দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শিক্ষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী রয়েছে তার। তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার। মেধা-জ্ঞান সবই আছে আর দশটা মানুষের মতো। কিন্তু তাতেও লাভ নেই। তাকে চাকরি দেওয়া হয়নি। তার একমাত্র অপরাধ হলো হিজড়া হয়ে জন্ম নেওয়া!
সত্যিই কী আমাদের সমাজ ব্যবস্থা এমন? আসলেও আমাদের সমাজে ঠিক তাই ঘটে। হিজড়া হয়ে জন্ম নেওয়া দোষের কিছু নয়। কী অপরাধ তার যে সমাজের আর দশটা মানুষের মতো করে সে কেনো বাঁচতে পারবে না? কেনো তাদের নিয়ে এতো অবহেলা? সৃষ্টির সেরা মাখলুকাত বলা হয় মানুষকে। সেই মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার পরও কেনো এতো লাঞ্ছনা সইতে হবে তাদের? এই প্রশ্ন যদি পুরো সৃষ্টি জগতের মানুষকে করা যায় হয়তো কেও এর জবাব দিতে পারবেন না। আজ আমাদের এই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমনই একটি কাহিনী। ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী রয়েছে। সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করার পরও তাকে চাকরির জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে। কারণ তার একটাই অপরাধ হলো হিজড়া জন্ম নেওয়া!
আজ যার কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরবো তার নাম আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী। তিনি সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি। বাংলাদেশে প্রথম হিজড়া হিসেবে তিনি এই বছর পেয়েছেন ‘জয়িতা’ পুরস্কার। সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের শ্রেষ্ঠ পাঁচজন জয়িতার মধ্যে তিনিও একজন।
ময়ূরী ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে তড়িৎকৌশলে ডিপ্লোমা পাস করেছেন ২০১০ সালে। শুধুমাত্র হিজড়া হওয়ার জন্য তাকে চাকরি দেওয়া হয়নি! এমনকি আজ পর্যন্ত মেলেনি জাতীয় পরিচয়পত্রও। ‘জয়িতা’ পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি ও নিজের জীবনের নানা সংগ্রামের গল্প বলেছেন একটি সংবাদ মাধ্যমকে।
তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো ‘জয়িতা’ পুরস্কার পেয়ে আপনার কেমন লাগছে? উত্তরে ময়ূরী বলেছেনজের, ‘আসলে যেকোনো জিনিষ পাওয়াটাই সম্মানের। ভালোই লাগছে। আনন্দও লাগছে।
তার সংগঠন সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা সম্পর্কে আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী বলেছেন, ‘আমি হিজড়া কমিউনিটির সঙ্গে যুক্ত ২০০৭ সাল হতে। ২০১৩ সালে আমি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় হতে ‘সিঁড়ি সমাজকল্যাণ সংস্থা’ এর রেজিস্ট্রেশন করাই। এই সংস্থার মাধ্যমে আমি শুধুমাত্র হিজড়া কমিউনিটির সঙ্গেই কাজ করি নি। সেই সঙ্গে বন্যা দুর্গতদের ত্রাণ দিয়েছি, শীতবস্ত্র দিয়েছি, অনেকের সমস্যা সমাধানে আর্থিক সহায়তা করেছি, এমন কি বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে কাজ করেছি।’
এতো সংগ্রামের পর এই স্বীকৃতি এবং পিছন ফিরে দেখার কথা বলা হলে আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী বলেছেন, ‘দেখেন আমাদের সমাজে হিজড়াদের মানুষ তো নয়ই, বরং কিট পতঙ্গের চাইতেও তুচ্ছ ভাবা হয়। আমি যে পর্যন্ত পড়াশুনা করেছি আমাদের দেশের অনেক হিজড়াই সে পর্যন্ত পড়াশুনা করতে পারে না। আমরাও যে মানুষ, এই সমাজ সে জায়গাটাই দেয় না। আমি মনে করি, আমার কাজে অনুপ্রাণিত হয়ে অন্য হিজড়াও যদি নিজেদের জীবনকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারে, তাহলে তারাও ভবিষ্যতে এমন স্বীকৃতি পাবে।’
তড়িৎ প্রকৌশলে ডিপ্লোমা করার পরও কেনো ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় গেলেন না? এমন এক প্রশ্নের জবাবে আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী বলেছেন, ‘প্রথমেই বলে রাখি, আমাদের সমাজের মানুষদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আমার যে যোগ্যতা রয়েছে, তাতে অনেক ভালো চাকরি হতো। কেবলমাত্র আমি হিজড়া বলে আমার চাকরি হয়নি!’
জাতীয় পরিচয়পত্র করতে দেওয়া হয়নি কেনো এমন এক প্রশ্নের উত্তরে আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী বলেছেন, ‘আমি যেটা বলবো, আমাদের সকলের প্রিয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। অন্যকোন সরকারের আমলে এমনটি ঘটেনি। এই সরকার হিজড়াদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। তবে শুধু এইটুকুই যথেষ্ট নয়। জাতীয় পরিচয়পত্র করতে গেলে ছেলে কিংবা মেয়ের পরিচয় দিতে হয়। কিন্তু আমি তো এর কোনটিই নই। তাই আমাদের জন্য আলাদা কৌটা বা অপশন দরকার। চাকরির ক্ষেত্রেও যদি আমাদের আলাদা কৌটা থাকে তাহলে আমরা চাকরিতে সুযোগ পাবো। স্বীকৃতির পাশাপাশি আমরা হিজড়াদের জন্য আলাদা কৌটা চাই, যাতে আমরা কাজ করতে পারি। এই সমাজের একজন কর্মী হয়ে সমাজের পাশে দাঁড়াতে পারি।’
সংগঠন ও তার ভবিষ্যত সম্পর্কে বলতে গিয়ে আরিফা ইয়াসমিন ময়ূরী বলেছেন, ‘ভবিষ্যৎ ইচ্ছা হলো আমাদের সংস্থার মাধ্যমে হিজড়াদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া। জীবনের মান উন্নয়নের জন্য আমি চাই হিজড়াদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে, যাতে করে তাদের আর মানুষের মুখাপেক্ষি হতে না হয়।’
তথ্যসূত্র: http://feminismbangla.com
This post was last modified on মার্চ ৯, ২০১৭ 12:35 পূর্বাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ চকোলেট থেকেও কী অ্যালার্জি হতে পারে? শুনলে সত্যিই অবাক লাগে।…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ জিমেইল বর্তমান বিশ্বে জীবনের একটি গুরত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে সেটি…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ হঠাৎ করে চুল পড়ার পরিমাণ বেড়ে গেলো। এই বিষয়ে পুষ্টিবিদরা…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বলিউড ভাইজান সালমান খানের নতুন ছবি ‘সিকান্দার’ ২০২৫ সালের ঈদে…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বৃদ্ধার পুত্র কর্মহীন। টাকার জন্য সব সময় অশান্তি করে, মারধরও…