দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ শরীরকে ডিটক্সিফাই করার জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধের প্রাচীনতম পদ্ধতিগুলোর মধ্যে অন্যতমতো হলো পঞ্চকর্ম। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু শারীরিকই নয়, মানসিক রোগেরও চিকিৎসা সম্ভব।
এটি এই কারণেই গুরুত্বপূর্ণ যে, এই থেরাপি শুধুমাত্র বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে করা উচিত। আয়ুর্বেদ অনুসারে, মানুষের শরীর মাটি, বায়ু, আগুন, পানি ও মাটির মৌলিক উপাদান দিয়ে গঠিত ও স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এই উপাদানগুলোর অনুপাত শরীরের মধ্যে সমান হওয়াটা আবশ্যক। এই ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় শুধু খাবারের কারণেই নয়, আপনার সামাজিক জীবন, পরিবেশের কারণেও হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে, মাঝে-মধ্যে শরীরকে ডিটক্স করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির মধ্যেও একটি হয়ে উঠেছে। সে জন্যই আয়ুর্বেদিক ওষুধের চেয়ে ভালো এবং নির্ভরযোগ্য প্রতিকার এর থেকে আর কী হতে পারে।
পঞ্চকর্ম পদ্ধতি আয়ুর্বেদিক ওষুধের মধ্যে প্রাচীনতম পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি। শরীরে জমে থাকা বর্জ্য অপসারণের জন্য আচার্যরা শত শত বছর পূর্বে এটি নির্মাণ করেন। একবার পরিষ্কার করার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে, শরীর কোনও বাধা ছাড়া তার স্বাভাবিক কার্যকারিতা পুনরায় শুরু করতেও প্রস্তুত। আর সহজ ভাষায়, শরীরকে অভ্যন্তরীণভাবে ডিটক্স করাকে আয়ুর্বেদ থেরাপি বলা হয়ে থাকে। এই থেরাপি প্রায় ৫-৭ দিন স্থায়ী করা হয়।
এই পঞ্চকর্ম আসলে কী?
মূলত এই পঞ্চকর্ম হলো অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য ও শক্তি পুনরুদ্ধার করার একটি প্রাকৃতিক উপায়। এই শব্দের অর্থ হলো ৫টি ক্রিয়া, যার মধ্যে রয়েছে বমন, নিরুহম, শুদ্ধিকরণ, অনুষান ও নাস্যাম। এই থেরাপি শুরু করার পূর্বে, একটি কঠোর ডায়েট রুটিন অনুসরণ করে শরীর প্রস্তুত করে নিতে হয়।
বমন
এই চিকিৎসায় প্রথম কয়েকদিন, রোগী ভিতরে ও বাইরে তেল এবং কম্প্রেস চিকিৎসা গ্রহণ করেন। শরীরের উপরের গহ্বরে টক্সিন দ্রবীভূত হয়ে জমে যাওয়ার পর রোগীকে ইমেটিক ওষুধ ও ক্বাথ দেওয়া হয়ে থাকে। এটি বমিকে প্ররোচিত করে ও শরীরকে টিস্যু থেকে টক্সিন অপসারণ করতেও সাহায্য করে। ওজন বৃদ্ধি, হাঁপানি ও হাইপারসিডিটি হলো কাফা প্রধান রোগের উদাহরণ যার জন্য এই বামন থেরাপির পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
বিরেচন (শুদ্ধিকরণ)
শরীরের বিষাক্ত উপাদানগুলোকে শুদ্ধ কিংবা ধ্বংস করতে অন্ত্র পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে। এতে রোগীকে তেল মাখানো হয়। তারপর রোগীকে একটি প্রাকৃতিক রেচকও দেওয়া হয়, যা শরীর হতে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে থাকে। বিরেচন প্রধানত পিট্টা সম্পর্কিত রোগ যেমন জন্ডিস, হারপিস জোস্টার, কোলাইটিস ও সিলিয়াক রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
নাস্য
নাস্য থেরাপিতে, সেশনের শুরুতেই, মাথা ও কাঁধের অংশে হালকা ম্যাসেজ ও কম্প্রেস দেওয়া হয়ে থাকে। তারপর নাকের ছিদ্রে তেল কিংবা ঘি দিতে হয়। এই প্রক্রিয়াটি মস্তিষ্কের এলাকা পরিষ্কার করতে কাজ করে থাকে। এটি মাথাব্যথা, ঘুমের ব্যাঘাত, চুলের সমস্যা, সাইনোসাইটিস, স্নায়বিক ব্যাধি, দীর্ঘস্থায়ী রাইনাইটিস ও শ্বাসকষ্টের মতো বিভিন্ন উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে।
বস্তি (অনুবাসন/নিরুহম)
এতে বেশ কিছু আয়ুর্বেদিক ক্বাথ শরীরের ভিতরে রাখা হয়। যার মধ্যে তেল, ঘি বা দুধ রয়েছে। এই ওষুধটি বাত, পাইলস ও কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো অবস্থার জন্য বেশ ভালো কাজ করে।
পঞ্চকর্মের উপকারিতা হলো
# বার্ধক্য রোধে বেশ কার্যকর।
# পরিপাকতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে।
# পুরো শরীরকে পরিশুদ্ধ করে।
# মন এবং শরীরকে শিথিল করে।
# ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করে।
# ওজন কমাতে সাহায্য করে থাকে।
তবে একটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, আর তা হলো কিছু পঞ্চকর্ম পদ্ধতি শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও বয়ষ্কদের জন্য মোটেও উপযুক্ত নয়। তাই এই থেরাপি সবসময়ই একজন আয়ুর্বেদ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে করার পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।
সতর্কতা : এই প্রতিবেদনটি শুধুমাত্র সাধারণ তথ্যের জন্যই প্রযোজ্য। এটি কোনওভাবেই কোনও ওষুধ কিংবা চিকিৎসার বিকল্পও হতে পারে না। তথ্যসূত্র: এই সময়।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।