দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ গতকাল সব শিক্ষাবোর্ডে একযোগে এইচএসসি ২০১৪ ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। সার্বিকভাবে ফলাফল সন্তোষজনক হলেও যশোর বোর্ডে ঘটেছে ফল বিপর্যয়। যশোর বোর্ডে ফল বিপর্যয় ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবও শিক্ষক সবাই হতভম্ভ। কি কারণে ঘটলো এমন বিপর্যয়?
এবারের ২০১৪ এইচএসসি পরীক্ষায় সারাদেশে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৩৩। ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ প্রায় সব বোর্ডের অবস্থান মোটামুটি হলেও যশোর বোর্ডে ঘটেছে ফল বিপর্যয়। গতবছর যশোর বোর্ডের মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৯৪ জন। যার মধ্যে পাস করেছিল ৭৪২৪০ জন। আর এবার মোট ১ লাখ ১৭ হাজার ২০৩ শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। আর পাস করেছে মাত্র ৬৯ হাজার ৫৫০ জন। সববোর্ডের থেকেই কম যশোর বোর্ডে। এ বোর্ডে এবার পাশের হার মাত্র ৬০.৫৮। যশোর বোর্ডের এ পাসের হার গতবছরের থেকেও বেশ কম। গতবছর ২০১৩ সালে যশোর বোর্ডের পাসের হার ছিল ৬৭.৪৯। শুধু পাশের হারই নয়, পাশাপাশি কমেছে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। গতবছর (২০১৩) যশোর বোর্ড থেকে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৭৫০ শিক্ষার্থী। কিন্তু এবার জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪২৩১ জন।
যশোর বোর্ডের ফল বিপর্যয় নিয়ে শুধু শিক্ষার্থী নয়, ‘অভিভাবক এমনকি শিক্ষকরাও হতভম্ভ হয়েছেন। একজন শিক্ষক বলেন, আমার এমন সব ছাত্রীর কথা জানা-দেখা ছিল যারা নিশ্চিতভাবেই জিপিএ ৫ পাবে। অথচ তারা কেও কেও ৪.২ পর্যন্ত পেয়েছে। এমনটা হতেই পারে না।’ তিনি বলেন, ‘আমি রেজাল্ট দেখে বিশ্বাসই করতে পারিনি।’
এই ফল বিপর্যয় কি কারণে ঘটেছে সে প্রসঙ্গে যশোর বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মোহাম্মদ আবু দাউদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এবার এ বোর্ডে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই ইংরেজিতে খারাপ করেছে। তিনি বলেন, ‘ইংরেজি পরীক্ষার আগে হঠাৎ প্রশ্ন ফাঁসের গুজব রটেছিল, যদিও গুজবটি সঠিক ছিল না। কিন্তু গুজবের কারণে পরীক্ষার্থীরা বিভ্রান্ত হয়, আশাহত হয়। এর প্রভাব শুধু ইংরেজির ফলাফলেই নয়, পুরো পরীক্ষার ফলাফলের ওপরই পড়েছে বলে আমি মনে করি।’
একজন অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে জিপিএ ৫ পাবে এটি আমি নিশ্চিত ছিলাম। ফল পেয়ে দেখলাম মেয়ে ৪.২ পেয়েছে। আমি ফল দেখে যেনো আকাশ থেকে পড়লাম।’
যশোর বোর্ডের কমার্সের এক শিক্ষার্থী বললেন, ‘প্রায় প্রতিটি পরীক্ষার আগের দিন শুনেছি প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা। আমাকে আমার সহপাঠিরা ফোন করে বলেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। আমাকে অনেকে দিতেও চেয়েছে কিন্তু আমার কম্পিউটার নেই এবং ভালো মোবাইল নেই যে কারণ অনলাইনের এসব প্রশ্নপত্র নেওয়া সম্ভব হয়নি। মাঝখান থেকে আমার পড়া-লেখায় ব্যাঘাত ঘটেছে।’ ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা শোনার পর থেকে আমার একটুও পড়া-লেখা হয়নি। আমার শুধুই মনে হয়েছে, সারাবছর এতো পড়া-লেখা করলাম, আর যারা পড়া-লেখা করলো না তারা প্রশ্নপত্র পেয়ে ভালো রেজাল্ট করবে। তাহলে পড়া-লেখা করে কি লাভ?’
এভাবেই বোঝা যায় এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফলের দিক থেকে যশোর বোর্ডে কতটা বিপর্যয় ঘটেছে। নানা ধরনের প্রশ্নপত্র ফাঁসের গুজব ভালো ছাত্র-ছাত্রীদের প্রভাব পড়ে। সেটিই ঘটেছে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। আর তাই প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে নজর দিতে হবে। সৃজনশীল পদ্ধতি আসার পর দেশের শিক্ষাক্ষেত্রে যে আমুল পরিবর্তন এসেছে, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পুরো বই পড়ার যে মন মানষিকতা হয়েছে সেটি ধরে রাখতে হবে। তা নাহলে শুধু ফল বিপর্যয় নয় আরও অনেক বিপর্যয় ঘটবে শিক্ষাক্ষেত্রে- যা কারই কাম্য নয়।