দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বিভিন্ন জেলায় ভেসে উঠেছে ২৩ লাশ। এখনও পিনাক-৬ এর কোনো সন্ধান মেলেনি। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কোনদিন উদ্ধার হবে না পিনাক-৬? নাকি দিনার ও নাসরিনের মতোই কি নিখোঁজ থেকে যাবে?
মুন্সিগঞ্জের মাওয়ার পদ্মায় লঞ্চ ডুবির ঘটনায় গতকাল বুধবার রাত পর্যন্ত বিভিন্ন জেলা থেকে মোট ২৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৮টি মরদেহ স্বজনদের হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি ১৫টি মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় হস্তান্তর করা যায়নি।
লঞ্চডুবির পর প্রশাসন যে তালিকা তৈরি করেছে সেই তালিকা অনুযায়ী নিখোঁজের সংখ্যা ১৩৭ জন। এ ছাড়া লঞ্চডুবির সময় ৪০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। সোমবার মাওয়া এলাকার পদ্মা থেকে দুই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এর পরের দিন মঙ্গলবার মাদারীপুরের হাইমচর থেকে আরও ২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকৃত বাকি লাশগুলো ভোলায় ৬, মুন্সিগঞ্জে ৪, চাঁদপুর ৪, লহ্মীপুর ১, বরিশাল ২ ও শরীয়তপুরে ৬টিসহ মোট ২৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এসব মরদেহ লঞ্চ পিনাক-৬-এর যাত্রী বলে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এদিকে গত ৩ দিনেও পিনাক-৬ এর হদিস করতে পারেনি উদ্ধারকারীরা। দুর্ঘটনার ৩ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যেও না পেয়ে অন্তত ৫ মাইল ব্যাসার্ধের মধ্যে অভিযান চালিয়েও কোনো খোঁজ মেলেনি নির্খোঁজ লঞ্চ পিনাক-৬ এর।
এমন এক পরিস্থিতিতে মনে করা হচ্ছে দিনার ও নাসরিনের পথেই এগুচ্ছে পিনাক-৬। চাঁদপুরের মেঘনায় ডুবে যায় এমভি দিনার-২, এমভি নাসরিন-১ ও এমভি দিগন্ত। ওই ৩টি জাহাজই আজও নিখোঁজ রয়ে গেছে। পিনাক-৬ এর পরিণতিও সে পথেই কিনা তা এখন সন্দেহ দেখা দিয়েছে। মেঘনায় ওই ৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চসহ বহু নৌযান আজও নিখোঁজ রয়েছে, উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, বিআইডাব্লিউটির উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম, হামজা এবং নৌ বাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ শৈবাল ও শাহজালাল বহু চেষ্টার পরও মেঘনায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ ৩টি উদ্ধার করা যায়নি। বহু খোঁজাখুঁজির পরও লঞ্চগুলোকে পাওয়া না যাওয়ায় উদ্ধার করা যায়নি। পিনাক-৬ এর পরিণতিও সেদিকেই যাচ্ছে বলে অনেকেই মনে করছেন। ওই ৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চে সলিল সমাধি ঘটেছিল সহস্রাধিক যাত্রীর। স্বজনরা তখন তাদের লাশও ফিরে পাননি।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মায় ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ উদ্ধারে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। কিন্তু ৩ দিন অতিবাহিত হলেও এখনও পিনাক-৬ এর সন্ধান মেলেনি। কখন কবে ওই লঞ্চের সন্ধান মিলবে তা কেওই বলতে পারছে না।
# ২০০৪ সালে একই দিনে ঝড়ের কবলে পড়ে চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে ২টি যাত্রীবাহী লঞ্চ এবং একটি কার্গোসহ ৩টি নৌযান ডুবে যায়। এগুলোর ২টির সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।
