দেশের বৃহত্তম পর্যটন স্পট হিসেবে পরিগণিত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। সামপ্রতিক সময়ের হরতাল-ধর্মঘটের কারণে এখানকার পর্যটন শিল্পে ধস নেমে এসেছে। বন্ধ হয়ে গেছে শতাধিক হোটেল।
জানা গেছে, গত ২ বছর ধরে মারাত্মক ধস নেমেছে পর্যটন ব্যবসায়। যারা ভাড়া নিয়ে হোটেল ব্যবসা করেন তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। কক্সবাজারে একের পর এক হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। গত ২ মাসে কক্সবাজার পর্যটন এলাকার শতাধিক হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধের মুখে রয়েছে। উপর্যুপরি লোকসানের মুখে মালিকপক্ষ তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি করেছেন। এর ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত কয়েক হাজার কর্মজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে।
এদিকে উপর্যুপরি লোকসানের কবল থেকে বাঁচতে কক্সবাজারের অধিকাংশ হোটেলের কক্ষ ভাড়া অবিশ্বাস্যভাবে কমানো হয়েছে। কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশনের (টোয়াক বাংলাদেশ) সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান সাংবাদিকদের জানান, গত ২ বছর ধরে কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে। আগে যেখানে বছরে অন্তত ৫০ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসত, সেখানে তা এক পঞ্চমাংশ বা ১০ লাখের নীচে নেমে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, মাত্র একযুগ আগেও কক্সবাজারে কোন ফাইভ স্টার বা ফোর স্টার মানের কোন হোটেল ছিল না। থ্রি-স্টার মানের ৩/৪টি হোটেল ছিল মাত্র। সবগুলো মিলে ২২/২৩টি আবাসিক হোটেল এবং ৫০টির মত রেস্তোরাঁ ছিল। সেখানে বর্তমানে ৪টি ফাইভ স্টার মানের, ২টি ফোর স্টার মানের এবং ৫০টির বেশি থ্রি-স্টার মানের আবাসিক হোটেলসহ ৩ শতাধিক আবাসিক হোটেল ও ৩ শতাধিক রেস্তোরাঁ গড়ে উঠেছে।
পর্যটন ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে শহরের বাইরে উখিয়া, টেকনাফ, রামু, চকরিয়া ও মহেশখালীসহ অন্যান্য স্থানে। মানসম্মত আবাসিক হোটেলের পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের রেস্ট হাউসগুলোকেও উন্নত করা হয়েছে। কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল ও রেস্টহাউসে বছরে প্রায় আড়াই কোটি পর্যটকের ধারণ ক্ষমতা রয়েছে। কক্সবাজারের পর্যটন ব্যবসা লক্ষ্যণীয়ভাবে উন্নতি করায় হাজার হাজার বিনিয়োগকারী কক্সবাজারে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু গত ২ বছর ধরে মারাত্মক ধস নেমেছে পর্যটন ব্যবসায়। যারা ভাড়া নিয়ে হোটেল ব্যবসা করেন তারা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। এ নিয়ে মালিকপক্ষের সাথে ভাড়াটিয়া পক্ষের নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে।
উপর্যুপরি লোকসানের মুখে হোটেল মালিকরা চলতি অফসিজনের জন্য তাদের কক্ষ ভাড়া নজিরবিহীনভাবে কমিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে সাগরপাড়ের জনপ্রিয় ৫ তারকা হোটেল সী-গালসহ প্রায় সকল হোটেল কক্ষ ভাড়ার উপর শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ এবং হোটেল ডায়মন্ডসহ গেস্টহাউস মালিক সমিতির বেশিরভাগ হোটেল শতকরা প্রায় ৭০ ভাগ ডিসকাউন্ট ঘোষণা করেছে।
এতো ছাড় দেওয়ার পরও হোটেলগুলোতে পর্যটকদের আনা-গোনা একেবারেই কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানালেন, সামপ্রতিক সময়ে দেশের হরতাল-ধর্মঘট এর কারণে পর্যটন শিল্পে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে গত দু’মাস আগে স্মরণকালের যে ঘটনা ঘটে গেলো সে কারণে কক্সবাজারে পর্যটকদের অনীহা সৃষ্টি হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর হরতালে সড়ক অবরোধের কারণে বহু পর্যটক আটকে পড়ে। পরে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্নভাবে তাদের উদ্ধার করা হয়। এ ধরণের পরিস্থিতির যারা শিকার হয়েছেন তারা তো নয়ই বরং এগুলো যারা দেখলেন তারা কি কখনো কক্সবাজারে যেতে চাইবেন? এমন প্রশ্ন অনেকের। যে কারণে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশের বৃহত্তম এই সমুদ্র সৈকতের ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কায় আছেন অনেকেই।