Categories: সাধারণ

পদ্মা সেতু ॥ চীন আবারও সুদমুক্ত ঋণের প্রস্তাব দিল

দি ঢাকা টাইমস্‌ ডেস্ক ॥ পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিনা সুদে ১৯৫ কোটি ডলার অর্থায়নের প্রস্তাবটি দ্বিতীয়বারের মতো সরকারের কাছে পাঠিয়েছে চীনের সরকারি প্রতিষ্ঠান স্পেয়ার এনার্জি ক্রিয়েশন্স বেইজিং লিমিটেড (এসইসিএ), চুক্তি স্বাক্ষরের তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরু করে তিন বছরেই এ সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। সেতু নির্মাণের পর থেকে পরবর্তী ২০ বছরে বাংলাদেশ এ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। সেতু তৈরির সব উপকরণ আসবে চীন থেকে। খবর অনলাইন পত্রিকা সূত্রের।

এসইসিএর নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন চং গত ২ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ই-মেইলে লোভনীয় এ প্রস্তাবটি পাঠান। এর আগে গত বছরের ১২ জুলাই পদ্মা সেতু প্রকল্পে প্রস্তাবটি প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সরকারকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দরকষাকষি করায় ওই সময় এটি নিয়ে কোনো ধরনের চিন্তাভাবনা করেনি সরকার। ওই সময় প্রস্তাবটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ৩১ জানুয়ারি সরকার বিশ্বব্যাংকের ঋণ লাগবে না জানিয়ে চিঠি দেওয়ার দুই দিন পর চীনের ওই প্রতিষ্ঠান তাদের প্রস্তাবটি আবারও পাঠায়।

সেতু নির্মাণের পর টোল আদায় এবং সেতু পরিচালনার সঙ্গে এসইসিএ কোনোভাবেই যুক্ত থাকবে না। সেতুর নকশা পরিবর্তন বা সংশোধনের প্রয়োজন হলে চীনের সরকারি স্থাপত্য ও নকশা প্রণয়ন ব্যুরো চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কম্পানিকে (সিসিসিসি) দিয়ে তা করানো হবে। স্থাপত্য ও নকশা প্রণয়নে সিসিসিসি বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। সরকারের যদি নিজস্ব কোনো নকশা থাকে, তাহলে সে নকশার আলোকেও সেতু নির্মাণে প্রস্তুত তারা। প্রস্তাবনায় মোট ৯টি বিষয় উলেস্নখ করা হয়েছে।

এসইসিএর তিন পাতার প্রস্তাবনার কপিটি পর্যালোচনার জন্য সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি), প্রস্তাবের ওপর মতামত জানতে ১০ ফেব্রুয়ারি সেতু বিভাগের সচিব খোন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে কপিটি পাঠিয়েছে ইআরডি। সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক এস এম নুরুল হকের কাছেও মতামত চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ইআরডি। প্রস্তাবের আরেক কপি পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কাউন্সিলর ওয়াং জিজিয়ামের কাছে। তাঁর কাছেও মতামত চাওয়া হয়েছে। তাঁর কাছে এসইসিএর অভিজ্ঞতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অন্য যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কনসোর্টিয়াম গঠনের কথা বলা হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে ইআরডি।

প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, ছয়টি সংস্থার সমন্বিতভাবে কনসোর্টিয়াম গঠন করে পদ্মা সেতু প্রকল্পটি নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পে ১৯৫ কোটি ডলার সংগ্রহ করা হবে চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (সিডিবি) থেকে। এটি সরকারি মালিকানাধীন চীনের সর্ববৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়নসংক্রান্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) এবং এসইসিএর যৌথভাবে গঠিত অ্যাকাউন্টে এই ১৯৫ কোটি ডলার স্থানান্তর করবে সিডিবি। এসইসিএসহ কনসোর্টিয়ামের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কম্পানি (সিসিসিসি), চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি লিমিটেড (সিএইচইসি), গোয়াংদং চাংদা হাইওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কম্পানি লিমিটেড এবং ইনফ্রাসট্রাকচার ইনস্টিটিউট।

প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, সেতু নির্মাণ সঠিক হয়েছে কি না বা সেতুতে কোনো ত্রুটি রয়েছে কি না, তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ একটি আন্তর্জাতিক স্বাধীন স্বতন্ত্র পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে পারবে। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে টাকা পরিশোধের আগেই এ পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করা যাবে। এ পরিবীক্ষণ ও পরিদর্শন খাতের ব্যয় বিবিএকে পরিশোধ করতে হবে। আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তি সইয়ের পর তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে বলে স্টিফেন চং চিঠিতে উলেস্নখ করেন।

এসইসিএর নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন চং প্রস্তাবে উলেস্নখ করেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করে গত বছরের ১২ এপ্রিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগে প্রথম চিঠি দেওয়া হয়েছিল। যোগাযোগ মন্ত্রণালয় ও সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছিল ওই সময়। গত বছরের ১২ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের প্রস্তাবটি দেওয়া হয়েছিল। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর চীনের বেইজিংয়ে আরেকটি বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। ওই বৈঠকে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত, ইআরডি এবং কনসোর্টিয়ামের ছয় প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

Related Post

প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, সেতু নির্মাণের পর থেকে ২০ বছরে বাংলাদেশ এ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। এ ছাড়া প্রতি মাসে আট মিলিয়ন ডলার করে পরিশোধ করতে পারবে। এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের যদি কোনো বিষয় জানার থাকে তাহলে স্টিফেন চংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রস্তাবনার শেষ ভাগে। ২০১২ সালের ১২ জুলাইয়ের ডলার মূল্য ও চাহিদার আলোকে এসইসিএ এ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় নির্ধারণ করেছে ২৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সংস্থাটি দেবে ১৯৫ কোটি ডলার। বাকি ৮৪ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারকে বহন করতে হবে। সেতু নির্মাণের পর তা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

This post was last modified on ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১৩ 4:52 অপরাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

চট্টগ্রামের একটি নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। রবিবার, ৫ মে ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ২২ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

সঠিক নিয়ম মানলে আম খেয়ে পেটের কোনো সমস্যা হবে না

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ পরিমাণে একটু বেশি আম খেলেই গ্যাসের মতো সমস্যা হয় অনেকের।…

% দিন আগে

বাংলা ভাষার প্রথম স্মার্টওয়াচ এবার বাজারে এলো

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বাজারে এলো বাংলা ভাষার স্মার্টওয়াচ। দেশীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আজওয়া টেকের…

% দিন আগে

আবারও অনিরুদ্ধর সিনেমায় অভিনয় করবেন জয়া

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিউডের বহুল আলোচিত সিনেমা ‘পিংক’ এর নির্মাতা অনিরুদ্ধ রায় চৌধুরীর…

% দিন আগে

হামাসকে সাত দিনের সময় দিলো ইসরায়েল!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জিম্মি চুক্তিতে রাজি হতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে মাত্র সাত…

% দিন আগে

আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ কিন্তু নয়: মরুভূমিতে খুঁজতে হবে এক সাহেবী কেতার ল্যাম্পশড!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ এবারের ছবিটি একটু ভিন্ন ধরনের এই ছবির ভিতরে লুকিয়ে চুরিয়ে…

% দিন আগে