দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রোপার্টি কোম্পানিগুলোকে জমি দেওয়ার সময় বা ফ্ল্যাট কেনার আগে বেশ কিছু আইনি বিষয় রয়েছে যেগুলো জানা একান্ত প্রয়োজন। আজ সে বিষয়গুলো নিয়েই আলোচনা করা হবে।
জমি কিনে বাড়ি করা অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে। একদিকে জমির আকাশ ছোয়া মূল্য, অন্যদিকে চাহিদামতো জমি পাওয়া সহজ নয়। এমন এক পরিস্থিতিতে এখন অনেকেই ঝুঁকে পড়ছেন ফ্ল্যাটের দিকে। অনেক ডেভেলপার কোম্পানি বিশাল বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করে সেগুলো আবার বিক্রিও করছে। যে কারণে ঝামেলায় না গিয়ে অনেকের ঢাকাতে স্থায়ী মাথা গোজার স্থান করে নিশ্চিন্ত হচ্ছেন ফ্ল্যাট কিনে।
তবে এই ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও রয়েছে নানা ধরনের ঝুক্কি-ঝামেলা। যেমন: প্রতারিত হওয়া, যথা সময়ে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে না দেওয়াসহ নানা ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেনার আগে একটু সতর্কতা অবলম্বন করলে, অনায়াসে এই ধরনের ঝামেলা এড়ানো সম্ভব। আর অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে কেও যদি এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়েন তাহলে আপনি রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন এবং ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০-এর সাহায্য নিতে পারেন।
ক্রেতা হিসেবে এই আইনে আপনি যেসব সুবিধা পেতে পারেন:
# এই আইনে বলা হয়েছে যে, চুক্তিতে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
# যেসব উপকরণ ব্যবহার করা হবে চুক্তিতে অবশ্যই তার বিবরণ থাকতে হবে। প্রণীত অনুমোদিত নকশাও আবাসন নির্মাতা ক্রেতাকে দিতে বাধ্য থাকবেন।
# চুক্তির ভিত্তিতেই পছন্দসই ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেবেন। আবার আপনার বিনা অনুমতিতে বরাদ্দ করা প্লট বা ফ্ল্যাট পরিবর্তন করতে পারবেন না।
# চুক্তিতে উল্লিখিত শর্তের বাইরে অতিরিক্ত কোনো অর্থ দিতে ক্রেতা বাধ্য থাকবেন না। যদি কোনো উন্নতমানের সরঞ্জাম সংযোজনের দরকার হয়, তাহলে দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিক্রমে অতিরিক্ত অর্থ দেওয়া যেতে পারে।
# সমুদয় মূল্য পরিশোধের ৩ মাসের মধ্যে আবাসন নির্মাতা দখল হস্তান্তর, দলিল সম্পাদন এবং নিবন্ধনের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করে দেবেন। হস্তান্তরকালে আয়তন কমবেশি হলে তার মূল্য ক্রয়মূল্য অনুযায়ী ৩ মাসের মধ্যে সমন্বয় করতে হবে।
# আবাসনের মূল্য শুধুমাত্র ব্যাংকের মাধ্যমে এককালীন বা কিস্তিতে পরিশোধ করা যাবে। কোনো ক্রেতা এককালীন অথবা কিস্তিতে মূল্য পরিশোধে ব্যর্থ হলে আবাসন নির্মাতা ৬০ দিন আগে নোটিশ দিয়ে বরাদ্দ বাতিল করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে তিনি জমা করা অর্থ পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে চেকের মাধ্যমে ক্রেতাকে একসঙ্গে ফেরত দিতে বাধ্য থাকবেন। আবার আপনি বিলম্বিত সময়ের জন্য কিস্তির অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করে কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন। তবে এটি ৩ বারের বেশি করতে পারবেন না।
# আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তরে ব্যর্থ হলে চুক্তিতে নির্ধারিত ক্ষতিপূরণসহ সব অর্থ ক্রেতাকে ৬ মাসের মধ্যে ফেরত দিতে হবে। চুক্তিতে ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ না থাকলে তা পরিশোধিত অর্থের ওপর ১৫ শতাংশ হারে নির্ধারিত হবে।
# কোনো কারণে বরাদ্দ বাতিল করতে চাইলে আবাসন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পরিশোধিত অর্থের ১০ শতাংশ বাদ দিয়ে বাকি অর্থ ৩ মাসের মধ্যে এককালীন চেক অথবা পে-অর্ডারের মাধ্যমে ফেরত দিতে হবে।
ডাউন পেমেন্ট দেওয়ার আগে করণীয়:
# জমির দলিল সঠিক কিনা তা ভালো করে যাচাই করে নিতে হবে।
# ডেভেলপার কোম্পানির সরকারি অনুমোদন আছে কি না তা দেখে নিতে হবে।
# রাজউক কর্তৃক অনুমোদিত প্ল্যানের কপি আছে কিনা তা দেখতে হবে।
# ডেভেলপার কোম্পানি রিহাবের সদস্য কি না তাও যাচাই করে নিতে হবে।
# ফ্ল্যাট বরাদ্দের নির্ধারিত সময় এবং সব শর্ত ভালো করে বুঝে নিতে হবে।
শেষ কিস্তির সময় করণীয়:
# কিস্তি যখন শেষ হবে তখন এক মাসের মধ্যে ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন দলিল বুঝে নিন।
# তবে যদি কোনো কারণে কিস্তির টাকা পরিশোধে বিলম্ব হয় তাহলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলুন।
আইনের সাহায্য নিবেন যেভাবে:
চুক্তি অনুযায়ী আপনার বুকিংকৃত ফ্ল্যাটটি সময় মতো না হলে অথবা চুক্তিতে যে নির্মাণ উপকরণ ব্যবহারের কথা উল্লেখ ছিল তা না করলে, নকশা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে ওই কোম্পানিটি যদি চুক্তিপত্র ভঙ্গ করে তাহলে নিজেদের মধ্যে সমাধান না হলে বিষয়টি সালিস আইন ২০০১ মোতাবেক সালিসি ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। তখন সালিসি ট্রাইব্যুনাল বিষয়টি নিষ্পত্তি করবে। ৩০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষ যদি ট্রাইব্যুনাল গঠনে ব্যর্থ হন তাহলে যেকোনো পক্ষ বিবদমান বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য উপযুক্ত আদালতে মামলাও করতে পারবেন। এই আইনের অধীনে অপরাধগুলো প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট বা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক বিচার্য বিষয়। বিচারের সময় ফৌজদারি কার্যবিধি অনুসারে সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করবেন আদালত। এই আইনের বিধিবিধান লঙ্ঘন করলে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
ফ্ল্যাট কেনার সময় উপরোক্ত বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে বুঝে তবেই ফ্ল্যাটের বুকিং দিন। তারপরও যদি সমস্যার সৃষ্টি হয় সেক্ষেত্রে আইনের সহায়তা নিন। মনে রাখবেন কোন কাজ করার আগে বারংবার বুঝে-শুনে তবেই সিদ্ধান্ত নিন। কারণ হুমচিক্যাল কোনো সিদ্ধান্ত সঠিক নাও হতে পারে।