# ২০০৪ সালের ২৩ মে বরগুনার টরকি হতে নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার সময় চাঁদপুরের মেঘনার কানুদি এলাকায় এমভি দিগন্ত নামে লঞ্চ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ডুবে যায়। ওই লঞ্চের ১৫ যাত্রী সাঁতরিয়ে তীরে উঠতে সমর্থ হয়। পরে ১১ যাত্রীর লাশ উদ্ধার করা হয়। লঞ্চটি উদ্ধারে নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজ শৈবালকে নিয়োজিত করা হয়। কিন্তু তারপর লঞ্চ উদ্ধার করতে পারেনি। সলিল সমাধি ঘটে প্রায় একশ’ যাত্রীর। একই দিনে ঝড়ে এমভি কাউসার নামে একটি কার্গো ডুবে যায়। সেটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
# ২০০৩ সালের ৮ জুলাই দেশের স্মরণকালের লঞ্চডুবি ঘটনা ঘটে চাঁদপুরের মেঘনার মোহনায়। ঢাকা থেকে ভোলার লালমোহনগামী এমভি নাসরিন-১ ঈদের পরদিন দু’সহস্রাধিক যাত্রী নিয়ে যাওয়ার পথে ঘূর্ণন স্রোতে পড়ে, এটি চাঁদপুরের মেঘনার মোহনায় ডুবে যায়। ২১৮ জন যাত্রী জীবিত সাঁতরিয়ে তীরে ওঠেন। বাকিরা লঞ্চসহ মোহনার অতল গভীরে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এ লঞ্চ উদ্ধারে বিআইডাব্লিউটির উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম, হামজা ও নৌ বাহিনীর অত্যাধুনিক উদ্ধারকারী জাহাজ শৈবাল দীর্ঘ ১২ দিন চেষ্টার পরেও লঞ্চটি উদ্ধার করতে পারেনি। তবে লঞ্চ থেকে ৬০টি লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়।
# পরের ঘটনাটি ২০০৩ সালের ৮ জুলাই সকালের। মেঘনার মোহনায় বরগুনা থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ এমভি সাদিয়ার সঙ্গে পটুয়াখালীগামী কার্গো আল আমিনের সংঘর্ষের ফলে মুহূর্তের মধ্যে আল আমিন কার্গোটি মোহনায় ডুবে যায়। সেটিও আজ পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে অল্পের জন্য ৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে রক্ষা পায় এমভি সাদিয়া।
# ১৯৯৪ সালের ২০ আগস্টের ঘটনা। চাঁদপুরের মেঘনার মোহনার ঘূর্ণন স্রোতে দিনের বেলায় অতিরিক্ত মালামাল এবং যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে এমভি দিনার-২ সাড়ে ৩শ’ যাত্রী নিয়ে মেঘনায় ডুবে যায়। এ ডুবন্ত লঞ্চটি উদ্ধারে উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম, হামজা, সামিয়া, অগ্রদূত, অগ্রণী, নৌবাহিনীর উদ্ধারকারী জাহাজ শাহাজালাল এসে বহু চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত লঞ্চটি উদ্ধার করতে পারেনি। এই লঞ্চ থেকে ৫০ জন যাত্রী সাঁতরিয়ে তীরে উঠতে সক্ষম হলেও বাকি যাত্রীদের সলিল সমাধি ঘটে।
# এমনিভাবে মেঘনা মোহনার ঘূর্ণন স্রোতে আরও ৩/৪টি কার্গো ডুবে গেলেও সেগুলো আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মায় সোমবার ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ এর পরিণতি নিয়ে শঙ্কিত সবাই। কারণ যারা মারা গেছেন তারা জীবিত হবেন না। কিন্তু স্বজনরা তাদের শেষ দেখা দেখে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তাদের বিদায় দেবেন সেটিও তাদের জুটবে না। আজ আমরা কায়মোনো বাক্যে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করি পিনাক-৬ লঞ্চটি উদ্ধার হোক এবং স্বজনরা তাদের স্বজনদের মৃতদেহগুলো অন্তত ফেরত পাক।
উল্লেখ্য, কাওড়াকান্দি থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়াঘাটে আসার সময় সোমবার সকাল ১১টার দিকে প্রায় ৩শ’ যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ নামে লঞ্চটি ডুবে যায়। গত তিনদিন অতিবাহিত হলেও লঞ্চটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
This post was last modified on আগস্ট ৭, ২০১৪ 11:06 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বর্তমান সময়ে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় মেসেজিং এন্ড কলিং প্ল্যাটফর্ম হলো…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নুহাশের চলচ্চিত্র মানেই এক অন্যরকম অনুভূতি। আর সেই চলচ্চিত্র ‘বেসুরা’য়…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গাজার মতোই অধিকৃত পশ্চিম তীরকেও ধ্বংসস্তূপে পরিণত করতে চাই ইসরায়েলি…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সোনা ভেবে রাস্তা থেকে পাথর কুড়িয়ে এনেছিলেন এক ব্যক্তি। ১৫…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫ খৃস্টাব্দ, ২৬ পৌষ ১৪৩১…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শীতে মধু মাখলে বেশ উপকার পাওয়া যাবে। যে কারণে এই…