দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ১ কোটি ৬০ লাখ ডলার ক্ষতিপূরণের শর্তে বিশ্বেজুড়ে তুমুল জনপ্রিয় কোমলপানীয় কোকাকোলার বাজারজাতের স্বত্ব ছাড়তে রাজি হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট। বাজারজাতের স্বত্ব নিয়ে কোমলপানীয় উৎপাদনকারী মার্কিন কোম্পানি কোকাকোলা ফারইস্ট ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠান তাবানি বেভারেজের মধ্যকার বিরোধ নিষ্পন্ন হয়েছে। কোকাকোলা বাংলাদেশে তাদের নিজদের প্লান্ট স্থাপন করবে। যার ফলে কোকাকোলা বাংলাদেশে ৫ কোটি ডলার বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে।
১৯৬৫ সালে তাবানি বেভারেজের সঙ্গে একটি চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশে (তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তান) ব্যবসা শুরু করে বিশ্বখ্যাত কোমল পানীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কোকাকোলা। স্বাধীনতার পর তাবানি বেভারেজ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় আসে। ২০০৮ সালে পুরনো যন্ত্রপাতি, অদক্ষ ব্যবস্থাপনাসহ নানা অজুহাতে তাবানির সঙ্গে ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় কোকাকোলা। পাশাপাশি বাংলাদেশে নিজস্ব প্লান্ট স্থাপনে ৫ কোটি ডলার বিনিয়োগের ঘোষণাও দেয় প্রতিষ্ঠানটি।
এ ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ব্যবসায়িক শর্ত লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে মামলা করে কোকাকোলার নামে। সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সম্পূর্ণ বিষয়টি নিয়ে গত ৪ এপ্রিল এক আদেশে বলেন বিষয়টি আদালতের বাইরে উভয় পক্ষ নিষ্পত্তি বা সমাধানে আসতে পারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোকাকোলা ও তাবানির মধ্যকার বিরোধ নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন— বিনিয়োগ বোর্ডের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. এমএ সামাদ ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম। এ কমিটি স্বত্ব ছাড়ার বিনিময়ে কোকাকোলার কাছে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বাজারজাতস্বত্ব ছেড়ে দিতে ক্ষতিপূরণ দাবি করে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট বাজারজাতের স্বত্ব ছাড়তে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করলেও কোকাকোলা প্রথমে মাত্র ৪৫ লাখ ডলার দেয়ার প্রস্তাব করে। দীর্ঘ সময় ধরে দর কষাকষির পর গত মাসের শুরুর দিকে কোকাকোলা ক্ষতিপূরণ বাবদ ১ কোটি ২০ লাখ ডলার দিতে চায়। অবশেষে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট ১ কোটি ৬০ লাখ ডলারে বাজারজাতস্বত্ব ছাড়তে সম্মত হয়। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজুল ইসলাম বলেন, “এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি অনুমোদন দিলে কোকাকোলার বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট।“
বাজারজাতের স্বত্ব পেতে তাবানি বেভারেজকে ক্ষতিপূরণ দেয়া প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য না করে কোকাকোলা ফারইস্টের কান্ট্রি ম্যানেজার দেবাশীষ দেব বলেন, “তাবানির সঙ্গে কোকাকোলার কোনো বিরোধ নেই। ফলে বিরোধ নিষ্পত্তির কোনো ব্যাপারও নেই।
তবে কোকাকোলা বাংলাদেশে আধুনিক ও বৃহৎ প্লান্ট করতে যাচ্ছে যার জন্য ৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগের ঘোষণা এরই মাঝে দেওয়া হয়েছে। আশা করছি খুব তারা তারি আমরা কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।“
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জানান, “ক্ষতিপূরণ বাবদ যে অর্থ পাওয়া যাবে, তার একটি অংশ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট তাবানি বেভারেজের জায়গায় নতুন করে বিনিয়োগ করবে। মিরপুরে তাবানি বেভারেজের ৭ একরেরও বেশি জমি রয়েছে।“
সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