দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ শুরু হয়েছে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার প্রক্রিয়া। যুদ্ধাপরাধীর মামলার প্রথম রায়ে বাচ্চু রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে বলে অনলাইন সংবাদ সংস্থা সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ নিউজ২৪ জানায়, মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সাবেক রোকন (সদস্য) আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় সোমবার চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহিনের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বাচ্চু রাজাকারকে মৃত্যুদ-াদেশ দেন।
পলাতক বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে এ রায়ের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধের প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। তবে পলাতক থাকায় বাচ্চু রাজাকারকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা সম্ভব হয়নি। তার বিরম্নদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আগেই পালিয়ে ভারত হয়ে তিনি পাকিসত্মানে চলে যায় বলে জানিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। বাচ্চু রাজাকারের বিচারিক প্রক্রিয়ার পুরোটাই তাই তার অনুপস্থিতেই সম্পন্ন হয়।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষের মাধ্যমে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়। এরপর এ মামলার রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রেখে আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রথম রায়, প্রথম ফাঁসি
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ গঠিত হয় আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রথম ট্রাইব্যুনাল গঠনের দুই বছরের মাথায় গত বছরের ২২ মার্চ গঠিত হয় আনত্মর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২, আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারের মামলাটি দিয়েই শুরম্ন হয় দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম। সে হিসেবে গঠনের পৌনে ৩ বছরের মাথায় প্রথম কোনো মামলার রায় ঘোষণা করলেন ট্রাইব্যুনাল। আর দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনাল তাদের হাতে আসা প্রথম মামলাটির বিচারও সম্পন্ন করলেন মাত্র ১০ মাসের মাথায়।
অন্যদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্ট’১৯৭৩ অনুসারে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি। আর প্রথম মামলার রায়ে সে সাজার আদেশই পেলেন প্রথম অভিযুক্ত। প্রথম মামলার রায়ে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ আসায় তাই সনেত্মাষ প্রকাশ করেছেন এ বিচার প্রক্রিয়ায় যুক্ত ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা।
২৬ ডিসেম্বর বাচ্চু রাজাকারের পক্ষে যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শেষ করেন আসামিপক্ষ। আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন বাচ্চু রাজাকারের পক্ষে ট্রাইব্যুনাল নিযুক্ত আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান। এরপর আইনি পয়েন্টে যুক্তি উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। তিনি আসামিপক্ষের যুক্তিখ-ন করে সমাপনী বক্তব্যও দেন। এর আগে ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর দুই কার্যদিবসে বাচ্চু রাজাকারের বিরম্নদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন অপর প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট সাহিদুর রহমান। আর আসামিপক্ষের ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে শেষ হয় বাচ্চু রাজাকারের বিরম্নদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া।
