দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে ডাকা বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ব্যাপক নাশকতার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। গতকাল দুপুরের পর থেকে রাজধানীতে অন্তত ২১ গাড়ি পোড়ানো হয়েছে। আজ রাজধানীর পল্লবীতে হাতবোমা নিক্ষেপ করেছে পিকেটাররা। এছাড়া গাবতলী ও শ্যামলীতে গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে।
সকাল ৭টার দিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের নেতাকর্মীরা অবস্থান নিয়েছেন। কার্যালয়ের সামনে রয়েছে পুলিশ ও র্যাবের কড়া নিরাপত্তা।
এদিকে পান্থপথে মিছিল করেছে শিবির। তবে পুলিশ আসার আগেই তারা পালিয়ে যায়। এছাড়া রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও অলিগলিতে পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহাড়ায় রয়েছে। পাশাপাশি টহল দিচ্ছে র্যাব ও পুলিশের ভ্রাম্যমান গাড়ি। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান চলাচল বাড়ছে। এ সব যানবাহনের মধ্যে বাসের সংখ্যাই বেশি।
গতকাল ব্যাপক সহিংসতা
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টা হরতাল শুরুর আগের দিন গতকাল রোববার দুপুরের পর রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ২১টি গাড়িতে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। রাজধানীর পল্টন, মালিবাগ, মতিঝিল, ফার্মগেট, কল্যাণপুর, কারওয়ান বাজার, কাকরাইল, মিরপুর ১১ নম্বর, সেগুনবাগিচা, খিলগাঁও, কাপ্তানবাজার ও বাড্ডায় ১১টি বাস, একটি সিএনজি ও একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেয়া হয়। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিড়্গিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
নগরীর বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে আগুন ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। রাসত্মায় যানবাহন সংকটে দুর্ভোগে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। প্রধান প্রধান সড়ক ও গলিমুখে র্যাব-পুলিশের কড়া নজরদারির মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয় সর্বত্র। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। হরতালে যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে পুলিশ-র্যাব ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সন্ধ্যায় রাসত্মায় নেমেছে বিজিবি। গুরম্নত্বপূর্ণ সড়কে বাড়ানো হয় পুলিশের টহল। পুলিশের সাঁজোয়া যান এপিসি নিয়ে টহল জোরদার করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল বেলা পৌনে একটার দিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের পাশে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ফটকের কাছে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। নিউ ভিশন পরিবহনের বাসটি মতিঝিল থেকে মিরপুরের দিকে যাচ্ছিল।
১০-১২ জন তরম্নণ হাতে ক্রিকেট খেলার ব্যাট ও স্ট্যাম্প নিয়ে বাসটি থামানোর সংকেত দেয়। চালক বাসটি থামালে তারা তাতে ভাঙচুর করে। একপর্যায়ে তারা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে আগুন নেভান। তবে বাসের ভেতরের অংশ একেবারে পুড়ে গেছে।
এদিকে বেলা দুইটার দিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পৌঁছানোর আগেই আগুন নিভিয়ে ফেলে স্থানীয় লোকজন।
অপরদিকে বেলা দুইটা পাঁচ মিনিটের দিকে ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের কাছে ৬ নম্বরের একটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। বেলা দেড়টার দিকে মালিবাগের মৌচাক মার্কেটের সামনে বলাকা পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। তবে বাস দুটির বেশিরভাগ অংশ পুড়ে গেছে।
রাজধানীর কল্যাণপুরে খালেক পাম্পের সামনে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সংগ্রাম পরিবহন নামের একটি দূরপালস্নার বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় হরতাল সমর্থকরা। বাসটি ঘটনাস্থলে থেমে ছিল। এতে কোনো যাত্রী ছিল না। হেলপার বাসের ভেতরে ঘুমাচ্ছিলেন।
বিকেল পাঁচটার দিকে কারওয়ান বাজারে বিকল্প পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গাড়ির স্টাফ মোমেন জানান, গাড়িটিতে যান্ত্রিক ত্রম্নটি থাকায় তা সারানো হচ্ছিল। হঠাৎ কে বা কারা বাসের পেছন থেকে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে প্রথম আলোর নিরাপত্তা কর্মীরা নিজেদের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার সহায়তায় আগুন নেভান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর দেড়টার দিকে মালিবাগ ও কাপ্তানবাজারে যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিসংযোগ করে হরতাল সমর্থকরা। কাপ্তান বাজারে ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ রুটের বাসটি দাঁড়িয়ে ছিল। দুর্বৃত্তরা আকস্মিকভাবে এতে আগুন দেয়। মালিবাগের বাসটি রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহন করছিল।
বিকেলে সাড়ে ৩টায় কাকরাইল মসজিদের সামনে ৩ নম্বর বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে হরতাল সমর্থকরা। দুজন হরতাল সমর্থক হোন্ডাযোগে এসে বাসটিতে আগুন দিয়ে দ্রম্নত পালিয়ে যায়। এ সময় কাকরাইল মসজিদের মুসলিস্নরা মসজিদ থেকে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। পরে দমকল বাহিনীর সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ফকিরাপুল মোড়ে টায়ারে আগুন দিয়ে রাসত্মা বন্ধ করার চেষ্টাকালে ৩ হরতাল সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ। বিকেল সাড়ে ৪টায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের সামনে মিডলাইন পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে হরতাল সমর্থকরা। হঠাৎ কয়েক যুবক বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় তাড়াহুড়ো করে যাত্রীরা বাস থেকে নেমে যায়।
বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ের সামনে একটি সিএনজি ক্যাবে আগুন দেয় হরতাল সমর্থকরা। এ সময় একজনকে আটক করে পুলিশ। সন্ধ্যা ৬টার কিছু আগে মিরপুর ১১নং সেকশনে মিরপুর থেকে আজিমপুরগামী যাত্রীবাহী সেফটি পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। হরতাল সমর্থকদের দেয়া এ আগুনে পুড়ে যায় যানবাহনটি।
সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে মেরম্নল বাড্ডায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বাড্ডা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন জানান, তিনটি মোটরসাইকেলযোগে ছয় যুবক বাসটিতে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। গুলশান ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। একই সময় মতিঝিল মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে একটি বাসে আগুন দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ইতিহাসে কোন হরতালের আগের দিন এতো গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা মনে হয় আর কখনও ঘটেনি।
This post was last modified on মার্চ ১৮, ২০১৩ 3:01 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দেন…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে গত ৩১ বছর ধরে চলা ‘গোল্ডেন আউল’ বিতর্কের অবসান…