দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মহিলাটির গর্ভে তার নয় মাসের সন্তান। নদীর অপর পাঁড়ে থাকা হাসপাতাল ছাড়া চিকিৎসার আর কোন মাধ্যম নেই। নদীটিও বেশ খরস্রোতা তাছাড়া নদীতে নেই নৌকা। তাই চিকিৎসার জন্য মহিলাটি নিজের জীবন বাজি রেখে সাঁতরে পাড়ি দিলেন খরস্রোতা নদী।
ভারতের কর্নাটক রাজ্যের বেঙ্গালুর শহরের ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত জাদগির জেলা। এই জেলায় উক্ত ঘটনাটি ঘটে। বিবিসির বরাত দিয়ে এই প্রতিবেদনটি সারাবিশ্বের মিডিয়ায় প্রচারিত হয়। নদীটি বেশ খরস্রোতা হওয়ায় এখানে খেয়া নৌকা চলে না। কিন্তু প্রসুতি এই মায়ের চিকিৎসা নেওয়া বেশ জরুরী ছিল তাই তিনি নদীটি সাঁতরে পাড়ি দেওয়ার চিন্তা করেন। নদীর প্রশস্ততা প্রায় ১ কিলোমিটার। সাঁতরে নদী পাড়ি দেওয়ার সময় তার সাথে ছিল তার বাবা এবং ভাইয়েরা। নিজের সন্তানের সুস্থতা আর নিরাপদ জন্মের জন্য এমন একটি দুঃসাহসিক কাজ করা মহিলাটির নাম জেল্লাবা। তার বয়স ২২ বছর। জেল্লাবা যে গ্রামে থাকেন তার নাম হলো নীলাকান্তরায়াজ্ঞাড়। এই গ্রামটি কৃষ্ণ নদী বেষ্টিত একটি দ্বীপগ্রাম। এই গ্রাম থেকে শহরে আসতে নদী পাড়ি দিতে হয়। আগে নদী পাড়ি দেওয়ার জন্য ছিল একটি ভেলা, কিন্তু নদীর খরস্রোতার সাথে টিকতে না পেরে এখন এটি চলাচল বন্ধ।
নদী পাড়ি দেওয়া প্রসঙ্গে জেল্লাবা বিবিসিকে বলেন, প্রথমে আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে আমি আমার সন্তানের সুস্থতার কথা চিন্তা করে সংকল্প করলাম যেভাবেই হোক নদীটি পাড়ি দেব। জেল্লাবা যখন নদী পাড়ি দিচ্ছিলেন তখন কৃষ্ণ নদীর একেকটি ঢেঊ ছিল প্রায় ১২ থকে ১৪ ফুট উচু। জেল্লাবার এই নদী পাড়ি দেওয়ার সময় তার সাথে ছিল তার বাবা, তার ভাই এবং চাচাতো ভাইয়েরা। তারা নদীতে ভেসে থাকার জন্য ব্যবহার করেছে বোতল, পাতিল ও লাউ-কুমড়ার শুকনো খোল। জেল্লাবার এই পাড়ি দেওয়ার সময় তার ভাই সবার সামনে ছিল, তিনি দিক নির্দেশ করছিলেন। আর তার অন্যান্য ভাইয়েরা এবং চাচাতো ভাইয়েরা জেল্লাবার চারপাশে লাঊ কুমড়ার শুকনো খোলস দিয়ে পরিবেষ্টিত করে রাখে যেন সে সহজে ভেসে থাকতে পারে।
জেল্লাবা নদীর ওপর পাঁড়ে নিরাপদে পৌছে চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ কেক্কারা গ্রামের সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পৌছলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা করে জানায় যে, তিনি সুস্থ আছেন। আরো ২০ থেকে ২৫ দিন পর তার সন্তানের প্রসবের সময় আসতে পারে বলে তিনি মনে করছেন। বর্তমানে জেল্লাবা কেক্কারা গ্রামের তার এক আত্মীয়র বাড়িতে অবস্থান করছেন।
তথ্যসূত্রঃ বিবিসি