প্রসিকিউটর সাহিদুর রহমান পরে সাংবাদিকদের বলেন, “আবুল কালাম আজাদের বিরম্নদ্ধে মোট আটটি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল। সে বিষয়ে আমরা সাক্ষ্য-প্রমাণ উপস্থাপন করেছি। এবং এসব অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছি।”
তিনি বলেন, “আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য ও তথ্য প্রমাণ পেশ শেষে আইনগত যুক্তিও উপস্থাপন করা হয়েছে।” ‘‘আমরা আসামির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তি কামনা করেছি ট্রাইব্যুনালের কাছে।’’
বাচ্চু রাজাকারের মামলার কার্যক্রম শেষ করার মধ্য দিয়ে দু’জনের বিরম্নদ্ধে শেষ হয়েছে বিচারিক প্রক্রিয়া। এর আগে ৭ জানুয়ারী একই ট্রাইব্যুনালে শেষ হয়েছে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্যার মামলার বিচারিক প্রক্রিয়াও। কাদের মোল্যার মামলার রায় যে কোনো দিন ঘোষণা করবেন ট্রাইব্যুনাল।
অন্যদিকে ৬ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ এ জামায়াতের নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলায় উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন হয়। তবে ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় যুক্তিতর্ক আবার শুনছেন। আইন অনুসারে এরপরই ঘোষিত হবে সাঈদীর মামলার রােয়র তারিখ।
মামলার ধারাবাহিক বিচারিক কার্যক্রম
ট্রাইব্যুনাল-২ গঠনের পর প্রথম বিচারিক কর্যক্রম হিসেবে গত বছরের ২৫ মার্চ রাষ্ট্রপক্ষকে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদনেত্মর অগ্রগতি প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। আদেশ অনুযায়ী তার বিরম্নদ্ধে ২ এপ্রিল তদনেত্মর অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করেন প্রসিকিউশন। একই সঙ্গে বাচ্চু রাজাকারের বিরম্নদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদনও করেন রাষ্ট্রপক্ষ।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১০ এপ্রিল বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি শেষে ৩ এপ্রিল বাচ্চু রাজাকারকে গ্রেফতার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তার আগেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ভারত হয়ে পাকিসত্মানে পালিয়ে যান বাচ্চু রাজাকার। ফলে ওই দিন পুলিশ তার রাজধানীর উত্তরার বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তাকে গ্রেফতারে ব্যর্থ হয়।
গত ২৬ জুলাই বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে তদনত্ম কাজ শেষ করে ওই তদনত্ম প্রতিবেদন (আনুষ্ঠানিক অভিযোগ) প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেন তদনত্ম সংস্থা।
৯ সেপ্টেম্বর আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারের বিরম্নদ্ধে এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। আনুষ্ঠানিক অভিযোগে তার বিরম্নদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, দেশানত্মরিত ও ধর্মানত্মরিতকরণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ১০টি ঘটনায় ২২টি অভিযোগের ভিত্তিতে মোট ৪৪৮ পৃষ্ঠার অভিযোগ দাখিল করা হয়।
২৩ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার মাধ্যমে বাচ্চু রাজাকারের বিরম্নদ্ধে হুলিয়া জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। আর গত ৭ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল আবুল কালাম আজাদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরম্নর আদেশ দিয়ে তার পক্ষে আইনি লড়াই করতে সরকারের খরচে মো. আব্দুস শুকুর খানকে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দেন।
