দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোনো কাজই যে ছোট নয়, তার প্রমাণ করলেন ঈশ্বরদীর নুরুন্নাহার নামে এক গৃহবধু। তিনি কৃষি কাজ করে আজ হয়েছেন কোটিপতি!
ঈশ্বরদীর এই গৃহবধু নুরুন্নাহার কৃষি কাজ করে নিজের ভাগ্য বদলে দিয়ে দেশজুড়ে রীতিমতো ঝড় তুলেছেন। তিনি মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেছিলেন তার এই কৃষি কাজ। তিনি এখন কোটিপতি। শুধু তাই নয়, তিনি বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষি উন্নোয়নের রোল মডেল। কৃষিতে বিপুল অবদান রাখায় পেয়েছেন জাতীয় পুরস্কার। শুধু নিজের ভাগ্য ফিরিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি। তিনি বর্তমানে এক হাজার নারীর ভাগ্য বদলে দিতে গ্রহণ করছেন নানা পরিকল্পনা।
অন্যান্য গ্রাম্য বধুর মতোই চার দেওয়ালের গণ্ডির মধ্যে নিরিবিলি জীবন যাপন করার কথা থাকলেও নুরুন্নাহার সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। অদম্য স্পৃহা ও প্রবল সাহসের মাধ্যমে তিনি বর্তমানে একজন সমাজ উন্নয়ন কর্মী, নারী উদ্যোক্তা এবং সফল কৃষক। নারী কৃষক হিসেবে ইতিমধ্যেই নুরুন্নাহার বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণ পদকও লাভ করেছেন।
পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলার ছলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম বিশ্বাসের স্ত্রী হলেন নুরুন্নাহার। নিবিড় সবজি, ফলমূল, পোল্ট্রি এবং গাভির খামার করে এলাকার নারীদের কৃষি কাজে উদ্বুদ্ধ করেছেন। দেশের সকল নারী কৃষককে ডিঙ্গিয়ে ২০১০ সালে সিটি গ্রুপ জাতীয় পুরষ্কার জিতে নেন তিনি। সে সময় নগদ সাড়ে ৩ লাখ টাকা, একটি সার্টিফিকেট ও একটি ২৪ ইঞ্চি রঙ্গিন টেলিভিশন পুরষ্কার তাকে দেওয়া হয়।
এই সফল নারী কৃষক নুরুন্নাহার ২০১১ সালে দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি ব্রোঞ্জ পদক, ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি স্বর্ণ পদক ও ২০১৭ সালে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে নগদ ১ লাখ টাকাসহ মাছরাঙ্গা অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তিনি রীতিমতো দেশের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। জয়বাংলা নারী উন্নয়ন মহিলা সমবায় সমিতি এবং এনসিডিপি গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভানেত্রী নারী উদ্যোক্তা নুরুন্নাহার ১ হাজারের বেশি নারীদের সংগঠিত করে তাদের ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য কাজ করে চলেছেন।
সংবাদ মাধ্যমকে নুরুন্নাহার জানিয়েছেন, স্বামী কাজে বেরিয়ে গেলে অলস বসে থাকা তার ভালো লাগতো না। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান দেখে তারও ইচ্ছে হয় বসতবাড়ির আশপাশে শাক-সবজি ও ফলমূলের বাগান গড়ে তোলার। এরপর আর থেমে থাকেননি নুরুন্নাহার। লালশাক, পুঁইশাক, বেগুন, কাঁচামরিচ, গোল আলু, পেঁয়াজ, রসুন, সব কিছু তিনি বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করেন, তা দিয়েই সারা বছরের সবজির চাহিদা মিটে যেতো। এমনকি বাড়তি কিছু আয়ও হতো তার। প্রথম প্রথম স্বামী তার এমন কর্মকাণ্ডে কিছুটা বিরক্ত হতেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
২০০৫ সালে ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান, জাকির হোসেন এবং আব্দুর রশিদ নুরুন্নাহারের এলাকায় ব্র্যাক এনসিডিপি\’র মহিলা গ্রাম কমিটি গঠনের পর তাকে দায়িত্ব অর্পণ করেন। এতে তার স্বামীর আগ্রহ আরও বেড়ে যায়।
