দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ৩৫ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উপলক্ষে আয়োজিত বিজ্ঞান মেলায় ঢাকা জেলায় বিশেষ বিভাগে অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান সংগঠনের ৩টি প্রকল্প ১ম, ২য় এবং ৩য় স্থান অধিকার করেছে। অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান সংগঠন মোট ১০টি প্রকল্প নিয়ে বিজ্ঞান মেলায় অংশ নেয়। উক্ত প্রকল্পগুলো নিয়ে এই প্রতিবেদন।
প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার ছাপা বইগুলোকে কিভাবে স্বল্পমূল্যে ডিজিটাইলাইজড করে শিক্ষার্থীদের দেয়া যায় সেই আইডিয়া নিয়ে এই প্রকল্পটি। প্রকল্পটি এককালীন বাস্তবায়ন খরচ কিছুটা বেশি হলেও ছাপা বই এর দীর্ঘমেয়াদী খরচ কমিয়ে দিবে। বাজারে পাওয়া ডিজিটাল ফটো গ্যালারি ব্যবহার করে এই ই-বুকটি তৈরি করা হয়েছে। ই-বুকটিতে সব শ্রেণীর বই লোড করা থাকবে। যার ফলে, প্রতি বছর সরকারকে সময় মতন বই বিতরণ নিয়ে জটিলতায় পড়তে হবে না। প্রকল্পটি বিশেষ বিভাগে ১ম স্থান লাভ করে। প্রকল্পটি বানিয়েছেন আল ইমরান চৌধুরী অপূর্ব। একাদশ শ্রেণীতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ুয়া অপূর্ব অনুসন্ধিৎসু চক্র বিজ্ঞান সংগঠনের একজন সদস্য। জেলা পর্যায়ে প্রথমস্থান অধিকার করায় সামনের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান মেলায় বিশেষ বিভাগে ঢাকার প্রতিনিধিত্ব করবে এই প্রকল্পটি।
লোডশেডিং সমস্যার সমাধান করতে পারবে জৈব বিদ্যুৎ। যে কোন সবজিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ জৈব বিদ্যুৎ থাকে। লেবু তে অপেক্ষাকৃত বেশি জৈব বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এরপর যথাক্রমে পাওয়া যায় টমেটো এবং আলুতে। জৈব বিদ্যুৎ কার্যপোযোগী করার প্রক্রিয়াও খুব সহজ। একটি তামার পাত এবং একটি দস্তার পাত সবজিতে ঢুকিয়ে তার দিয়ে সংযোগ দিলে দেখা যায় পরিবাহী তারে বিদ্যুৎ পরিবাহিত হচ্ছে। এই বিদ্যুৎ দিয়ে LED জ্বালানো সম্ভব। আমাদের দেশে প্রচুর আলু উৎপাদিত হয়। তা থেকে স্বল্প মূলে জৈব বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানান প্রকল্প নির্মাতা মোঃ শাহরিয়ার আহমেদ। অনুসন্ধিৎসু চক্রের সদস্য শাহরিয়ার কমার্স বিভাগে একাদশ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন। এই প্রকল্পটি বিশেষ বিভাগে ২য় স্থান লাভ করে।
স্বল্প খরচে মাইক্রোস্কোপ বানিয়েছেন আহমদ বিন আলমগীর। নিজের ব্যবহার্য যে কোন মোবাইল ক্যামেরাকে মাইক্রোস্কোপ এর ডিসপ্লে হিসেবে ব্যবহার করে ছবি তোলা, ভিডিও করা যায় তার এই মাইক্রোস্কোপ ব্যবহার করে। কম্পিউটারের সিডি/ডিভিডি রম এর ভেতর থাকা ক্ষুদ্র লেন্স কে প্রাথমিক লেন্স এবং মোবাইল ক্যামেরা কে ডিসপ্লে ডিভাইস হিসাবে ব্যবহার করে এই প্রকল্পটি বানানো হয়েছে। মাইক্রোস্কোপটি দিয়ে পেঁয়াজের কোষ, পিঁপড়া, পাতার শিরা-উপশিরা সহ অনেক ক্ষুদ্র বস্তু বড় করে দেখা যায়। সবচেয়ে মজার অংশ হচ্ছে এটি দিয়ে মাইক্রো-ফটোগ্রাফি করা যায়, ক্ষুদ্র বস্তুগুলোর ছবি তোলা এবং ভিডিও করা যায়। এই প্রকল্পটি বিশেষ বিভাগে ৩য় স্থান লাভ করে। প্রকল্প নির্মাতা আহমদ অনুসন্ধিৎসু চক্রের সদস্য এবং বিজ্ঞান বিভাগে ১০ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন।
ভাঁজা পোঁড়া খাবার থেকে রক্ষা করবে এই প্রকল্পটি। প্রকল্পটির বিশেষত্ব হল, এর মাধ্যমে খাবারে থাকা তেল অপসারণ করা যাবে। সাধারণ মানের মোটর ব্যবহার করে সুরাইয়া তাসনিম প্রকল্পটি বানিয়েছেন। তিনি অনুসন্ধিৎসু চক্রের সদস্য এবং হোম ইকোনোমিকস্ নিয়ে ২য় বর্ষে পড়াশুনা করছেন।
মেলায় সবচেয়ে কনিষ্ঠ প্রকল্প নির্মাতা সাবাহ্ হকের প্রকল্প ছিল এটি। পেন্সিল এবং রাবার ব্যবহার করে কিভাবে খেলনা গাড়ি বানানো যায় তা তিনি দেখান। তার খেলনা গাড়ি পেছনের দিকে ঘুরিয়ে দিলে সামনের দিকে চলতে পারে। সাবাহ্ অনুসন্ধিৎসু চক্রের সদস্য এবং স্কুলে পড়াশুনা করছেন।
