দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জাতিসংঘ জনসংখ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে বাংলাদেশের তিনজনের দুজনই উপার্জন করে। বাংলাদেশে ১০ হতে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৬ লাখ।
ঈশ্বরদী ইপিজেডে একটি পোশাক কারখানায় কর্মরত শ্রমিক
জাতিসংঘ জনসংখ্যা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে বাংলাদেশের তিনজনের দুজনই উপার্জন করে। বাংলাদেশে ১০ হতে ২৪ বছর বয়সী তরুণের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৬ লাখ। আর এরা হচ্ছে মোট জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ। বর্তমানে বিশ্বে তরুণ-তরুণীর সংখ্যা ১৮০ কোটি। এসব তরুণরাই বিশ্বের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এবং নেতৃত্বও দেবে।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা প্রতিবেদন-২০১৪-এ এইসব তথ্য দেয়া হয়েছে। তথ্যে বলা হয়েছে, তাদের সহজাত অধিকার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বিশ্বব্যাপী তরুণদের নিয়ে সম্ভাবনার কথা বলা হলেও কার্যক্ষেত্রে তাদের একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এই অবস্থার পরিবর্তন প্রয়োজন। তানাহলে যুবসমাজ বিপথগ্রস্ত হবে, অর্থনীতিকে করবে বাধাগ্রস্ত।
ঈশ্বরদী ইপিজেডে একটি প্লাস্টিক কারখানায় কর্মরত শ্রমিক
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ‘জাতিসংঘ জনসংখ্যা প্রতিবেদন ২০১৪’ প্রকাশ করে। বার্ষিক এই প্রতিবেদনের এ বছরের প্রতিপাদ্য ছিল: ‘১৮০ কোটি কিশোর-কিশোরী, যুব জনগোষ্ঠীর শক্তি এবং ভবিষ্যতের রূপান্তর’।
বাংলাদেশের জনসংখ্যাকাঠামোতে এমন পরিবর্তন এসেছে, যা অর্থনৈতিক উন্নতির সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করেছে এমন কথা উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনসংখ্যা গবেষণা প্রতিষ্ঠান পপুলেশন কাউন্সিলের এদেশি পরিচালক ও জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ ওবায়দুর রব প্রতিবেদনের মূল বিষয়বস্তু এবং বাংলাদেশ পরিস্থিতি উপস্থাপন করে বলেন, জনসংখ্যা বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদেরা একে ‘পপুলেশন ডিভিডেন্ড’ বলছেন। এ পরিস্থিতিতে কাজ করা মানুষের সংখ্যা কাজ না-করা মানুষের চেয়ে বেশি থাকে। বাংলাদেশে এখন অন্যের উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। প্রতি ৩ জন মানুষের ২ জনই উপার্জন করে। এই অবস্থা আরও ৩০ বছর চলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ওবায়দুর রব আরও বলেন, এই সময়ে যদি যুব জনগোষ্ঠীর জন্য মানসম্পন্ন বিনিয়োগ না করা হয় তাহলে ‘পপুলেশন ডিভিডেন্ড’ হতে বাংলাদেশ খুব বেশি লাভবান হতে পারবে না।
এবারের প্রতিবেদন অনুযায়ী বলা হয়েছে:
তরুণ জনসংখ্যা সবচেয়ে বেশি ভারতে ৩৫ কোটি ৬০ লাখ
এরপর চীনে ২৬ কোটি ৯০ লাখ
অন্য দেশগুলোতে ১০ হতে ২৪ বছর বয়সী জনসংখ্যা বেশি, তার মধ্যে রয়েছে:
ইন্দোনেশিয়া ৬ কোটি ৭০ লাখ
যুক্তরাষ্ট্র ৬ কোটি ৫০ লাখ
পাকিস্তান ৫ কোটি ৯০ লাখ
এর পরই আছে বাংলাদেশ ৪ কোটি ৭৬ লাখ।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ে বেশ কিছু তথ্য দেওয়া হয়েছে:
বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন ১৫ কোটি ৮৫ লাখ
পুরুষের গড় আয়ু ৭০ বছর
নারীর গড় আয়ু পুরুষের চেয়ে এক বছর বেশি
অন্যদিকে দেশে এখন মোট প্রজনন হার (টোটাল ফার্টিলিটি রেট) ২ দশমিক ২
বাংলাদেশে ৩১ শতাংশ প্রসবে প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা মেলে
প্রতি লাখ জীবিত জন্মে ১৭০ জন মায়ের মৃত্যু হয়
১৫-৪৯ বছর বয়সী ৬৩ শতাংশ নারী জন্মনিয়ন্ত্রণের কোনো না কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন।
এই প্রতিবেদনে যুব জনগোষ্ঠীর জন্য বিনিয়োগের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বৃদ্ধি, মানবসম্পদ উন্নয়ন, কাজের সুযোগ বাড়ে এমন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থায় ও মানবাধিকার সুরক্ষায় বিনিয়োগ আরও বাড়াতে হবে।
ইউএনএফপিএর প্রতিনিধি আর্জেন্টিনা মাতাভেল বলেন, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জনসংখ্যাবিষয়ক আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ভূমি খুবই অল্প, কিন্তু জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের সাফল্য অসাধারণ। তবে সাফল্যের পরও প্রতিবছর অন্তত ২০ লাখ মানুষ জনসংখ্যার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। তরুণ এবং যুব জনগোষ্ঠী আকারে অনেক বড়। এদের জন্য কী ধরনের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেটিই এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
শিক্ষার গুরুত্বদিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তরুণদের জন্য শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তরুণরা যে দক্ষতা এবং জ্ঞান অর্জন করবে, তা বর্তমান অর্থনীতির সঙ্গে অবশ্যই সঙ্গতিপূর্ণ বা প্রাসঙ্গিক হতে হবে। শিক্ষা যেনো তাদের উদ্ভাবক, চিন্তাবিদ বা সমস্যা সমাধানকারী হতে সক্ষম করে তোলে, সে বিষয়ে জোর দিতে হবে বেশি। বক্তারা মনে করেন সবদিক থেকেই বাংলাদেশের সম্ভাবনা রয়েছে এবং সেটি কাজে লাগানোর ওপর তারা গুরুত্ব আরোপ করেন।