ওই বছর ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বসতবাড়ির আঙ্গিনায় ও বাড়ি সংলগ্ন ৫ বিঘা জমিতে ফুলকপি, বাধাকপি, ওলকপি, গাজর, ইত্যাদি নানা ফসলের আবাদ করে আশাতীত লাভবান হন। পরের বছর ৩১ আগষ্ট তিনি সেই ঋণ পরিশোধ করে দ্বিতীয়বারের মতো ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন
এমন সময় তিনি জানতে পারেন বড়ইচারা দণিপাড়ায় ছিদ্দিকুর রহমান ময়েজের কূল চাষ প্রকল্পের বিষয়ে। ময়েজের কাছ থেকে চারা কিনে এনে নুরুন্নাহার ১৭৫টি গাছের একটি কূলের বাগান করেন। প্রথম বছর কূল বিক্রি করে তিনি ২৫ হাজার টাকা পান। এছাড়া উন্নত জাতের পেয়ারার (৪০)টি গাছও লাগান তার আঙ্গিনায়।
বর্তমানে নুরুন্নাহারের খামারে ১০০টি গরু ও ৪ হাজার সোনালী মুরগী রয়েছে। তাছাড়া তিনি ২ বিঘা ড্রাগন, ৭ বিঘা পেয়ারা, ৬ বিঘা লিচু, ৫ বিঘা জমিতে পেঁপে, ২ বিঘা কলা, ৪ বিঘা লাউ, ৪ বিঘায় ফুল কপি, ৪ বিঘায় পেঁয়াজ, ৩ বিঘায় রসুন, ১ বিঘায় টমেটো, ৩ বিঘায় বেগুন, ৩ বিঘায় মটর, ২ বিঘা গম, ৪ বিঘায় আলু, ২০ বিঘা জমিতে মশুর চাষ করছেন। এনসিডিপি গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সভানেত্রী একজন সফল কৃষক নুরুন্নাহারের স্বামী রবিউল ইসলাম বিশ্বাস একজন ব্যবসায়ী। জয়নগরের চাউল কল মোকামের একটি মিলে ধান চাউলের ব্যবসা করেন তার স্বামী রবিউল ইসলাম।
বর্তমানে নুরুন্নাহারের জয়-জয়কার ছড়িয়ে পড়েছে গোটা পাবনা জেলায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নুরুন্নাহারের কাছে কৃষি কাজের পরামর্শ নিতে আসেন। নুরুন্নাহারও তাদের মাঝে ছড়িয়ে দেন তার সফলতার কথা। নুরুন্নাহার তার গ্রামের ২শ’ নারীকে হাতে কলমে কৃষি কাজের প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষক হিসেবে গড়ে তুলছেন।
নুরুন্নাহার ২০১১ ও ২০১৬ সালে দেশের সেরা নারী কৃষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক পেয়ে দেশের মানুষকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। নুরুন্নাহারের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সফল নারী উদ্যোক্তা ও নারী কৃষক নুরুন্নাহারের হাতে তুলে দেন বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদক।
নুরুন্নাহার বেগমের সফলতা দেখে ছলিমপুর ইউনিয়নের বক্তারপুর গ্রামের নারীরা বর্তমানে প্রতিযোগিতামূলক কৃষি কাজে এগিয়ে এসেছেন। পরিশ্রম, ধৈর্য্য, অধ্যাবসায়, সাহস এবং মেধাকে কাজে লাগাতে পারলে নুরুন্নাহার বেগমের মতো দেশের অন্যান্য নারীরাও সফল হতে পারবেন এমনটিই বিশ্বাস জন্মেছে সকলের মধ্যেই।
নুরুন্নাহারের সফলতায় এখন সবাই উৎসাহী। দেশকে এবং নিজের ভাগ্যকে এগিয়ে নেওয়ার এমন সুযোগ সকলেই কাজে লাগাতে চান। এক কথায় ঈশ্বরদীর নুরুন্নাহার এখন আমাদের দেশের জন্য এক মডেল।
ছবি ও তথ্য: http://truestory24.net এর সৌজন্যে।
This post was last modified on এপ্রিল ২১, ২০১৭ 6:12 অপরাহ্ন
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অনেকই সুজি খেতে খুবই ভালোবাসেন। তাই তারা প্রতিদিন সুজির পায়েস,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ প্রথমবারের মতো প্যান ইন্ডিয়ান চলচ্চিত্র বানিয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন। ঢালিউড…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আপনার যদি প্রতিদিন চিকেন খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তাহলে জেনে রাখুন,…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’- এর অন্যতম সমন্বয়ক…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রতিশ্রুতি দেন…
দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবশেষে গত ৩১ বছর ধরে চলা ‘গোল্ডেন আউল’ বিতর্কের অবসান…