দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। পরিবর্তনকে উৎসাহিত করার প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ সারাবিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস।
এবছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পরিবর্তনের অঙ্গীকার’ সারাবিশ্বের মানুষকে নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষভাবে উৎসাহিত করবে। যুগে যুগে নারীর ক্ষমতায়নকে বাঁকা চোখে দেখা হলেও এখন আর সে সুযোগ নেই। বিশ্বজুড়ে ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক কর্মসূচি, রাজনীতি, সংগঠন সর্বত্রই নারীর অবাধ পদচারণা। নানা সমস্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে থাকলেও বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নারীরাও পিছিয়ে নেই। পর্যায়ক্রমে আমরা দুজন নারী প্রধানমন্ত্রী পেয়েছি। এদের একজন আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া আমাদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় সংসদের স্পিকারও নারী। নিজেদের শ্রম, মেধা এবং দক্ষতা দিয়ে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের নারীরাও এগিয়ে চলেছেন সকল ক্ষেত্রে।
নারীদের নিয়ে এখন আর বিশ্বের কাওকেই মাথা ঘামাতে হয় না। কারণ নারীরা এখন বিশ্বের সব দেশেই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছেন। যেসব দেশে নারীদের ঘরের মধ্যে রাখার ব্যাপারে অর্থাৎ পর্দা প্রথার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল সেসব দেশের নারীরাও এখন অনেক এগিয়ে আছেন। যেমন সৌদি আরব। সেখানে নারীদের বাইরে বের হওয়া এবং কাজ করার ওপর রয়েছে বিধি নিষেধ। সামপ্রতিক সময়ে সেখানেও নারীরা প্রতিবাদী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তারা প্রকাশ্যে পর্দা প্রথা বজায় রেখেই সমাজে পুরুষদের মতই কাজ করতে চান।
এমনিভাবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটও এক সময় ছিল একেবারে ভিন্ন। কিন্তু এখন আর তেমনটি নেই। যদিও সামপ্রতিক সময়ে হেফাজতে ইসলামীর কিছু বক্তব্য এদেশের নারী সমাজকে আবার চিন্তিত করেছিল। কিন্তু তারপরও আমাদের দেশের নারীরা থেমে নেই। তারা সকল ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি থেকে অবদান রাখছেন।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটেছে সামপ্রতিক সময়ে। প্রথমবারের মতো স্পিকার নির্বাচিত হয়েছেন একজন নারী। গত সপ্তাহে আবার একজন নারী এদেশে একটি বিশ্ব বিদ্যালয়ে (জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে) ভিসি হিসেবে প্রথমবারের মতো নিয়োজিত হয়েছে।
এভাবে নারীরা দেশের সর্বোচ্চ পদসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিস-আদালতে কর্মরত রয়েছেন। তারা জাতির জন্য রাখছেন বিশেষ ভূমিকা।
বিশ্বজুড়েই নারীদের কর্মকাণ্ড প্রসারিত:
শেখ হাসিনা
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বাংলাদেশের বৃহত্তম দল আওয়ামীলীগের সভানেত্রী।
খালেদা জিয়া
বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিন বার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম দল বিএনপি’র চেয়ারপারসন।
সোনিয়া গান্ধী
১৯৪৬ সালে ইটালীতে জন্ম নেয়া এ নারী বিশ্বের ৯ নম্বর ক্ষমতাধর নারী। সোনিয়া গান্ধী ভারতের রাজনীতিক ও প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর স্ত্রী। ১৯৯৮ সাল থেকে ভারতের কংগ্রেস পার্টির সভানেত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ৬৭ বছর বয়সী সোনিয়া গান্ধী।
মিশেল ওবামা
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪তম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা (৫০) প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ফার্স্ট লেডি। আইনজীবী ও লেখিকা হিসেবেও তার পরিচিতি রয়েছে।
হিলারি ক্লিনটন
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্য এবং নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের প্রতিনিধি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার সিনেটরের দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তার আরেকটি বড় পরিচয় হলো তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী।
এঙ্গেলা মার্কেল
এঙ্গেলা ডোরোটেয়া মার্কেল (৫৯) হচ্ছেন জার্মানির বর্তমান ও প্রথম নারী চ্যান্সেলর। ২০০৫ সাল থেকে তিনি চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করছেন। মার্কেল দেশটির ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নেরও বর্তমান চেয়ারম্যান এবং ২০০২ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত ক্রিশ্চিয়ান সোশ্যাল ইউনিয়নের সংসদীয় জোটের চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০০৭ সালে মার্কেল মার্গারেট থ্যাচারের পর জি-৮ এর দ্বিতীয় নারী চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন।
দিলমা রুসেফ
ব্রাজিলের বিশিষ্ট নারী অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি পরিচিত। বর্তমানে রুসেফ ব্রাজিলের ৩৬তম রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
মেলিন্ডা গেটস
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী মানবপ্রেমী ও নারী ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত মেলিন্ডা গেটস। তবে তার অন্যতম পরিচয় হচ্ছে বিশ্বের সেরা ধনী ও মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বিল গেটসের স্ত্রী।
শেরিল স্যান্ডবার্গ
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবসায়ী স্যান্ডবার্গ ১৯৬৯ সালের ২৮ আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তিনি। ২০১২ সালের জুনে শেরিল স্যান্ডবাগ ফেসবুক কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের একজন প্রভাবশালী সদস্য নির্বাচিত হন। তার আগে তিনি সার্চ ইঞ্জিন গুগলের ‘গ্লোবাল অনলাইন সেলস’ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ক্রিশ্চিন লাগার্দি
ফ্রান্সের নারী ক্রিশ্চিন লাগার্দি ১৯৫৬ সালের ১ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ক্রিশ্চিন লাগার্দি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ -এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। ২০১১ সালের ৫ জুলাই থেকে ক্রিশ্চিন লাগার্দি এ দায়িত্ব পালন করছেন। ক্রিশ্চিন লাগার্দি একজন আইনবিদও। ক্রিশ্চিন লাগার্দি এক সময় ফরাসী সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। অর্থমন্ত্রী হিসেবে ক্রিশ্চিন লাগার্দি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।
জেনেট নেপোলিটানো
যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ জেনেট (৫৬) ১৯৫৭ সালে ২৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। জেনেট নেপোলিটানো প্রথম নারী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’র সেক্রেটারি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
ইন্দা নুইয়ি
ভারতীয় বংশোদ্ভূত ৫৮ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যবসায়ী নারী ১৯৫৫ সালে ভারতের মাদ্রাজে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে ইন্দা নুইয়ি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান পেপসিকোর চেয়ারপার্সন এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। বর্তমানে তিনি নিউইয়র্কে বসবাস করলেও ইন্দা নুইয়ি কলেজ জীবন কেটেছে কোলকাতা শহরে।