সৌদি আরব যেনো বিশ্বের অন্য এক রাষ্ট্রে পরিণত হচ্ছে!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সাম্প্রতিক সময়ে নানা পরিবর্তন দেখে মনে হয়ে সৌদি আরব যেনো বিশ্বের অন্য এক রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে! দেশটির আদর্শ ও নীতিরও পরিবর্তন ঘটেছে। সর্বশেষ দুর্নীতির অভিযোগে গত শনিবার সৌদি ধনকুবের প্রিন্স আল-ওয়ালিদ বিন তালালসহ ১৭ জন প্রিন্স এবং ৪ মন্ত্রীকে গ্রেফতার করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।

সেইসঙ্গে গ্রেফতার হয়েছেন কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীও। আবার অনেককে তাদের পদ থেকে বরখাস্তও করা হয়েছে। এদেরমধ্যে নৌবাহিনী প্রধান ও জাতীয় গার্ডের প্রধানও রয়েছেন। এই বিষয়গুলো নিয়ে দেশটিতে শুরু হয়েছে তোলপাড়।

ইতিপূর্বে সৌদি বাদশাহ সালমান এক ডিক্রির মাধ্যমে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রধান করে নতুন দুর্নীতি দমন কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরই প্রিন্স, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের গ্রেফতার ও শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের বরখাস্তের ঘটনাটি ঘটে।

Related Post

আল আরাবিয়ার এক তথ্য অনুযায়ী, ২০০৯ সালে জেদ্দায় বন্যার সময় দুর্নীতির ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করা হয়েছিল। সম্প্রতি সেই কমিশনের নেতৃত্ব পান প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তারপরই তিনি গ্রেফতার অভিযানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।

সৌদি সরকারি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিশনের মূল লক্ষ্য হলো জনতার স্বার্থ যাতে বিঘ্নিত না হয় তা দেখা, দুর্নীতিগ্রস্তদের শাস্তি দেওয়া ও যারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বা করছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। তবে অনেক বিশ্লেষকের ধারণা মতে, দেশটির ওপর যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রয়টার্সের এক তথ্য অনুযায়ী জানা যায়, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বর্তমানে ক্ষমতাধর হলেও ২০১৫ সালের পূর্বে খুব কম মানুষই তার নাম জানতেন। ওই বছর তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি বাদশাহর সিংহাসনে আরহণ করেন। সেইসময় তিনি নিজের ভাইপো মোহাম্মদ বিন নায়েফকে ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। মোহাম্মদ বিন সালমানকে ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে প্রিন্স সালমান সৌদি আরবের অর্থনীতি ও উন্নয়ন বিষয়ক কাউন্সিলের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পেয়েছিলেন।

খবরে আরও বলা হয়েছে, মোহাম্মদ বিন সালমান ২০৩০ সালকে লক্ষ্য করে সৌদি আরবের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিবর্তনে ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। দেশের বাইরে তিনি তার বাবা সালমান বিন আবদুল আজিজের প্রতিনিধিত্ব করে বেইজিং এবং ওয়াশিংটন সফর করেন। এসময় তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও বৈঠক করেন। গত ২১ জুন সৌদি বাদশাহ উত্তরসূরীর পদ হতে নিজের ভাইপো মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে মোহাম্দ বিন সালমানকে তিনি ক্রাউন প্রিন্স ঘোষণা করেন।

অপরদিকে আল জাজিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুবরাজ হওয়ার পর দেশে বেশ কিছু সংস্কার করেন মোহাম্মদ বিন সালমান। যেমন: কয়েক সপ্তাহ পূর্বে দেশটিতে মেয়েদের গাড়ি চালানোর ওপর হতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়। সেইসঙ্গে তিনি রক্ষণশীল মনোভাব পরিবর্তন করে দেশে আধুনিক ইসলাম ব্যবস্থা কায়েম করার প্রতিশ্রুতি দেন, যা দেশের জনগণ ইতিবাচকভাবেই নিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও তিনি বেশকিছু পরিবর্তন আনেন।

এদিকে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি সরকার গত বছর ভিশন ২০৩০ নামে যে মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছে তার পেছনে রয়েছেন ৩২ বছর বয়সী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। তাঁর এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিদেশী পরামর্শকও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সৌদি যুবরাজ এবং তাকে ঘিরে থাকা লোকজন ভালো করেই জানেন, একদিন তাদের তেলকূপগুলো শুকিয়ে যাবে। হয়তো খুব তাড়াতাড়ি ইলেকট্রিক কারের প্রচলন ঘটবে। তখন তেলের চাহিদাও কমে আসবে।

এই বিষয়ে আল জাজিরার রাজনীতি বিষয়ক জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেছেন, যুবরাজ সালমান যে দ্রুতই ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন, সেটা আড়াই বছর ধরেই বোঝা যাচ্ছে। কেনোনা এই সময়ে বাদশাহ সালমান এবং যুবরাজ সালমান দু’জনেই দেশের ভেতর এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে গ্রেফতার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ঐতিহ্যবাহী রাজ পরিবারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে আনা পরিবর্তন কখনই ভালো পরিকল্পনা হতে পারে না; এটা দেশের মধ্যেও অসন্তোষ তৈরি করতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অনেক বিশ্লেষকই মনে করেন, রাজপরিবারে নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্যই সৌদি প্রিন্স এমনটি করেছেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনী এবং ন্যশনাল গার্ডকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়াই গ্রেফতার অভিযানে মূল উদ্দেশ্য; এখানে নাকি দুর্নীতি দমন কোনো বিষয়ই নয়!

ক্ষমতা দখলের পূর্বে নিজের আধিপত্য বিস্তার নাকি আধুনিক রাষ্ট্র তৈরির লক্ষ্যে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এগিয়ে চলেছেন তা এখন পুরোপুরি বোঝা না গেলেও সময়ই বলে দেবে আসলে কী ঘটতে চলেছে কট্টর মুসলিম দেশ হিসেবে খ্যাত সৌদি আরবে।

This post was last modified on নভেম্বর ৭, ২০১৭ 10:50 পূর্বাহ্ন

স্টাফ রিপোর্টার

Recent Posts

মার্কিন পতাকা নামিয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়লো হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি গণহত্যার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলমান ক্যাম্পাস বিক্ষোভের…

% দিন আগে

বাংলা সাল যেভাবে এলো

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ বৈশাখ এলে বাংলা সালের কথা আমাদের মনে পড়ে। আসলে এই…

% দিন আগে

নদী ও নৌকা: এক অসাধারণ গ্রামের দৃশ্য

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শুভ সকাল। মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪ খৃস্টাব্দ, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১…

% দিন আগে

আপনি কী জনেন দিবানিদ্রার অভ্যাসে বাড়তে পারে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি!

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ দিনের বেলায় ঘুমানোকে আমরা ভাত ঘুম বলে থাকি। তবে দিনের…

% দিন আগে

ডিপিএস এসটিএস স্কুল ঢাকার ২০২৩-২৪ সেশনের গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ ডিপিএস এসটিএস সিনিয়র স্কুল অডিটোরিয়ামে আয়োজিত হয়েছে ডিপিএস এসটিএস স্কুল…

% দিন আগে

এসসিবি-চ্যানেল আই অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০২৩: ‘সেরা কৃষি প্রতিষ্ঠান’ স্বীকৃতি পেলো আইফার্মার

দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক অ্যান্ড চ্যানেল আই অ্যাগ্রো অ্যাওয়ার্ড ২০২৩- এর…

% দিন আগে