দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিতর্কিত ছবি ‘গুন্ডে’তে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করায় ছবিটির পরিচালক ক্ষমা চাইলেও বাংলাদেশে এখনও বইছে প্রতিবাদের ঝড়। দাবি করা হয়েছে, শুধু ক্ষমা নয়, ‘গুন্ডে’ প্রত্যাহার করতে হবে।
বলিউডের বিতর্কিত ছবি গুন্ডেতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করায় ছবিটির পরিচালক ইতিমধ্যেই ক্ষমা চেয়েছেন। কিন্তু ক্ষমা চাইলেও বাংলাদেশে বইছে প্রতিবাদের ঝড়। দাবি উঠেছে, ‘গুন্ডে’ ছবিটি প্রত্যাহারের। অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে যশরাজ ফিল্মস ক্ষমা চেয়েছে। তরুণ সমাজের প্রতিবাদের মুখে পড়া এ ছবিটি তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে ক্ষমা চেয়েছে। তবে ক্ষমা চাওয়ার পরও বাংলাদেশে ঝড় বইছে প্রতিবাদের। অনলাইনে প্রতিবাদের সঙ্গে দাবি তোলা হচ্ছে গুন্ডে ছবিটি প্রত্যাহারের।
এদিকে এই ‘গুন্ডে’ ছবিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধারাও। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেছেন, যে পরিচালক এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন তার ইতিহাসের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তিনি বলেন, এই চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করা হয়েছে। এই ছবি মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে ভারত দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী একাত্তরে আমাদের মিত্র বাহিনী হিসেবে কাজ করেছে- এর বেশি কিছু নয়। চলচ্চিত্রটি সংশোধন করার দাবি জানান তিনি। তিনি বলেন, তরুণ প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভালভাবে জানতে হবে। যাতে করে এসব চলচ্চিত্র তাদের বিভ্রান্ত করতে না পারে। বাংলাদেশ সরকার এ চলচ্চিত্রের বিষয়ে তাদের মত করে পদক্ষেপ নিতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান রয়েছে এটা সত্য। এ বিষয়ে যথেষ্ট ডকুমেন্ট রয়েছে। ছবি বানিয়ে কখনও বাংলাদেশের ইতিহাসকে বদলানো যাবে না। ইতিহাস তার আপন গতিতেই চলবে। এটা কেও পরিবর্তন করতে পারবে না বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
‘গুন্ডে’ ছবির ট্রেলার
এদিকে ছবিটি নিয়ে অব্যাহত প্রতিবাদের মুখে অবশ্য যশরাজ ফিল্মস ক্ষমা চেয়েছে। তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পাতায় এক বার্তায় বাংলাদেশী নাগরিকদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ‘প্রিয় বন্ধুরা, আমাদের ছবিতে যেভাবে গল্প তুলে ধরা হয়েছে তাতে বাংলাদেশের অনেক ভাই তাদের আপত্তির কথা জানিয়েছেন। ছবিটির কাহিনী ও গল্প পুরোপুরি কাল্পনিক। কোন জাতি, সমাজের বিশেষ কোন গোত্র কিংবা কোন ব্যক্তির প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শনের অভিপ্রায় আমাদের ছিল না। তারপরও বাংলাদেশী ভাইরা যদি আমাদের কাজ দেখে আহত হন কিংবা অশ্রদ্ধা প্রকাশ করা হয়েছে বলে মনে করেন তাহলে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করছি আমরা। এতে বলা হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদদের আত্মত্যাগের বিনিময়েই একটি স্বাধীন দেশের জন্ম হয়। এটা কখনই ভুলার নয়। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতা সংগ্রামের কথা ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, যা-ই হোক, ‘গুন্ডে’ ছবিতে কোনভাবেই বাংলাদেশীদের মহান আত্মত্যাগের বিষয়টিকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করা হয়নি। আর ইতিহাস বিকৃতির তো প্রশ্নই ওঠে না। এর কাহিনীতে কেবল দেখানো হয়েছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক পরিবার ও মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য হতে হয়েছিল। ছবিতে এমনই একটি পরিবারের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে ফেসবুকে ক্ষমা চাইলেও ‘গুন্ডে’ নিয়ে বাংলাদেশে প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে অনলাইনে তরুণদের প্রতিবাদের ঝড় একেবারেই থামছে না। দাবি উঠেছে শুধু ক্ষমা নয় ‘গুন্ডে’ প্রত্যাহারের।
উল্লেখ্য, ‘গুন্ডে’ ছবির শুরুর দিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন চিত্র দেখানোর পাশাপাশি হিন্দি ভাষায় বলা হয়, ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১ হিন্দুস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে তৃতীয় যুদ্ধ শেষ হয়। ৯০ হাজার পাকিস্তানি সেনা হিন্দুস্তানের সেনাদের সামনে আত্মসমর্পণ করেন। জন্ম হয় এক নতুন দেশ- বাংলাদেশ। হিন্দি ভাষার ওই ছবিতে আরও বলা হয়, যখন হিন্দুস্তানের সেনারা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছিলেন, তখন কাঁটাতারের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিল ১১/১২ বছরের দুই অনাথ বন্ধু বিক্রম ও বালা। তারা বুঝতে পারছিল না, তাদের সঙ্গে যা হলো তা কি ঠিক ছিল- নাকি ভুল। নতুন দেশ কি তাদের নতুন জীবন দেবে ছবিটির শুরুর দৃশ্যে সে বিষয়ে দেখানো হয়, ভারতীয় যোদ্ধাদের সামনে আত্মসমর্পণ করছেন পাকিস্তানি সেনারা- জন্ম হচ্ছে বাংলাদেশের। পেছনের দৃশ্যে দেখা যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর পোস্টার। উদ্বাস্তু শিবিরের সামনে দিয়ে রুটি ছুড়তে ছুড়তে চলে যাচ্ছে ত্রাণের গাড়ি, আর কাদামাটি থেকে তা কুড়িয়ে খাচ্ছে অসহায় মানুষ।
‘গুন্ডে’ ছবিতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ফুটেজ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেখানো হলেও কোথাও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কথা একবারও বলা হয়নি। আলী আব্বাস জাফর পরিচালিত যশরাজ ফিল্মসের ব্যানারে নির্মিত ওই চলচ্চিত্রটি ১৪ ফেব্রুয়ারি হিন্দির পাশাপাশি কলকাতায় বাংলা ভাষায় ডাবিং করে মুক্তি পায়। ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই সমালোচনা শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে এমনভাবে খাটো করার অভিযোগে।