দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যুর ঘণ্টা পড়লে আর কারও রক্ষে নেই। চিরসত্য সেই মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে গিয়েও অনেকেই বেঁচে ওঠেন। এমনই এক বৃদ্ধার গল্প রয়েছে আজ!
জীবনের সীমানা ছাড়িয়ে এক যদি কেও মৃত্যুর মুখে পাড়ি দেন, তাহলে তিনি আর ফেরেন না দুনিয়ায়। এটা শুধু লোকবিশ্বাস নয়, একেবারে বিজ্ঞানের দ্বারা প্রমাণিত বাস্তব সত্য। মৃত মানুষ আর কোনওভাবেই পুনরুজ্জীবিত হয়ে ওঠেন না- সেটিই সত্য কথা। তবে মাঝে-মধ্যেই পৃথিবীতে এমন অনেক ঘটনাও ঘটে, যার কোনও বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় না।
সম্প্রতি এমনই একটি অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটে গেছে ভারতের উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহরে। যেখানে এক ৯০ বছর বয়সি মহিলা মৃত্যুর ১০ ঘণ্টা পর আবার বেঁচে উঠেছেন। শুধু তাই নয়, বেঁচে উঠে তিনি জানালেন যে, খোদ যমরাজের সঙ্গে তাঁর মোলাকাতের কাহিনী!
ভারতের উত্তর প্রদেশের বুলন্দশহরের অন্তর্গত খুর্জা গ্রামের বাসিন্দা কৈলা দেবীর বয়স ৯০। দিনকয়েক আগে আকস্মিকভাবেই তাঁর মৃত্যু ঘটে। বয়স হয়েছিল যথেষ্ট, যে কারণে হঠাৎ করে কৈলা দেবীর মৃত্যু তার আত্মীয়-পরিজনকে শোকাহত করলেও বিস্মিত করেনি মোটেই।
কৈলা দেবীর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই তার বাড়িতে ভিড় জমান তার আত্মীয়-পরিজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা। ডাক্তার ডাকা হয়। ডাক্তার কৈলা দেবীর দেহ পরীক্ষা করে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শেষকৃত্যের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন সকলেই। শুরু হয় মৃতদেহ শ্মশানে নিয়ে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি। এইসব কাজে প্রায় ঘণ্টা দশেক সময় পার হয়। উপস্থিত মানুষজনের চিন্তা ছিলো, দেহে পচন ধরতে পারে। তাই কৈলা দেবীর দেহটি শুইয়ে দেওয়া হয় বরফের উপর। তবে তারপরেই ঘটে এক চমকপ্রদ ঘটনা। খুলে যায় বৃদ্ধা কৈলা দেবীর চোখ! কথা বলতে শুরু করেন মৃত কৈলা! উপস্থিত পাড়া-প্রতিবেশী ভয়ে পড়িমড়ি করে দৌড় দেন- যে যার মতো। যারা সাহস করে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তাদেরও বিস্ময়ের শেষ থাকে না।
পরে অবস্থা শান্ত হলে সকলকে কৈলা দেবী জানান তার বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন যে, তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎই দেখেন, চারটে ষণ্ডামার্কা লোক তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তাদের মধ্যে এক জনের লম্বা দাড়ি ছিলো। কৈলা দেবী বুঝতে পারেন, তিনি মারা গেছেন। যমদূতেরা এসেছে তাকে যমলোকে নিয়ে যেতে। লম্বা দাড়িওয়ালা মানুষটিই যে যমরাজ, তা-ও বুঝতে পারেন কৈলা দেবী। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় যমলোকে। সেখানে নাকি এক জন লোক কীসব খাতাপত্রে লেখা হিসেব-নিকেশ দেখে কৈলা দেবীকে জানান যে, এখনও তার আয়ু শেষ হয়ে হয়নি। তার পৃথিবীবাসের মেয়াদ ফুরনোর আগেই ভুলবশত তাকে পরলোকে নিয়ে আসা হয়েছে। যে কারণে আবার তাকে পৃথিবীতে ফেরত পাঠানো হবে। এরপরই তিনি জেগে ওঠেন। আর দেখতে পান, তিনি বরফের উপরে শুয়ে রয়েছেন।
এই সমস্ত ঘটনার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কী? যে ডাক্তার কৈলা দেবীকে পরীক্ষা করে তাকে ‘মৃত’ বলে ঘোষণা করেছিলেন সেই সনাতন যাদব নিজেও গোটা ঘটনায় বিস্মিত হয়েছেন। তিনি জোরের সঙ্গে বলেন যে, ‘আমি যথেষ্ট ভালোভাবেই কৈলা দেবীকে পরীক্ষা করেছিলাম। তিনি যে মারা গিয়েছিলেন, সেই নিয়ে কোনও প্রকার সন্দেহ নেই। তবে কীভাবে তিনি আবার বেঁচে উঠলেন, তা আমিও ভেবে পাচ্ছি না।’
সত্যিই কি একজন মানুষের মৃত্যুর ১০ ঘন্টা পর তার পুনরুজ্জীবন সম্ভব? কোলকাতার ডাক্তার মনোহর বৈদ্যের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীতে এমন ঘটনা পূর্বেও ঘটেছে। কোনও কারণে কোনও মানুষের হৃদস্পন্দন স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার কিছু পর আবার তা চালু হয়ে গেছে। এমনটা কদাচিৎ ঘটলেও সেটি সম্ভব। তবে মৃত্যুর ১০ ঘণ্টা পর একজন মানুষের বেঁচে ওঠার ঘটনা সত্যিই অবিশ্বাস্য। আমার ধারণা, ওই মহিলা হয়তোবা কোমায় চলে গিয়েছিলেন। তারপর কোমা হতে আবার ফিরে এসেছেন। স্থানীয় ডাক্তারের পরীক্ষায় কোথাও ভুল থেকে গিয়েছিল বোধহয়। তাছাড়া ১০ ঘণ্টার সময়পর্বটির মধ্যেও অতিরঞ্জন রয়েছে বলে আমার ধারণা।’
এতসব বৈজ্ঞানিক কচকচি দূরে সরিয়ে রেখে আপাতত কৈলা দেবীকে নিয়ে সরগরম পুরো বুলন্দশহর। মানুষ ভীড় জমাচ্ছেন কৈলা দেবীর বাড়িতে। এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে এক মহা চাঞ্চল্য।