৪ নভেম্বর পলাতক আবুল কালাম আজাদ বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে ৮টি অভিযোগের ২২টি ঘটনার ভিত্তিতে অভিযোগ গঠন করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ২৬ নভেম্বর বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্য (ওপেনিং স্টেটমেন্ট) উপস্থাপন করেন রাষ্ট্রপক্ষ। ওই দিন থেকে শুরম্ন করে ১৯ ডিসেম্বর পর্যনত্ম তার বিরম্নদ্ধে সাক্ষ্য দেন রাষ্ট্রপক্ষের মোট ২২ জন সাক্ষী।
সাক্ষীদের মধ্যে ছিলেন তদনত্ম কর্মকর্তা মো. নূর হোসেন ও জব্দ তালিকার সাক্ষী বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) বুক শর্টার এস এম আমিরম্নল ইসলাম। আর ঘটনার ২০ জন সাক্ষী হচ্ছেন- নেপাল চন্দ্র পাঠক, বাচ্চু রাজাকারের হাতে শহীদ চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী জোৎস্না রানী দাশ, মো: মোজাহের সিকদার, মো: ধলা মাতুব্বর, রঞ্জিত কুমার নাথ বাবু, শহীদ মাধব বিশ্বাসের ছেলে ভক্ত রঞ্জন বিশ্বাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন, প্রফুলস্ন রঞ্জন ম-ল, নগেন চন্দ্র ম-ল, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক তুষ্ট কুমার ম-ল, দেব কুমার দাস, রওশন আলী বিশ্বাস, একজন ক্ষতিগ্রস্ত নারী (ক্যামেরা ট্রায়াল), বিনোদ চন্দ্র বিশ্বাস, প্রবোধ কুমার সরকার, আব্দুল মান্নান, শহীদ পরিবারের সদস্য সুশীল কুমার পোদ্দার, আবু ইউসুফ সিদ্দিকী পাখি, সত্য রঞ্জন সাহা এবং অসিত বরণ সাহা। তাদের সবার বাড়ি ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায়। ট্রাইব্যুনাল নিযুক্ত বাচ্চু রাজাকারের আইনজীবী আব্দুস শুকুর খান তাদের জেরা সম্পন্ন করেন। অন্যদিকে আসামিপক্ষ কোনো সাক্ষী তালিকা দিতে না পারায় বাচ্চু রাজাকারের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য ছাড়াই যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরুর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। ২৩, ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ এবং ২৪ ও ২৬ ডিসেম্বর আসামিপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।
কে এই বাচ্চু রাজাকার
আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর জেলার সালথা উপজেলার বড়খারদিয়া গ্রামে। ১৯৪৭ সালের ৫ মার্চ তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মৃত আব্দুস সালাম মিয়া। পালিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি রাজধানীর উত্তরার উত্তরখানে বসবাস করছিলেন। আবুল কালাম আজাদ ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজে লেখাপড়া করেছেন। তখন উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র ছাত্রসংঘের ফরিদপুর জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন এই আবুল কালাম আজাদ।
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে ফরিদপুর জেলায় প্রথমে রাজাকার ও পরে আলবদর বাহিনীর প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। এক সময় জামায়াতের রোকন থাকলেও বর্তমানে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা নেই।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, আবুল কালাম আজাদ মাদ্রাসায় লেখাপড়া করার কারণে ভালো উর্দু বলতে পারতেন। এটাকে পুঁজি করে অন্যায়ভাবে লাভবান ও অসৎ কামনা চরিতার্থ করার লক্ষ্যে তিনি এবং পূর্ব পাকিসত্মান ছাত্রসংঘের নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রারম্ভকাল থেকে পাকিসত্মানি সেনা অফিসারদের মন জয় করার জন্য সচেষ্ট হন। ২১ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ফরিদপুর শহরে আসার সময় মুজাহিদ ও বাচ্চু রাজাকার তাদের স্বাগত জানিয়ে নিয়ে আসেন। ওই দিন তাদের উপস্থিতিতে একাত্তরের ২১ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ফরিদপুরে ঢোকে। ওইদিনই তাদের সঙ্গে নিয়ে ফরিদপুরের জগদ্বন্ধু আশ্রমের ৮ পূজারীকে হত্যা করেন আজাদ। পরে খুন করেন কলারন গ্রামের জমিদার সুধাংশু মোহন রায় ও তার ছেলে মনিময় রায়কে। ২৫ মার্চের কালরাতের পর তিনি নিজেই একটি বাহিনী গড়েন, যারা পরে ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটান।
বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ফরিদপুর শহরে মে মাসের প্রথমার্ধে রাজাকার ও পরবর্তীতে আলবদর বাহিনী গড়ে ওঠে। তিনি ছিলেন জেলা আলবদরের কমান্ডার ও রাজাকার কমান্ডার (নেতা)।
বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানি বাহিনীর কাছ থেকে ফরিদপুর পুলিশলাইনে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেন, পাকিস্তানি হানাদারদের কাছ থেকে অস্ত্র পান।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে যতো অভিযোগ
বাচ্চু রাজাকারের অত্যাচারের স্টাইল ছিল বিচিত্র। মুজাহিদের সহযোগিতায় বাচ্চুর ইঙ্গিতে পাকিসত্মানি সেনাবহিনী স্টেডিয়ামের ভেতরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করে স্টেডিয়ামের ভিতরেই মাটি চাপা দিয়েছেন। বহু লাশ নদীতে ও ফরিদপুর শহরে ময়লার গাড়ি নামক স্থানে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এক ফরিদপুর স্টেডিয়াম ও তার আশপাশের এলাকায় ১২০০ গণ কবর রয়েছে বলে দাবি প্রবীণ প্রত্যক্ষদর্শীদের।
এছাড়া বাচ্চু রাজাকার ও তার দল গ্রামের পর গ্রাম লুটপাট করেছেন। মানুষ হত্যা করেছেন। মেয়েদের ধর্ষণ এবং ধরে নিয়ে পকিসত্মানি হানাদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছেন। আগুন লাগিয়ে সংখ্যালঘু হিন্দুদের ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন। দেশে থাকা হিন্দুদের ধর্মানত্মরিত করে নামাজ পড়তেও বাধ্য করেছেন।
ফরিদপুর শহর ছাড়াও বাচ্চু রাজাকারের হাতে তার গ্রামের বাড়ি বড়খারদিয়ার পাশ্ববর্তী হিন্দু গ্রাম ফুলবাড়িয়া, জগনন্দী, উজীরপুর, শ্রীনগর, হাশেমদিয়া ও ময়েনদিয়া মানবতাবিরোধী অপরাধের শিকার হয়। ওই সব গ্রামে হিন্দুদের ঘরবাড়ি ছিল না বললেই চলে। কারণ, সব মালামাল লুটপাট করে পুড়িয়ে দেন বাচ্চু ও তার লোকজন।
সব মিলিয়ে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ১৪ জনকে হত্যা, ৩ নারীকে ধর্ষণ, ৯ জনকে অপহরণ, ১০ জনকে আটক, ৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, ১৫টি বাড়িতে লুটপাট, ৯ জনকে ধর্মানত্মরিত করা, মানুষকে দেশত্যাগে বাধ্য করাসহ অজ্ঞাত অনেক লোকের ওপর চালানো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয় ট্রাইব্যুনালে। এর মধ্যে রয়েছে, ১৯৭১ সালের ৫ মে ভোর ৭টায় বাচ্চু’র নেতৃত্বে একদল রাজাকার ফরিদপুর জেলার সালথা থানার (তখন ছিল নগরকান্দা থানার অধীনে) জয়কালি গ্রামে ঢোকে। গ্রামের নিরীহ মানুষ তার গণহত্যা ও র্নিাতনের শিকার হন।
অভিযোগে বলা হয়, ১৮ মে সালথা থানার উজিরপুর বাজারপাড়া গ্রামের গুরম্ন দাশের বাড়িতে হামলা চালান বাচ্চু ও তার সহযোগী ৭/৮ জন সশস্ত্র রাজাকার। গুরম্ন দাশের মেয়ে অঞ্জলী দাশকে (১৮) অশুভ লালসা চরিতার্থ করার জন্য অপহরণ করে খারদিয়া গ্রামের বাচ্চুর শ্বশুর চান কাজীর বাড়িতে নিয়ে আটক করে নির্যাতন করেন বাচ্চু। ৭/৮ দিন পর বাচ্চু রাজাকারের হেফাজত থেকে অঞ্জলী দাশ মুক্তি পেলেও ওই দিনই বিকেলে বাচ্চুর সহযোগী মোহাম্মদ কাজী তার অন্য একজন অজ্ঞাত সঙ্গীসহ গুরম্ন দাশের বাড়িতে হাজির হন। অঞ্জলীকে তার কাছে তুলে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়।
