দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দু’হাত নেই, তবু পা দিয়ে লিখে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা দিচ্ছে হতদরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী মো: বেলাল হোসেন। সে পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র।
সিডর ও আইলায় নিঃস্ব হতদরিদ্র পরিবারে তার জন্ম হলেও চলছে শিক্ষিত হওয়ার সংগ্রাম। সে ক্ষেত্রে দরিদ্রতাই তার প্রধান বাধা। লেখাপড়া চালিয়ে যেতে তার দরকার আর্থিক সহায়তা। ২১ নভেম্বর সকালে উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর দাখিল মাদরাসা সমাপনী পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, একটি কক্ষের প্রথম সারির প্রথম বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে ডান পায়ের আঙ্গুলের ভেতর কলম ধরে দ্রুতগতিতে সুন্দর করে খাতায় লিখছে মো: বেলাল হোসেন। সে উমেদপুর গ্রামের দিনমজুর মো. খলিলুর রহমানের দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট।
অনলাইন পত্রিকা সূত্রে জানা যায়, জন্মগতভাবেই তার দুটি হাত নেই। পা দুুুটিও স্বাভাবিক নয়। মা হোসনে আরা বেগম ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার শপথ নেন। এরপর ঘরে বসে বেলালকে পড়াতে শুরু করেন। আর পায়ের আঙ্গুলের মধ্যে চক দিয়ে সিলেটে লেখার অভ্যাস করান। এভাবেই বেলাল আয়ত্ব করে ফেলে পা দিয়ে লেখার। এরপর ভর্তি করা হয় এক কিলোমিটার দূরের উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বেলালের বাড়ি গিয়ে কথা হয় তার মা হোসনে আরার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ও জন্ম থেকে লুলা (প্রতিবন্ধী) হওয়ায় গ্রামের মানুষ অনেক কথা কইত। তাই পোলাডারে লেহাপড়া শিখাইয়া মানুষ করার চিন্তা করলাম। ওরে পা দিয়া লেহা শিখাইছি। নিত্য ওরে স্কুলে লইয়া গেছি। ওর বাপে টাহার লাইগ্যা এহন ওরে লেহাপড়া করাইতে চায় না।’ পরীক্ষা শেষে বেলাল জানায়, ‘অর্থ সঙ্কটের কারণে সে অন্যদের মতো প্রাইভেট পড়তে পারেনি। তবে শিক্ষকরা তাকে যথেষ্ট সহায়তা করেছেন। প্রথম দিনের অংক পরীক্ষায় সে একশ’ নম্বরের উত্তর দিয়েছে। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা প্রকাশ করছে এই অদম্য মেধাবী বেলাল।’ উমেদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো: রেজাউল করিম জানান, ‘শিক্ষকরা ওর শিখনে সাধ্যমত চেষ্টা করেছেন। সে অত্যন্ত মেধাবী। তবে পরিবারটির আর্থিক দৈন্য থাকায় খাওয়া-পরায় কষ্ট হয়। সে কোনো বিত্তবানদের সহায়তা পেলে এক আদর্শ মানুষ হতে পারবে।’
উমেদপুর দাখিল মাদরাসা সমাপনী কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক একাডেমিক সুপারভাইসার মো: মনিরুজ্জামান জানান, ‘কেন্দ্রে এক প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী আছে জানতে পেরে তার পরীক্ষা গ্রহণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এক পরীক্ষার্থী হাত দিয়ে যা লেখে তার চেয়ে সে অনেক সুন্দর ও দ্রুত লিখতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মালেক খান জানান, বেলালের দুই হাত না থাকলেও সে অত্যন্ত মেধাবী। আর্থিক দৈন্যের জন্য পরিবারের পক্ষে তার লেখাপড়ার খরচ চালানো দুষ্কর। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়েছে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। সে দেশের বিত্তবানদের একটু সহায়তা পেলে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ সেবায় অংশ নিতে পারবে বলে তিনি জানান।’
ইচ্ছে থাকলে পৃথিবীর কোন কিছুই অসাধ্য নয়, তা আবারও প্রমাণ করেছে পটুয়াখালীর এই হতদরিদ্র বেলাল। আমাদের সমাজে যেখানে কাড়ি কাড়ি টাকা খরচ করেও কোন কাজ হচ্ছে না, সেখানে না খেয়ে উপস থেকে এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হাত নাই তবুও সে পা দিয়ে কষ্ট করে লিখেই পড়া-লেখা চালাচ্ছে। বেলালদের দেখে আমাদের সমাজের অনেক ছেলে-মেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। ইচ্ছে করলেই সব অসাধ্যই সাধন করা সম্ভব।
This post was last modified on নভেম্বর ২২, ২০১২ 5:18 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হাঁটা কিংবা দৌড়ানোর জুতো কেমন হওয়া উচিত? সেটি হয়তো অনেকের…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ইনস্টাগ্রাম। ফটো ও…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমেরিকান পপশিল্পী গায়িকা টেইলর সুইফটের খ্যাতি রয়েছে সর্বত্র। বহু আগে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ২০২৫ সালের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা হবে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাসের ভিতর থাকা মহিলা কন্ডাক্টরের সঙ্গে কথা বলছেন ঝুলে থাকা…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৭ কার্তিক ১৪৩১…