দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা যাদের বলি বেদে তারা নৌকায় যাযাবরের মতোই জীবন যাপন করে। তবে বেদে না হয়েও এক ব্যক্তি পরিবার নিয়ে নৌকায় বসবাস করছেন ৬ বছর!
কথিত রয়েছে ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দে শরণার্থী আরাকানরাজ বল্লাল রাজার সঙ্গে বেদেরা নাকি ঢাকায় আসেন। পরবর্তীকালে তারা ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেয়। এরা প্রথমে বিক্রমপুরে বসবাস শুরু করে ও পরবর্তীতে সেখান থেকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে, এমনকি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং আসামেও তারা ছড়িয়ে পড়ে। বেদেদের কোনো জায়গা জমি না থাকায় তারা জন্মগতভাবে এক অঞ্চল হতে অন্য অঞ্চলে নৌকায় চরে ঘুরে সাপ খেলা বা গাছা গাছালির তাবিল-কবজ বিক্রি করে জীবন নির্বাহ করে। এরা এক এক সময় এক এক অঞ্চলে গিয়ে এরা নৌকা ভেড়ায় এবং ব্যবসা করে। আবার কিছুদিন পর অন্য অঞ্চলে চলে যায়। এভাবেই চলে বেদেদের জীবন।
তবে আজ রয়েছে বেদে নয়, অথচ জায়গা জমি না থাকায় পরিবার নিয়ে দীর্ঘ ৬ বছর যাবত নৌকায় বসবাস করছেন এমন এক ব্যক্তির কথা। পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার উপরদিয়ে বয়ে গেছে সন্ধা নদী। সেই নদীর পানিতে এক সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে ৬ বছর যাবত ভেসে বেড়াচ্ছেন বাংলাদেশের নাগরিক উৎপল বাবু। আধুনিক যুগে মানুষ যেখানে পৃথিবী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী, সেখানে এই পরিবার নিজেদের জীবন রক্ষার সংগ্রামে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।
উৎপল দত্তের কোনো সম্পদ নেই। তার রয়েছে শুধু যুদ্ধ করে বেঁচে থাকার সাহস ও সঙ্গী রয়েছে ছেলে, স্ত্রী এবং একটি নৌকা। জন্মগতভাবে উৎপল একজন বাঙালি। তার বাবার এক সময় জায়গা-জমিসহ অনেক কিছুই ছিল। এখন সেসব জমি নদীর পানিতে বিলীন হয়ে যাওয়া তিনি নি:স্ব।
উৎপল জানান, আমাদের জায়গা -জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, যে কারণে এখন আমাদের মাথা গোজার কোনো ঠাই নেই। স্ত্রী সন্তান নিয়ে ৬ বছর ধরে তাই নদীর পানির উপর বসবাস করছি। ঝড় বৃষ্টি যাই হোক আমাদের এই নৌকাতেই থাকতে হয়। ঘুম রান্না হতে শুরু করে সব কিছুই নৌকাতেই সারতে হয়। একবেলা খাবার পেলে, আরেক বেলা অনাহারে থাকতে হয়। সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা আমি কোনো পাইনি।
ছেলেকে স্কুলে পাঠান কি না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে উৎপল বলেন, আমি নদীতে মাছ ধরে জিবিকা অর্জন করি। পড়ালেখার তেমন সুযোগ হয়নি। ভেবেছিলাম আমার ছেলেকে পড়া-লেখা শেখাবো, তবে সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। কারণ হলো আমাদের নির্দিষ্ট কোনো মাথা গোজার ঠাই নেই। আজ এখানে, কাল আরেক খানে যেতে হয় আমাদের।
উৎপলের মতো এমন অনেক মানুষ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে রয়েছে। এসব মানুষ জন্মগতভাবে বেদে না হয়েও, এদেরকে সব সময় মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আর কতো দিন? এ প্রশ্ন জাতির বিবেকবান প্রতিটি নাগরিকের।