দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোমরের সন্ধিস্থলটি মানব দেহের সবচেয়ে যোগসন্ধি। এর উপরে শরীরের প্রায় বেশিরভাগ ওজনই নির্ভর করে এবং শরীরের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরের চলাচলের জন্য এটি গুরুতর একটি অংশ। কিন্তু আর্থ্রারাইটিস এবং ব্রুসাইটিসের মত রোগের কারণে আপনার স্বাভাবিক চলন বাঁধাগ্রস্ত হতে পারে।
জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনুন
বয়সের কারণে দীর্ঘস্থায়ী কোমরের ব্যথা একটি স্বাভাবিক রোগ বলে পরিচিত। কিন্তু আর্থ্রাইটিস এবং ব্রুসাইটিস রোগের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে আপনার প্রয়োজন নিয়মিত ব্যায়াম করা। আজ আমরা পাঠকের জন্য তুলে ধরবো কিভাবে কোমরের ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
১. এটা জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে কেন আপনার এই ব্যথাটি শুরু হয়েছে। মেডিটেশন কিংবা ব্যায়ামের পূর্বে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন। অনেক কারণেই কোমরের ব্যথা হতে পারে, তারমধ্যে কোমরের ব্যথার জন্য যে রোগগুলো দায়ী তা হলো আর্থ্রাইটিস এবং ব্রুসাইটিস। কোমরের ব্যথা অবহেলা না করে সবসময় আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করুন কোমরের ব্যথার জন্য কি করা ঊচিত।
২. এনএসএআইডিএস হলো ননস্টরয়েড অ্যান্টি ইনফ্লেমেন্টারী ড্রাগ কোমরের ব্যথার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ। অ্যাসপিরিন এবং নেপ্রক্সেন নামক ওষুধ কোমরের প্রদাহ ঊপশমে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। তবে অবশ্যই এটা মনে রাখবেন অনেক ওষুধ খাওয়ার পরও যদি আপনার প্রদাহ না কমে অতিসত্বর ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
৩. প্রতিদিন ১৫ মিনিট করে আপনার কোমরের সন্ধিস্থলে কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে বরফ চেপে ধরুন। এটি আপনার সন্ধিস্থলের প্রদাহকে প্রশমিত করবে। তবে আর্থ্রাইটিসের ব্যথার ক্ষেত্রে তাপ খুব ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে আপনি গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এছাড়াও বাজারে রাবারের তৈরি কিছু ব্যাগ পাওয়া যায়। এর ভেতর গরম পানি ঢেলে আপনার কোমরের প্রদাহের স্থানে চেপে ধরতে পারেন।
৪. যদি আপনার কোমর দুর্ঘটনার কারণে আঘাতপ্রাপ্ত হয় এবং তার ফলে আপনার কোমরের ব্যথা সৃষ্টি হয় তবে আপনার বিশ্রামের সময় বাড়িয়ে দিন। কোমরের ব্যথা আরো বাড়াতে পারে এমন কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
৫. নিজের শরীরের ওজনের প্রতি লক্ষ্য করুন। আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেলে আপনার কোমরের উপর চাপও বৃদ্ধি পাবে। ফলে আপনার কোমরে যদি আগে থেকে ব্যথা থেকে থাকে তবে তা আরো বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত ওজন থেকে থাকলে তা কমানোর চেষ্টা করুন।
৬. আমাদের শরীরের বেশিরভাগ ওজনই থাকে পায়ের উপর, ফলে কোমরের সন্ধিস্থলের সাথে পায়ের সংযোগ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই আপনার শরীরের সাথে উপযুক্ত জুতো পড়ুন। এমন ধরণের জুতো ব্যবহার করা ঠিক নয় যা কোমরের উপর চাপ ফেলে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হাইহিল ব্যবহার করা নারীরা সাধারণ জুতো ব্যবহার করা নারীদের চেয়ে বেশি কোমরের সন্ধিস্থলের প্রদাহে আক্রান্ত হন।
ব্যায়ামের মাধ্যমে আপনার দিন শুরু করুন
আপনার শরীরের রক্তপ্রবাহ যদি স্বাভাবিক থাকে তবে আপনি দিনটি ব্যথাহীনভাবে কাটাতে পারেন। আর্থ্রাইটিস রোগীদের জন্য এটি আরো বেশি কার্যকর। দিনটি শুরু করতে পারেন কোমরের কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে। এটি আপনার সারাদিনকে ভালো রাখবে।
১. ফ্লোরে পিঠ দিয়ে সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। পা গুলোকে বাঁকিয়ে রাখুন। এতে আপনার শরীরের পেছনের অংশটি শিরদাঁড়া সোজা থাকবে। তারপর পায়ের পাতা এবং হাতের উপর ভর দিয়ে শরীরের সামনের অংশটি তুলে ধরুন। তারপর ধীরে ধীরে তা আবার নিচে নামিয়ে আনুন। এভাবে ১০ মিনিট করুন।
২. সোজা হয়ে দাঁড়ান। ভূমির সাথে আনুভূমিকভাবে আপনার ডান পা’কে আরামদায়কভাবে যতটা দূর প্রসারিত করুন। তারপর ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ফিরিয়ে আনুন। এবার বাম পা’কেও অনুরুপভাবে প্রসারিত করুন। তারপর আবার ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনুন। এভাবে কয়েকবার করুন।
৩. আবার সোজা হয়ে শুয়ে পড়ুন। শরীরকে না বাঁকিয়ে ডান পা কে সোজা উপরে তুলুন। কিছুক্ষণ ধরে রাখুন। তারপর ধীরে ধীরে নামিয়ে আনুন। এবার বাম পা’কে একইভাবে তুলুন এবং নামিয়ে আনুন।
সাতার একটি ভালো কার্যকর ব্যায়াম। আপনার যদি সাতারের সুবিধা থাকে তবে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময় সাতারের পেছনে ব্যয় করুন। প্রতিদিনের শারীরিক ব্যায়াম ছাড়াও মাসে অন্তত একবার আপনার ডাক্তার কিংবা থেরাপিস্টের সাথে আলোচনা করুন।
তথ্যসূত্রঃ উইকিহাউ