এরপর অঞ্জলী দাশ ভয়ে ও সম্ভ্রম রক্ষার্থে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে বিষপানে আত্মহত্যা করেন। বাড়িতে কান্নাকাটি শুরম্ন হলে মোহাম্মদ কাজী তার সঙ্গে থাকা লোকজন নিয়ে চলে যায়। এ সংবাদ পেয়ে বাচ্চু রাজাকার কয়েকজন সঙ্গী নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যার পরে গুরু দাশের বড়িতে আসেন। অঞ্জলী দাশের লাশ দ্রুত মাটি চাপা দেওয়ার নির্দেশ দেন। গুরু দাশ কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে বাচ্চু রাজাকারকে দুই হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে অঞ্জলী দাশের লাশ হিন্দু ধর্মমতে দাহ করার অনুমতি নেন।
এ ঘটনার ১০ দিন পর বাচ্চু রাজাকার ১০/১৫ জন সশস্ত্র রাজাকার ও কয়েকজন সহযোগীকে নিয়ে গুরু দাশের বাড়িতে এসে তার বাড়িতে থাকা বড় একটি এল প্যাটার্ন টিনের ঘর ভেঙে চান কাজীর বাড়িতে নিয়ে যান। ওই ঘটনার কয়েক দিন পর গুরম্ন দাশ জীবনের ভয়ে তার পরিবারসহ শরণার্থী হয়ে ভারতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। বাচ্চু রাজাকার ফরিদপুরে কয়েকটি গণহত্যায় নেতৃত্ব দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৭ মে সকাল ৬টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার বাহিনী ৩০/৩২ জন পাকিসত্মানি সেনাসহ বড় নৌকা নিয়ে বোয়ালমারীর হাসামদিয়া হিন্দুপাড়ায প্রবেশ করেন। গ্রামে ঢুকেই শরৎ চন্দ্র পোদ্দার, সুরেশ পোদ্দার, শ্যমাপদ সাহা, যতীন্দ্র মোহন সাহা, নীলরতন সমাদ্দারকে গুলি করে হত্যা করেন। তারা সুবল কয়াল ও মলিস্নক চক্রবর্তীকে গুলি করে হত্যা করেন। এরপর বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে হীরালাল সাহা, সূর্য কুমার, নীল রতন সমাদ্দার, ডা. ননী গোপাল সাহা, অসিত বরণ সাহা, সত্য রঞ্জন সাহা, সুবল সাহা, মাখন লাল সাহা, যতীন্দ্র নাথ সাহা, নারায়ণ চন্দ্র সাহা, কালিপদ সাহা, ডা. মুকুন্দ লাল সাহা ও রাম কানাই বাবুর গুদামঘরসহ ৫০/৬০টি দোকান ও বাড়ি-ঘরে আগুন ধরিয়ে দেন। আগুন দেওয়ার আগে দোকান ও বাড়িগুলো থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করা হয়।
২০ মে বেলা দুইটার সময় বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে বোয়ালমারী থানার তেলজুরি গ্রামে হামলা চালান। সেখানে হাসামদিয়ার ডা. ননী গোপাল সাহা ও তার ভাই সুবল সাহার পরিবারসহ বরকত মৃধার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। বাচ্চু রাজাকার ও তার সহযোগীরা বরকত মৃধার বাড়ি ঘেরাও করে ডা. ননী গোপালের স্ত্রী কনক লতা সাহা, তার ভাই সুবল সহার স্ত্রী অনিমা রানী সাহা তার দুই ভাগনীসহ তাদের সঙ্গে আশ্রয় নেওয়া ছোট ছেলে-মেয়েদের সালথা থানার তার শ্বশুর চান কাজীর বাড়িতে নিয়ে আটক রাখেন। সেখানে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয। বাচ্চু রাজাকার ও তার সহযোগীরা কনক লতা ও অনিমা রানীর স্বর্ণের গয়না জোরপূর্বক রেখে দেন।
ডা. ননী গোপাল সাহার অনুরোধে হাসামদিয়া গ্রামের জনৈক আবুল হোসেন (বর্তমানে মৃত) তদবির করে তিন হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে পরের দিন বিকেলে আটককৃত কনক লতা সাহা, অনিমা সাহাসহ অন্যদের আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার ও তার দলবলের হেফাজত থেকে উদ্ধার করে। এরপর ডা. ননী গোপাল সাহা ও তার ভাই সুবল সাহা পরিবারের লোকজনসহ ভারতে আশ্রয় নেন। দেশ স্বাধীনের পর তারা নিজ বাড়িতে এসে ভিটামাটি ছাড়া আর কিছুই পান নি।
