তথ্য প্রযুক্তির সংক্ষিপ্ত সংবাদ (১৯-০১-১৩)

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে চলেছে তথ্য প্রযুক্তির হাওয়া। তাইতো বর্তমান বিশ্বে তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া ভাবাই যায় না। আজ তথ্য প্রযুক্তির সংক্ষিপ্ত সংবাদ (১৯-০১-১৩) এ বিশ্বের বেশ কিছু তথ্য প্রযুক্তির খবর তুলে ধরা হলো।

বড় পর্দায় ম্যাকাফি

টেকগুরু খ্যাত প্রয়াত জবসের পর এবার বড় পর্দায় এন্টিভাইরাস নির্মাতা জন ম্যাকাফিকে নিয়ে চলছে আয়োজন। সম্প্রতি গার্ডিয়ান এ বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে জানানো হয়, ম্যাকাফির জীবন বাস্তবতা নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে পূর্ণদৈর্ঘ্যের এই চলচ্চিত্র। টেক আইকনদের মধ্যে গত বছরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন জন ম্যাকাফি। তবে ম্যকাফিকে নিয়ে নির্মাণাধীন চলচ্চিত্রের নাম ভূমিকায় কাকে কাস্ট করা হচ্ছে সে বিষয়ে এখনও কোন নাম প্রকাশ করা হয়নি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্নার ব্রাদার্স এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করছে বলে জানা যায়। আর তাই প্রতিষ্ঠানটি ‘জন ম্যাকাফি’স লাস্ট স্ট্যান্ড বইটির স্বত্বও কিনে নেয়। পুরো বইটি ম্যকাফির ঘটনাবহুল জীবনের সারাংশ। ইতিমধ্যে ম্যাকাফি তার জীবনের ৬৭টি বসন্ত পার করেছেন। সম্প্রতি এক খুনের ঘটনায় বেলিজে বসবাসরত ম্যাকাফি আলোচনায় আসেন। ঘটনার পর থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি। গুয়েতেমালায় প্রেমিকাসহ তার দেখা মেলে। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে আটক হওয়ার পর নিজেকে তিনি ক্লান্ত বলে অভিহিত করেন।

গল্প যখন বাস্তবতার পথে

বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক জুলভার্নের কথা আমরা সবাই জানি। যার বিভিন্ন কাল্পনিক চিন্তা এখন আমরা বাস্তবেও দেখি। এই ধারাবাহিকতা যেন এখন বর্তমান। আর একে একে বিভিন্ন কাল্পনিক চিন্তাগুলো হয়ে উঠছে বাস্তবতার ফসল। বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর কত শত প্রযুক্তি এখন আমাদের হাতের মুঠোয়।

সম্প্রতি এ ধরনেরই আরেকটি উদ্ভাবন মানুষকে আশা জাগিয়েছে। আর এটি হল একটি সফটওয়্যার। ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার অধ্যাপক রিচার্ড মার্কই এই সফটওয়্যারের প্রণেতা। তিনি জানিয়েছেন, এই সফটওয়্যারটি ব্যবহারের মাধ্যমে খুন এবং অন্যান্য অপরাধের সংখ্যা কমিয়ে আনা যাবে। ম্যাশেবল জানিয়েছে, ওই সফটওয়্যারটি একেবারেই হলিউডি স্টাইলে সতর্ক করে দেবে প্রশাসনকে। পাঠকরা নিশ্চয় এতক্ষণে বুঝে গেছেন কি বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই এখন জেনে যাবে নিরাপত্তা বাহিনী। এর মানে হলিউড সিনেমা মাইনরিটি রিপোর্টের প্রিকগ-এর মতোই একটা ঘটনা ঘটবে কোন অপরাধ সংঘটনের আগে। তবে সিনেমার ওই প্রযুক্তির সঙ্গে বাস্তবতার কিছু তারতম্য তো থাকছেই। কারণ এই কাজটি করবে একটি সফটওয়্যার। আর সিনেমায় করেছে একজন মানুষ। জানা গেছে, সফটওয়্যারটির কার্যকারিতা ইতিমধ্যে পরীক্ষামূলক চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের পুলিশ প্রশাসন। আর বাল্টিমোর ও ফিলাডেলফিয়ার পুলিশ বিভাগ তো রীতিমতো এটি ব্যবহার শুরু করেছে। সংবাদ সংস্থাগুলো জানায়, ওয়াশিংটন ডিসিতেও এটি ব্যবহার করার আলোচনা চলছে। তবে কিভাবে অপরাধ সংঘটনের আগে একটি সফটওয়্যার সতর্ক করবে সে বিষয়ে এক সাক্ষাৎকারে রিচার্ড মার্ক বলেন, যখন একজন প্যারোল অফিসার মুক্তি পাওয়া অপরাধীদের খবর রাখেন তখন তিনি সেটি ঠিক মতো নাও করতে পারেন। কিন্তু এই সফটওয়্যারটি ওই অপরাধীর পরবর্তীতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কতটুকো সে সিদ্ধান্ত নিশ্চিত করবে। আগে যেখানে ১০০টি খুনের ঘটনায় একটি চিহ্নিত করা যেত এখন এই সফটওয়্যারটির মাধ্যমে খুনের আগেই ৮টি চিহ্নিত করা যাচ্ছে। তবে মার্ক এটিকে স্পিলবার্গের চলচ্চিত্রের সঙ্গে মেলাতে মানাই করেছেন।