সাত কালার চা যে কেও বানাতে পারে এবং এটি কিভাবে কাজ করে সেটি নিয়ে এই প্রকল্প। বস্তুর ঘনত্ব ধর্মকে ব্যবহার করে, এক তরল আরেক তরল এর উপর ভাসমান থাকতে পারে। এভাবে কেবল সাত রঙ এর চা নয়, চাইলে যত বেশি তত রঙ এর চা বানানো সম্ভব। প্রকল্প নির্মাতা জেসমিন আক্তার চম্পা অনুসন্ধিৎসু চক্রের সদস্য এবং ১০ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন।
মজার একটি প্রকল্প ছিল আলোকিত পানি। হাইলাইটস মার্কার পেন এর রঙ ব্যবহার করে প্রকল্প নির্মাতা রঙিন পানি তৈরি করেছেন। যার মধ্যে দিয়ে আলো প্রবেশ করলে নানা রঙ এর আলো তৈরি হয়। প্রকল্পটি বিজ্ঞান নিয়ে ছোটদের আগ্রহ বৃদ্ধি করবে বলে জানান নির্মাতা মোঃ তানভীর হাফিজ সামিও। সামিও অনুসন্ধিৎসু চক্রের সদস্য এবং ৮ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন।
আবহাওয়া সম্পর্কে জানতে হলে বেগ সম্পর্কে জানা থাকতে হবে সবার আগে। সেই বেগ মাপার যন্ত্র বানিয়েছেন সৈয়দ আহমেদ প্রভাত। স্বল্প খরচে বায়ুর বেগ মাপার যন্ত্র বানিয়ে তিনি তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। হাজার হাজার টাকা খরচ না করে তার প্রকল্পটি মাত্র কয়েক শ টাকা ব্যবহার করে বায়ুর বেগ মাপা সম্ভব হবে। প্রভাত এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। তিনি অনুসন্ধিৎসু চক্রের একজন সদস্য।
বাজারে চার্জেবল ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। এই ধরণের ব্যাটারি নষ্ট হলে পুণরায় ব্যবহার করাও যায় না। জাহিদ হাসান মাহিম এর প্রকল্প ক্যাপসিটর ব্যাটারি এর সমাধান দিবে। মাহিম কমার্স নিয়ে একাদশ শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন। তিনি অনুসন্ধিৎসু চক্রের একজন সদস্য।
বায়ুর বেগ মাপার পাশাপাশি বায়ু কোন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে এটি জানা খুব জরুরী। এই প্রকল্পটির মাধ্যমে ঘরে বসেই জানা যাবে, বায়ু কোন দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রকল্পটি বানিয়েছেন এস.এম আলফাজ আলী নয়ন ও মেহেদী হাসান। তারা দুজনই ৮ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করছেন এবং অনুসন্ধিৎসু চক্রের সদস্য।
প্রতি বছরই জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ উদযাপিত হয়ে থাকে। জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলা হবার পর, প্রথম স্থান পাওয়া প্রকল্পগুলো নিয়ে কেন্দ্রীয় ভাবে জাতীয় বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৭ ও ২৮ মার্চ ঢাকা জেলার জেলা পর্যায়ে বিজ্ঞান মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। ঢাকার অনেক স্কুল, কলেজ, বিজ্ঞান সংগঠন ছাড়াও ব্যক্তিগত ভাবে অনেকেই অংশগ্রহণ করে। সৃজনশীল উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো ছিল দর্শনার্থীদের জন্য চমক লাগানো। ২৯ মার্চ পুরস্কার বিতরণীতে দেখা যায় ক্ষুদে বিজ্ঞানীদের জয় জয়কার। বিভিন্ন স্কুলে কলেজ এর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিভাগে পুরস্কার লুফে নেয়।
জাতীয় বিজ্ঞান মেলায় অংশ নিতে চাইলে অপেক্ষা করতে হবে আগামী বছরের জন্য। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশেষ বিভাগে অংশ নেয়া যাবে। চোখ রাখতে হবে পেপার পত্রিকায়। ঢাকা জেলায় মূল কেন্দ্র নটরডেম কলেজ। সেখানে খোঁজ নিলেও জানা যাবে। ঢাকার বাইরে যারা থাকেন তাদের জন্য জন্য জেলা পর্যায়ের স্কুলগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: আশিক আফরিক
ধন্যবাদান্তে: অনুসন্ধিৎসু চক্র
This post was last modified on এপ্রিল ৭, ২০১৪ 4:50 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্বপ্ন দেখে তা মনে রাখা সত্যিই দুষ্কর। আর তাই রাতের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ৩০ কার্তিক ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…