অভিযোগে আরও বলা হয়, বাচ্চু রাজাকার তার কয়েক জন সহযোগীকে নিয়ে বোয়ালমারীর ময়েনদিয়া গ্রামের হরিপদ সাহা, প্রবীর কুমার সাহা ওরফে পুইট্টাকে ময়েনদিয়া বাজারে নদীর ঘাটে নিয়ে যান। সেখানে বাচ্চু রাজাকার নিজে গুলি করে উভয়কে হত্যা করেন। এরপর তাদের লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। বাচ্চু রাজাকার ও পাকিস্তানি সেনারা লুণ্ঠনকৃত মালামাল নিয়ে নৌকাযোগে চলে যায়। ওই গ্রামের বহু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোককে দেশ ত্যাগে বাধ্য করলে তারা জীবন রক্ষার্থে ভারতে আশ্রয় নেন।
অন্যদিকে তার হাতে গনহত্যার শিকার দুলাল মৈত্রসহ জয়কালি গ্রামের সংখ্যলঘু হিন্দু লোকজন জীবনের ভয়ে ঝোপঝাড়ে পালিয়ে থাকতেন। দুলাল মৈত্রের কাকাত ভাই মুকুল মৈত্র পুলিশের হাবিলদার পদে বরিশালে চাকরি করত। পাকিস্তানী আর্মিরা বাঙালীদের ওপর আক্রমণ শুরম্ন করলে মুকুল মৈত্র পালিয়ে চলে আসেন। ১৯৭১ সালের মে মাসের ৫ তারিখ বাচ্চু রাজাকারসহ অস্ত্রধারী ৭/৮ জন পাকিসত্মানি আর্মি সহযোগী সকাল অনুমান সাতটার দিকে জয়কালি গ্রামের দুলাল মৈত্রের বাড়িতে আসে। তার কাকাত ভাই মুকুল মৈত্রকে খোঁজাখুঁজি করে। দুলাল মৈত্রসহ তার বাবা ও চাচাকে আটক করে। এ সময় সুযোগ বুঝে দুলাল মৈত্র দৌড়ে পালায়।
এ সময় বাচ্চু রাজাকার ও তার দলবল দুলাল মৈত্রের বাড়ির অন্য শরিকদের ঘরের টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকার ও বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল লুটপাট করে। উক্ত বাড়িতে থাকা বড় বড় টিনের ঘরসহ একটি পূজা ম-পে আগুন লাগিয়ে ৩০/৩২টি ঘর পুড়িয়ে ফেলে। পাকিসত্মানী আর্মিরা দুলাল মৈত্রের বাড়ির কিছু পিতলের আসবাবপত্র প্রতিবেশী কাদের মাতব্বরের ঘরে ঘটনার পূর্ব থেকেই লুকিয়ে রেখেছিল। অতঃপর বাচ্চু ও তার দলবলসহ কাদের মাতব্বরের বাড়িতে প্রবেশ করে তার ঘরে থাকা পিতলের আসাবাপত্র লুট করে নিয়ে যায়। তাকে বাড়ির উঠানে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাইফেল দিয়ে বুকে আঘাত করে পাজরের হাড় ভেঙ্গে জখম করে চলে যায়।
একই দিন বাচ্চু রাজাকার ও তার দলবল জয়কালি গ্রামের মোহনবাসির বাড়িতে প্রবেশ করে লুটপাট করে। একটি পূজা ম-পসহ ১০/১২টি ঘর জ্বালিয়ে দেয়। বাচ্চু রাজাকার ও তার সহযোগীদের ভয়ে জয়কালি গ্রামের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন ভারতে শরণার্থী হয়। ফরিদপুর জেলার পূর্ব সালথা গ্রামে বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে ৫/৬ জন রাজাকার ৪ মে বলাই বাবুর বাড়িতে প্রবেশ করে। সেখানে ২০ থেকে ২৫ জন হিন্দুকে কাচারি ঘরে আটক করে তাদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করে। এ ছাড়া বাচ্চু রাজাকার হামামদিয়া ও ময়েনদিয়া বাজারে গণহত্যার নেতৃত্ব প্রদান করেন।
অভিযোগপত্র থেকে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের ১৬ মে সকাল ৮টার দিকে বাচ্চু রাজাকারের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী সালথা সাহা পাড়ায় প্রবেশ করে। সেখানে গিয়ে বাচ্চু রাজাকার বলাই বাবুর কাচারি ঘরে ২০ থেকে ২৫ জন হিন্দুকে ধরে নিয়ে আসে। তাদের মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের হুমকি দেয়। বাচ্চু রাজাকার সকলকে একটি করে সাদা টুপি দেয়। কলেমা পড়িয়ে সিদ্ধেশ্বর চন্দ্র সাহা, হরিদাশ পোদ্দার, দুলাল সাহা, অভি সাহা, পজু সাহা, বিনয় সাহা, নন্দ সাহা, বিশু ভুইয়া ও কালিপদ সাহাসহ উপস্থিত সবাইকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করে।