দেশে উন্মুক্ত হচ্ছে ভিওআইপি

বাংলাদেশে ভিওআইপির অবৈধ দৌরাত্ম্য কমাতে সরকার ১০০৪টি ভিওআইপি লাইসেন্স অনুমোদন দিয়েছে। গেল বছর অক্টোবরের মধ্যে জমা পড়া ১৫০৮টি আবেদনের মধ্য থেকে এই সংখ্যা নির্বাচন করা হয়। টেলিযোগাযোগ সচিব আবু বকর সিদ্দিক ১০০৪টি ভিওআইপি লাইসেন্স অনুমোদনের বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন।

এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকি। তবে বিটিআরসি সরকারের কাছে মাত্র ২৫৭টি ভিওআইপি লাইসেন্স দিতে অনুরোধ করলেও, শেষ পর্যন্ত এক হাজারের বেশি লাইসেন্স অনুমতি পেল। সামবার ১০০৪টি কোম্পানিকে ভিওআইপি করার বৈধতা দেয়ার জন্য অনুমোদন দেয় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। পরে এসব কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া যেতে পারে এ মর্মে একটি চিঠি বিটিআরসিতে পাঠায় মন্ত্রণালয়। স্বল্প সময়ে এসব কোম্পানিকে লাইসেন্স দেয়া হবে বলে জানান টেলিযোগাযোগ সচিব। এর আগে বিটিআরসিতে জমা পড়া আবেদনগুলো মূল্যায়ন করে নম্বরের ক্রমানুসারে একটি তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। ১০০ নম্বরের মধ্যে যেসব কোম্পানি ন্যূনতম ৪৮ নম্বর পেয়েছে তাদের লাইসেন্স দেয়া হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে টেলিযোগাযোগ সচিব ন্যূনতম নম্বর বলতে রাজি হননি। সূত্র জানিয়েছে, আবেদন মূল্যায়ন করতে গিয়ে সর্বোচ্চ ৮৯ নম্বর পেয়েছে একটি কোম্পানি। আবার ৩৫টি কোম্পানি অনেক ভুল করায় তাদের কোন নম্বরই দেয়া হয়নি। ১ জানুয়ারি সবগুলো কোম্পানির নামসহ তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
টেলিযোগাযোগ সচিব জানান, অবৈধ আন্তর্জাতিক টেলিফোন কলকে বৈধতা দেয়া এবং সরকারের আয় নিশ্চিত করার জন্যই এতো লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, বেশি সংখ্যায় লাইসেন্স দিলে তাতে করে প্রতিযোগিতা বাড়বে এবং এর ফলে সরকারের আয়ও বাড়বে। সচিব জানান, জুনের মধ্যে এই খাত থেকে সরকারের একটি বড় আয় আসতে হবে। তার জন্য কিছু লক্ষ্যমাত্রাও দেয়া আছে। অবৈধ কলকে বৈধ পথে আনার মাধ্যমে এই আয় নিশ্চিত করতে হবে। তবে সচিবের এই বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করছেন বিটিআরসির একাধিক কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরাও এতো বেশি লাইসেন্স দেয়ার বিপক্ষে বলছেন।

তারা বলছেন, এতো বেশি লাইসেন্স দিয়ে লেজেগোবরে অবস্থায় পড়ে যাবে বিটিআরসি। তখন আর কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না তারা। তারা লাইসেন্স বেশি হলে প্রতিযোগিতা বাড়বে সব ক্ষেত্রে এটি ঠিক কথা নয়। বরং সংখ্যা বেশি হওয়ায় লাভ না করতে পারলে তখন অবৈধ কার্যক্রমেও তারা উৎসাহী হয়ে পড়তে পারেন।

এদিকে বিটিআরসির একাধিক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, যে পরিমাণ কল দেশে আসবে তার কত শতাংশ আন্তর্জাতিক গেটওয়ে বা আইইজিডব্লিউ’র মাধ্যমে আসবে আর কতগুলো নতুন এই লাইসেন্স গ্রহীতারা আনবে সেটির ওপর নির্ভর করেই লাইসেন্সের সংখ্যা নির্ধারণ করা উচিৎ।

২০১২ সালে পিসি বিক্রি কমেছে ৬.৪ শতাংশ

বিশ্বব্যাপী ২০১২ সালের শেষ প্রান্তিক অক্টোবর-ডিসেম্বরে পিসি (ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ) বিক্রি হয়েছে ৮ কোটি ৯৮ লাখ ইউনিট। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৪ শতাংশ কম।

বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইডিসি জানায়, এ হিসাবে গত বছর পিসি বিক্রি ৩ দশমিক ২ শতাংশ কমেছে। চতুর্থ প্রান্তিকে বিশ্বের শীর্ষ কম্পিউটার নির্মাতা এইচপির সরবরাহ আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৬ শতাংশ কমে যায়। অবশ্য এ সময় প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লেনোভোর পিসি সরবরাহ বাড়ে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। শীর্ষ কোম্পানিগুলোর মধ্যে সরবরাহ সবচেয়ে বেশি কমেছে ডেলের। ২০১১ সালের একই সময়ের তুলনায় কোম্পানিটির এ পণ্য বিক্রি কমেছে ২০ দশমিক ৮ শতাংশ। অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী এসারের বিক্রি এ সময় কমে ২৮ দশমিক ২ শতাংশ। অবশ্য আসুস এ সময় তাদের পিসি সরবরাহ ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়াতে সক্ষম হয়। শুধু অর্থনৈতিক সংকটই নয়, কোম্পানিগুলোর পরিবর্তিত মনোযোগও পিসি সরবরাহ কমার পেছনে কাজ করছে। বেশির ভাগ পিসি নির্মাতা কোম্পানিই এখন ট্যাবলেট, আল্ট্রাবুক, স্মার্টফোনের মতো বহনযোগ্য যন্ত্র তৈরিতে বেশি মনোযোগী। এসব যন্ত্রে ব্যবহারোপযোগী অ্যাপ এবং অন্যান্য সফটওয়্যার তৈরিতেই কোম্পানিগুলোর অর্থ ও বিপণন কৌশল বেশি কাজ করছে। উইন্ডোজ৮-এর মতো অপারেটিং সিস্টেমও অবশ্য পিসি বাজারে পরিবর্তন আনতে ভূমিকা রেখেছে। এ অপারেটিং সিস্টেমটির পদ্ধতির সঙ্গে টাচস্ক্রিন ধরনের যন্ত্রই বেশি মানানসই। ফলে পিসি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোও নতুন এ অপারেটিং সিস্টেমের উপযোগী যন্ত্র তৈরিতেই বেশি আগ্রহী। আইডিসি জানায়, উইন্ডোজ পিসিতে স্পর্শনির্ভর পদ্ধতি ব্যবহারের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি উপযোগী অ্যাপ্লিকেশনের অভাবেও পিসি বাজার নিয়ে বেশ সংশয়ে আছেন উৎপাদনকারীরা। প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষক জে চৌ বলেন, তৃতীয় প্রান্তিকে উইন্ডোজ৭নির্ভর কম্পিউটারের মজুদ শেষ করায় মনোযোগ ছিল সরবরাহকারীদের। তবে মজুদ শেষ করলেও উইন্ডোজ৮-এর জন্য ফাঁকা মাঠ তৈরিতে তেমন সফল হননি তারা। স্পর্শনির্ভর পিসি তৈরি করতে গিয়ে আরও নিরাপদ, বিশ্বস্ত ও কার্যকর পিসি আনার বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে। তিনি আরও বলেন, যদি আল্ট্রাবুকের দাম কমার পাশাপাশি ভোক্তারা উইন্ডোজ৮-এর প্রতি আগ্রহী হয়, তাহলে আগামী বছর পিসির বাজার চাঙ্গা হতে পারে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বড় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের পুরনো কম্পিউটার বদল করায় পিসি বিক্রির মন্দা একটু কম হয়েছে। সেসঙ্গে উইন্ডোজ৮-এর প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ কম হলেও পিসির বিক্রি সামান্য বাড়িয়েছে। তবে আইডিসি জানায়, সীমিত পণ্য বৈচিত্র্য, বিশেষ করে টাচস্ক্রিন পিসিস্বল্পতার কারণে বিক্রি একটু কম ছিল।

এদিকে অন্যান্য লাভজনক ব্যবসায় মনোযোগ দেয়ায় পিসির বাজারে দখল হারাচ্ছে ডেল। বর্তমানে এ বাজারে কোম্পানিটির দখল ১০ দশমিক ৬ শতাংশ। এইচপির বাজার দখলের পরিমাণ ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। আইডিসির মতে, উইন্ডোজ৮ নিয়ে আগ্রাসী বিপণন চালানোর কারণেই এখন পর্যন্ত বাজারের শীর্ষস্থান নিজেদের কব্জায় রাখতে পেরেছে কোম্পানিটি। ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের প্রতি ভোক্তাদের অধিক আগ্রহের কারণে পিসির চাহিদা কমছে বলে মনে করে আইডিসি। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড কোয়ার্টারলি পিসি ট্র্যাকারের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটি বলে, অব্যাহত অর্থনৈতিক মন্দা এবং প্রতিদ্বন্দ্বী যন্ত্রের কারণে পিসি বাজার ক্রমেই পিছিয়ে পড়ছে। সর্বশেষ প্রান্তিকে পিসি সরবরাহ ৪ দশমিক ৪ শতাংশ কমতে পারে বলে এর আগে জানিয়েছিল আইডিসি। তবে বাজার পরিস্থিতি প্রতিষ্ঠানটির পূর্বাভাসের চেয়েও খারাপ ছিল।