দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শিশু একটি জাতির ভবিষ্যৎ একথা সকলেরই জানা। জাতির ভবিষ্যতের বাইরেও তারা প্রত্যেকে একজন স্বকীয় মানুষ এবং একটি পরিবারের সদস্য। শিশুরা তাদের সহজাত প্রাথমিক শিক্ষাগুলো প্রথমত পেয়ে থাকে পরিবার থেকে। তারপর আসে তাদের বিদ্যালয় থেকে অর্থাৎ শিশুদের সামাজিকীকরণ শুরু হয় পরিবার থেকে।
একটি শিশুর মনস্তত্ত্ব গঠনে প্রথমে ভূমিকা রাখে পরিবার। তাই শিশুদের শেখানোর ক্ষেত্রে পরিবারের আলাদা দৃষ্টি রাখা উচিত। অর্থাৎ একটি পরিবারের উচিত তার পরিবারের শিশুদের এমন কিছু শেখানো যেন তা তার আত্মবিশ্বাসকে আরো জোরালো করে। এমনভাবে গড়ে তোলা উচিত যেন সে তার সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকে। আত্মবিশ্বাস এবং দেশের প্রতি ভালোবাসা একটি শিশুর মনকে, মানসিকতাকে করে অনেক বেশি সুন্দর। চলুন জেনে নেওয়া যাক আপনার পরিবারের ছোট্ট সদস্যটিকে কি শেখাবেন যা তাকে আরো বেশি আত্মবিশ্বাসী করবে এবং দেশের প্রতি আরো ভালোবাসা সৃষ্টি করবে।
১. একটি শিশুর জন্য বিদ্যালয়ের প্রথম বছরটি বেশ উত্তেজনাকর। কেননা সামাজিকীকরণের প্রথম স্তরটি সে প্রবেশ করে বিদ্যালয়ের মাধ্যমে। এই সময় আপনি যদি তার জুতোর ফিতা বেঁধে দেওয়া শিখিয়ে দেন তবে তা আপনার শিশুর মনে যে আত্মবিশ্বাসটি তৈরি করবে তা আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। কেননা সে যখন বিদ্যালয়ে খেলতে গিয়ে তার জুতোর ফিতা খুলে যাবে তখন সে আপনাকে না পেলে কি বিব্রতকর পরিস্থিতিতেই না পড়বে চিন্তা করে দেখুন। কিন্তু সে যখন নিজেই জুতোর ফিতা লাগাতে পারবে তখন তার ভেতরে একটি সুন্দর আত্মবিশ্বাস তৈরি হবে এবং এটি তাকে জীবনের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্য করবে।
২. আগেই বলেছি যে বিদ্যালয়ের প্রথম বছরটি শিশুদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিদ্যালয়ে গিয়ে শিশুটি তার সহপাঠীদের সাথে মিশছে কিনা তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করছে কিনা লক্ষ্য রাখুন। তাকে সহপাঠীদের সাথে মিশতে উৎসাহিত করুন। কেননা এই বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশের জন্যই সে বিদ্যালয়ে যেতে আকর্ষণ বোধ করবে এবং শিখতে পারবে। তাছাড়া বিদ্যালয়ের নিয়মকানুন সম্পর্কে তাকে বুঝতে দিন, বিদ্যালয়ের কাজগুলো নিয়মিত করছে কিনা লক্ষ্য রাখুন। এই ছোট ছোট কাজগুলো সমাজের প্রতি তার দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করবে। বিদ্যালয়ে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় অবস্থায় অবস্থান করলো কিনা এই নিয়ে তার মধ্যে চাপ সৃষ্টি করবেন না। এটি তার ভেতর একটি মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে।
৩. বিদ্যালয়ের ব্যাগটি আপনার শিশুকে নিজে নিজে গোছাতে দিন। আপনি শুধু খেয়াল রাখুন সে সব কিছু ঠিকঠাক নিচ্ছে কিনা। এতে তার ভেতরে গোছানো একটি স্বভাব গড়ে উঠবে। খেলনা ভেঙ্গে ফেললে বকাঝকা না করে বুঝিয়ে বলুন যে এভাবে কোন জিনিস নষ্ট করা ঠিক নয়।
৪. পারিবারিক দাম্পত্য কলহ থেকে আপনার শিশুকে দূরে রাখুন। আপনাদের এই ঝগড়া বিবাদ ওর ভেতর মানসিক তিক্ততা সৃষ্টি করবে। শিশুটি যদি তা দেখে ফেলে তবে দুজনেই হাসিমুখে তা অন্যভাবে বুঝিয়ে বলুন।
৫. ভিক্ষুক বা অন্য কোথাও দান করতে গেলে আপনার শিশুকে সাথে রাখুন। ফলে তার মন উদার হবে, মানুষকে ভালবাসতে শিখবে।
৬. সামাজিক অনুষ্ঠানগুলোতে যেমন, বিয়ের অনুষ্ঠান, মিলাদ আপনার শিশুটিকে সাথে রাখুন। তাকে বিভিন্ন বিষয় দেখিয়ে দিন। এগুলো তাকে আরো বেশি সামাজিক করে তুলবে।
৭. রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান যেমন, ভাষা দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বাংলা নববর্ষ ইত্যাদিতে আপনার শিশুর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করুন। তাকে নিয়ে ঘুরে আসুন। দেশের এই অনুষ্ঠানগুলোকে ভালোভাবে চিনিয়ে দিন। মুক্তিযোদ্ধা, ভাষা শহীদদের কথা তাকে খুলে বলুন। দেশের প্রতি তার ভালোবাসা আরো বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও সপ্তাহে একদিন অন্তত তাকে নিয়ে প্রকৃতির কাছাকাছি ঘুরে আসুন। পরিবেশ এবং প্রকৃতি চিনিয়ে দিন।
আপনার শিশুর ভেতরে এই অনুভুতি কিংবা দায়িত্বগুলো সৃষ্টি করা আপনারই কর্তব্য। কেননা শিশুরা শিখে তার চারপাশের পরিবেশ থেকে, তাই তার চারপাশের পরিবেশকে সুন্দরভাবে তুলে ধরতে হবে তার পিতামাতাকে।