দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শপথ নিলেন রাষ্ট্রপতিরাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। তিনি সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনে সকল রাজনৈতিক দলসহ দেশবাসীর সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করেছেন। গতকাল ২৪ এপ্রিল বঙ্গভবনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে শপথ গ্রহণের পর সাংবাদিকদের কাছে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমি ন্যায় নীতির মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করবো।
শপথ অনুষ্ঠানে তিনি আরও বলেন, দেশে যে পরিস্থিতি আসুক না কেন নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে সেসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। রাষ্ট্রপতি বলেন, স্পিকার হিসেবেও যেমন নিরপেক্ষ ছিলাম, রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমি এখন আর কোন দলের নই। আমি সব মানুষের। এ পদে আমার ওপর অর্পিত সব দায়িত্ব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পালন করতে চাই।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, নির্বাচনসহ নানা ইস্যু তো সামনে আছে; কিন্তু মাত্র শপথ নিলাম। আগে থেকেই তো সব কিছু ঠিক করে আসিনি। আমাকে ভেবে-চিন্তে সব কিছুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এদিকে বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, হাওর এলাকার অবিসংবাদিত নেতা আবদুল হামিদ এডভোকেট দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিয়েছেন। গতকাল ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। ভারপ্রাপ্ত স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী রাষ্ট্রপতিকে শপথ বাক্য পাঠ করান। মাত্র ১০ মিনিট স্থায়ী এই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভুঁইয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, ওবায়দুল কাদের, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, গণফোরামের ড. কামাল হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, মাইনুদ্দীন খান বাদল, সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, সংসদ সদস্যগণ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, চার নির্বাচন কমিশনার, তিন বাহিনীর প্রধান, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদকরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, পদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রপতির সংক্ষিপ্ত জীবনী
১৯৪৪ সালের ১ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জের মিঠামাইন উপজেলার কামালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল হামিদ। হাজি মো. তায়েব উদ্দিন ও তমিজা বেগমের সন্তান আবদুল হামিদের শিক্ষাজীবন শুরু কামালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত ভৈরব কেবি স্কুল এবং নিকলী জেসি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, গুরুদয়াল কলেজ থেকে মানবিকে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্মাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৫৯ সালে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় তাঁর। ১৯৬১ সালে কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই যোগ দেন আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে। এক পর্যায়ে তাঁকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারেও যেতে হয়।
গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) ও সহ-সভাপতির (ভিপি) দায়িত্ব পালনের পর ১৯৬৪ সালে কিশোরগঞ্জ সাফ ডিভিশনের ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব নেন আবদুল হামিদ। ঢাকাল সেন্ট্রাল ল’ কলেজ থেকে এলএলবি পাস করার পর কিশোরগঞ্জ বারে আইন পেশায় যোগ দেন তিনি। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পাঁচবার জেলা বার সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
১৯৬৬-৬৭ সালে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। এরপর ১৯৬৯ সালে যোগ দেন আওয়ামী লীগে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১৮ আসন থেকে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সর্বকনিষ্ঠ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুল হামিদ। এরপর দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তাতে যোগ দেন তিনি। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতের মেঘালয় রিক্রুটিং ক্যাম্পের চেয়ারম্যান এবং তৎকালীন সুনামগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (মুজিব বাহিনী) সাব-সেক্টর কমান্ডার পদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে চলতি বছর আবদুল হামিদকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করা হয়।
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ অনুষ্ঠিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালে তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হন এবং ১৯৭৮ থেকে ২০০৯ এর ২৫ জানুয়ারি স্পিকার নির্বাচিত হবার পূর্ব পর্যন্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন বিএনপি সরকারের সময় দীর্ঘদিন কারাভোগ করতে হয় আবদুল হামিদকে। এরপর ১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন কিশোরগঞ্জের তুমুল জনপ্রিয় নেতা আবদুল হামিদ।
আবদুল হামিদ সপ্তম জাতীয় সংসদে ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১৩ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১০ জুলাই ২০০১ পর্যন্ত এ পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে তিনি স্পিকার নির্বাচিত হন এবং ১১ জুলাই ২০০১ থেকে ২৮ অক্টোবর ২০০১ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ৮ম জাতীয় সংসদে তিনি ২০০১ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬ পর্যন্ত বিরোধী দলীয় উপনেতারও দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবদুল হামিদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি সর্বসম্মতিক্রমে দ্বিতীয়বারের মত স্পিকার নির্বাচিত হন।
একজন সমাজ সেবক ও শিক্ষা-সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক হিসেবে স্বনামখ্যাত আবদুল হামিদ তাঁর নির্বাচনী এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা। জেলার সর্বত্র রয়েছে তাঁর উন্নয়নমূলক অনেক কর্মকাণ্ড। এছাড়া তিনি কিশোরগঞ্জ প্রেসক্লাবের সম্মানিত সদস্য।