এ ছাড়া বাচ্চু বলাই বাবুর কাচারি ঘরে হিন্দু ছেলেমেয়েদের আরবি পড়তে বাধ্য করে। ১৯৭১ সালের ১৬ মে সকাল ১০টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার সহযোগী ১০/১২ জন রাজাকার নিয়ে পুনরায় বলরাম সাহা ওরফে বলাই বাবুর বাড়িতে এসে লুটপাট করে। তার মেয়ের জামাই খগেন্দ্র নাথ সাহা কর্তৃক রক্ষিত ১১টি কাপড়ের গাইট লুট করে নিয়ে যায়। একই দিন বেলা অনুমান ১১টার দিকে বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে হরেন্দ্র নাথ বকসী ওরফে মন্টু বকসী ও অশ্বিনা ম-লের বসত বাড়িতে প্রবেশ করে। সেখানে বাচ্চু রাজাকার এ বাড়ি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র লুটপাট করে। লুটপাটের পর মন্টু বকসী ও অশ্বিনা মন্ডলের বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, মন্টু বকসী ও অশ্বিনা মন্ডল আওয়ামী লীগ করে। তারা স্বাধীনতার পক্ষের লোক। তাই বাচ্চু রাজাকার তার দলবল নিয়ে তাদের বাড়ি ঘর লুটপাট করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন বিভাগ যে সমসত্ম অভিযোগ এনেছে তার মধ্যে রয়েছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩ ধারা ৩(২) (এ) (সি-আই) (জি) (এইচ) তৎসহ ৪(১) হত্যাজনিত গণহত্যার অপরাধ সংঘটিত করে।ফরিদপুরের সবচেয়ে নামকরা টর্চারসেল ফরিদপুর স্টেডিয়াম ও গ্রামের যে বাড়িতে টর্চার করা হতো তার সঙ্গে সে একত্রে কাজ করত।বাচ্চু রাজাকার পাকবাহিনীর নিকট ফরিদপুর পুলিশ লাইনে অস্ত্র ট্রেনিং নিয়ে পাকিসত্মানি হানাদারদের কাছ থেকে অস্ত্র পান। ফরিদপুর শহরের জসিম উদ্দিন রোডের হীরা লাল মুক্তারের একটি দোতলা বাড়ি দখল করে রাজাকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে। তার ইঙ্গিতে পাকিস্তানী সেনারা স্টেডিয়ামের ভেতরে হাজার হাজার নিরীহ মানুষকে হত্যা করে স্টেডিয়ামের ভেতরে মাটি চাপা দিয়েছে। বহু লাশ নদীতে ও ফরিদপুর শহরের ময়লারগাড়িতে ফেলে দেয়।একাত্তরের ১০ মে হাসামদিয়া গ্রামে প্রবেশ করে হিন্দুপাড়ার মালামাল লুটপাট করে ও ৪০/৫০টি ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে যোগেশ্বর সাহাসহ ৯ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়। একজনকে হাতপা বেঁধে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। উক্ত বাজারে পশ্চিমে পাকিসত্মানী সেনারা সুবল কয়াল ও মলিস্নক ঠাকুর নামে দুই জনকে গুলি করে হত্যা করে। একাত্তরের ১৬ মে বাচ্চু রাজাকার তার শ্যালক মোহাম্মদ কাজীসহ অজ্ঞাত ১০/১২ জন রাজাকার দুপুর ১২টার দিকে মধ্য সালিথা (সাবেক নগরকান্দা) থানাধীন পূর্ব সালথা গ্রামের মন্টু বকশী ও অশ্বিন্যা ম-লের বাড়ি টাকাপয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট করে নেয়। পুরম্নরা গ্রামের বিশ্বাস বাড়িতে আক্রমণ চালিয়ে মাধব বিশ্বাসকে অপহরণ করে। বাচ্চু রাজাকার নিজে গুলি করে সুধাংশু মোহনকে হত্যা করে। গুলিতে সেদিন মনিময় রায় কেষ্ট আহত হয়।মে মাসের শেষ সপ্তাহে বাচ্চু রাজাকার তার সঙ্গীসহ বোয়ালমারী থানার ডহরনগর গ্রামের জীবন চক্রবর্তীর বাড়ি থেকে অপহরণ করে পার্শ্ববর্তী রূপাপাত বাজারে বটগাছের নিচে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করে। ৮ জুন বেলা ১২টা থেকে ২টার মধ্যে বাচ্চু রাজাকার বিভাগদী গ্রামের কাশেম মুন্সি রাজাকারসহ ১৪/১৫ জন অস্ত্রধারী রাজাকার বোয়ালমারী নতিবদিয়া গ্রামের সুধীর বিশ্বাসের বাড়িতে হামলা করে স্বর্ণালঙ্কার লুটপাটসহ ২ নারীকে ধরে নিয়ে যায়। পরে বাচ্চু রাজাকার ও তার সঙ্গীরা পালাক্রমে ধর্ষণ করেন।৮ আগস্ট বিকেল ৫টায় ফরিদপুর চকবাজার মসজিদের সামনে থেকে বাচ্চু রাজাকার কবির আহম্মেদ মঞ্জুরকে ধরে নিয়ে পাকিসত্মান আর্মিদের কাছে সোপর্দ করে। ২১ আগস্ট ফরিদপুর টু বরিশাল সড়কের হারম্নকান্দিতে (কৈজুরী) নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। ‘ফরিদপুর শহরে ১২টি বধ্যভূমিতে যে হাজার হাজার মানুষ শায়িত আছেন, তাদের হত্যার নির্দেশদাতা এবং নিজেও সরাসরি হত্যাকারী আবুল কালাম আজাদ। তিনি নিজে গুলি করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছেন। হত্যা করে ফরিদপুর স্টেডিয়ামে মাটিচাপা দিয়েছেন, নদীতে ফেলে দিয়েছেন, শহরের বিভিন্ন স্থানে মাটিচাপা দিয়েছেন।