক কাজ, খাবার বহন কিংবা শিকার করতে মানুষ নেকড়দের ব্যবহার করা শুরু করে। কালক্রমে মানুষের সাথে বসবাস করতে করতে পারিপার্শ্বিক পরিবেশ এর প্রভাবে নেকড়ে বন্যতা, হিংস্রতা কমতে থাকে। একটা পর্যায়ে পুরোপুরি মানুষের বশে চলে আসে। কারো কারো মতে কুকুরের এই বশে আসার সময় কাল ১০০,০০০ বছর আগে। অবশ্য কেও কেও কুকুরের গৃহপালিতকরণের সময়কাল আরো সাম্প্রতিক বলে মনে করেন।
নেকড়ে থেকে কুকুর এর আবির্ভাব এই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত ছিলেন। তবে ঠিক কোন সময়টাতে কুকুরের গৃহপালিতকরণ চলে সেটা বিজ্ঞানীদের বের করা মুশকিল ছিল। একই সাথে এর ভৌগলিক অবস্থানটাও বিতর্কিত ছিল সবসময়। এই বিতর্ক বহু দিন যাবত চলে আসছিল। নানা বিতর্ক কে পেছনে ফেলে ডিএনএ অনুসন্ধান করে প্রমাণ মিললো সঠিক তথ্য। বিজ্ঞানীরা শক্ত যুক্তি খুজে পেয়েছেন যা প্রমাণ করে, ইউরোপেই মানুষ সর্বপ্রথম কুকুর পোষ মানাতে শুরু করে।
২০১০ সালে নেচার জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে বলা হয়, গৃহপালিতকরণ তথা পোষ মানানোর প্রক্রিয়াটি শুরু হয় খুব সম্ভবত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে। পরের বছরই আরেকটা গবেষণা লব্ধ প্রবন্ধ থেকে জানা যায়, দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলো গৃহপালিতকরণের আদি ভূমি। কিন্তু কোনটিই সর্বজনগ্রহনযোগ্য ছিল না। বিজ্ঞানীরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছিলেন না।
সম্প্রতি ফিনল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব টুর্ক এর অধ্যাপক ওলাফ থ্যালম্যান এর নেতৃত্বে থাকা গবেষণা দল চমকপ্রদ তথ্য দিয়েছে। তারা প্রাচীনতম নেকড়ে এবং কুকুর সদৃশ প্রাণীর জীবাশ্মর ডিএনএ এবং বর্তমান কুকুর এবং নেকড়ের ডিএনএর অন্ত্যমীল তুলনা করে প্রাণীদের ভৌগলিক অবস্থান বের করতে সক্ষম হয়েছেন। থ্যালম্যান এর গবেষণা দলটি দাবি করেছে, ইউরোপই ছিল কুকুর গৃহপালিতকরণের আদিভূমি।
বিশেষজ্ঞ দলের প্রধান ওলাফ থালম্যান বলেন, আমাদের গবেষণার ফল এই নয় যে কেবল ইউরোপই একমাত্র জায়গা যেখানে কুকুর পোষ মানা শুরু করে। আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পেরেছি, ইউরোপই কুকুর গৃহপালিতকরণ প্রকিয়ায় প্রধানতম ভূমিকা পালন করেছে।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা গবেষণা কাজটিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তবে তারা এটাও বলেন, এর ফলে এই বিষয়ক বিতর্ক চূড়ান্তভাবে শেষ হয়ে যাবে না। কুকুরে ব্যুৎপত্তিগত আরো অনেক গবেষণা রয়েছে।
গবেষক দলটি ১৮ টি কুকুর এবং নেকড়ে সদৃশ নমুনা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে। নমুনা গুলো ছিল ৩৬,০০০ বছর পূর্বে আর্জেন্টিনা, বেলজিয়াম, রাশিয়া, জার্মানী, সুইজারল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিচরণকারী প্রাণীদের ফসিল বা জীবাশ্ম। বর্তমানে পাওয়া ৪৯ টি নেকড়ের থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এই প্রাণীগুলো পৃথিবীর নানা জায়গা থেকে সংগ্রহ করা হয় যেমন: নর্থ আমেরিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য। এর মধ্যে নানা জাতের ৭৭টি কুকুর এর ডিএনএ সংগ্রহ করা হয়। দলটি ডিএনএ গুলো বিশ্লেষণ করেন। বিশ্লেষণ করার পর দেখা যায়, বেশির ভাগ নমুনাই ইউরোপ থেকে পাওয়া নমুনার সাথে মিলে যায়।
গবেষণা প্রবন্ধটি বিস্তারিত সায়েন্সম্যাগে প্রকাশিত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: দি টেক জার্নাল, সায়েন্সম্যাগ, হাফিংটনপোস্ট, ফক্সনিউজ, উইকি
This post was last modified on নভেম্বর ১৮, ২০১৩ 10:13 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড এবং লেবাননজুড়ে ভয়াবহ হামলা চলমান রেখেছে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বপ্ন দেখে তা মনে রাখা সত্যিই দুষ্কর। আর তাই রাতের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…