ঢাকা টাইমস্ রিপোর্ট ॥ বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের বেধে দেওয়া সময়সীমা গতকাল ১০ জুন শেষ হয়েছে। আজ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জোটের প্রথম সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশ থেকে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপি চেয়েছিল পল্টন ময়দানে সমাবেশ করার জন্য কিন্তু সেখানে অনুমতি না পেয়ে অবশেষে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনেই হচ্ছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের প্রথম সমাবেশ। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দুই ডজনের বেশি সিনিয়র নেতার অনুপস্থিতিতে আজ ১১ জুন বেলা ২টায় এই কর্মসূচি শুরু হবে। সমাবেশের অনুমতি নিয়ে গত কয়েকদিন পুলিশ নানা টালবাহানা করলেও ১০ জুন সকালেই সমাবেশ করার অনুমতি দেয়। অনুমতি পাওয়ার পর পরই বিকালে শুরু হয় মঞ্চ ও মাইক লাগানোর কাজ। কর্মসূচি সফল করতে সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, সাদেক হোসেন খোকাসহ কারাবন্দি নেতাদের ছবি আর ব্যানার-ফেস্টুনে ঢেকে গেছে নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা। ১৮ দলীয় জোট ছাড়াও অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারাসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের আজকের সমাবেশে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে। সমাবেশে যোগ দিতে কয়েকদিন ধরেই জেলা নেতাকর্মীরা ঢাকা আসছেন। আজকের সমাবেশে ১৫ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে প্রত্যাশা বিএনপি হাইকমান্ডের।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে ১২ মার্চের সমাসমাবেশ থেকে ৩ মাসের আলটিমেটাম দিয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ১০ জুনের মধ্যে দাবি মেনে নেয়া না হলে ১১ জুনের সমাবেশ থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার ফিরিয়ে আনা, ইলিয়াস আলীর সন্ধান লাভ এবং গ্রেফতারকৃত নেতাদের মুক্তির দাবিসহ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে আজকের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। সমাবেশে আসতে নানা জায়গায় পথে পথে নেতাকর্মীদের বাধা দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। সমাবেশে যাতে লোক আসতে না পারে সে জন্য ঘূর্ণিঝড়ের আশংকার কথা বলে ঢাকাগামী বরিশালের লঞ্চ বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। এছাড়া দেশের বিভিন্ন জেলায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। ১০ জুন রাতে উত্তরাঞ্চল থেকে নৈশকোচ ঢাকায় না যেতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। এছাড়া দেশব্যাপী কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। আজকের সমাবেশ উপলক্ষে আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। যে কোন নাশকতা ঠেকাতে গোয়েন্দারা বিশেষ করে তৎপর থাকবে।
নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে হরতালসহ প্যাকেজ কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সমাবেশের অনুমতি না দেয়া এবং দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সিনিয়র নেতাদের জামিন আটকে দেয়ার কারণে শনিবারের স্থায়ী কমিটির সভায় কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়নি। রোববার সরকারের আচরণ দেখে কর্মসূচি ও দিনক্ষণ চূড়ান্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। সরকার কিছুটা নমনীয় হওয়ায় কর্মসূচি দেয়ার ঘোষণায় বিএনপি ইতিবাচক রাজনীতির পথে হাঁটবে বলেই দলটির নীতিনির্ধারকরা জানান। সেক্ষেত্রে সংলাপের দরজা খোলা রেখেই কর্মসূচি ঘোষণা করতে পারেন খালেদা জিয়া।
আলটিমেটাম দেয়া হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে দাবি আদায়ে বিএনপিকে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করে বিরোধী দলকে ব্যস্ত রাখে সরকার। সর্বশেষ ইলিয়াস আলীর গুম এবং সিনিয়র নেতাদের আটকের বিষয়টিই সামনে চলে আসে। এই ইস্যুতেই বেশি ব্যস্ত থাকতে হয় তাদের। নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের দাবির পাশাপাশি সিনিয়র নেতাদের মুক্তি এবং ইলিয়াস আলী ইস্যুটি সামনে রেখেই আন্দোলনের ছক কষতে হচ্ছে খালেদা জিয়াকে।
সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে দলের চেয়ারপারসন তরিকুল ইসলামসহ সিনিয়র দু’একজন নেতাকে নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানে কর্মসূচির খসড়া প্রস্তুত করা হয়। বাজেট পাসের পরদিন তা প্রত্যাখ্যান করে হরতাল দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও তা থেকে সরে আসে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ সিনিয়র নেতাদের নামে নতুন করে ওয়ারেন্ট জারি করায় এই ইস্যুতে একদিন দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া রমজানের আগে ঢাকায় গণমিছিলসহ ঢাকার বাইরে খালেদা জিয়ার বেশ কয়েকটি জনসভা করার সিদ্ধান্ত হয়। এর বাইরে পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত ইস্যুভিত্তিক বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি পালন করা হবে। রমজানের পর সড়ক ও রেলপথ অবরোধের ঘোষণা আসতে পারে। এছাড়া দাবি আদায়ে সারাদেশে ১৮ দলের উদ্যোগে সংগ্রাম পরিষদ গঠনের ঘোষণা আসতে পারে।
অনুমতি পাওয়ার পর ১২ মার্চের সমাবেশের মঞ্চের মাপে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিক উল্টো দিকে ভিআইপি টাওয়ারের সামনে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। সমাবেশে নয়াপল্টন ও আশপাশের সড়কগুলোতে ৩০০ মাইক ও ৪টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় পর্দা বসানোর কথা রয়েছে। সারারাত পূর্বে শাপলা চত্বর, পশ্চিমে কাকরাইল মসজিদ, উত্তরে মালিবাগ ও দক্ষিণে তোপখানা সড়ক পর্যন্ত মাইক লাগানো হয়। এছাড়া জাসাসের শিল্পীরা গানের মাধ্যমে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখবেন। সমাবেশটি www.bnplive.com ওয়েবসাইটে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
আজকের সমাবেশে অংশ নিতে কয়েকদিন ধরেই নেতাকর্মীরা ঢাকায় আসতে শুরু করেন। ১২ মার্চের মতো হোটেলে ওঠায় নিষেধাজ্ঞা না থাকায় অনেকেই হোটেলে উঠেছেন। কেউ কেউ নিকটাত্মীয় ও দলীয় নেতাকর্মী এবং বন্ধুবান্ধবের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। শিবচর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নাজমুল হুদা (মিঠু) চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, শনিবারই স্থানীয় নেতাকর্মীদের একটি অংশ নিয়ে তিনি ঢাকায় চলে এসেছেন। গতকালও অনেকে এসেছেন। সমাবেশের দিন আজও হাজার হাজার নেতাকর্মী শিবচর থেকে এসে সমাবেশে যোগ দেবেন। তিনি বলেন, ১২ মার্চের মতো এবারের সমাবেশে আসতে ক্ষমতাসীনরা তেমন বাধার সৃষ্টি করেনি। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও ছিল অনেকটা নমনীয়।
এখন দেশবাসী তাকিয়ে আছে বিরোধী দল ও সরকারি দলের মনোভাবে প্রতি। কারণ জনগণ কোন বিশৃংখলা চাই না। তারা কোন হরতালও চাই না। জনগণ চাই তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুটি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হোক। এখন দেখা যাক আজকের সমাবেশের পর কি ঘটে।