এম. এইচ. সোহেল ॥ আবারও বাড়ানো হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। সাধারণ জনগণের উপর পড়বে এর ব্যাপক প্রভাব।
মাত্র কয়েক মাস আগেই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়। তখন গাড়ি বৃদ্ধি করা হলে শুরু হয় এক নৈরাজ্য। আবারও সেই পথেই হাঁটলো সরকার। জ্বালানি খাতে সরকারের ভর্তুকি কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। অথচ এই তেলের দাম বৃদ্ধিল ফলে শুধু গাড়ি ভাড়ায় নয়, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দামও বাড়বে যা জনগণের ক্রয় সীমার বাইরে চলে যাচ্ছে।
যারা বিশেষ করে মন্ত্রী-মিনিস্টাররা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। অনেকেই আমেরিকার কথাও বলেন। কিন্তু আমেরিকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আর আমাদের দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কী এক? আপনি নিজেই একবার ভাবুন!
আমেরিকাতে বেকার ভাতা, বৃদ্ধভাতাসহ নানা সরকারি ভাতা দেওয়া হয়। যে কারণে সেখানে তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে সাধারণ জনগণের উপর তেমন কোনো প্রভাব পড়ে না। কিন্তু আমাদের দেশের পরিস্থিতি কী এক? আমাদের দেশের সাধারণ একজন রিক্সা চালক, কিংবা দিন মজুর তাদের ভাতা কিন্তু সব সময় বাড়ে না। বেসরকারি চাকরিজীবিদের বেতনও যখন-তখন বাড়ে না। অথচ চাল, ডাল, তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীর দাম এখন আকাশ ছোঁয়া। এবার সেইসঙ্গ যোগ হলো তেলের দাম। পরিবহন খাতে তেলের দাম বাড়ায় পণ্য সামগ্রীর দামও বাড়বে। এমন এক পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণের অবস্থা বড়ই করুণ হবে।
আমাদের দেশের নিন্ম ও নিম্ন মধ্যবৃত্তের সংখ্যায় বেশি। যে কারণে হঠাৎ করে জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সেটি সামাল দেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়ে। উচ্চবৃত্তের জন্য হয়তো কোনো বিষয়ই নয়। কারণ চালের কেজি যদি ৫শ টাকাও হয় তাদের কাছে সেটি একেবারেই স্বাভাবিক মনে হতে পারে। কিন্তু যারা নিন্মবৃত্ত তাদের কী অবস্থা হবে একবার ভাবুন।
একজন সাধারণ মজুর সারাদিন পরিশ্রম করে যে টাকা পান সেই টাকায় চাল কিনলে আর তেল ডাল কেনার পয়সা হয় না। এবার তাদের পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে সেটি একবার বিবেচনায় আনুন।
সরকার ভর্তুকি কমাতে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। তাছাড়া তেলের দাম সমন্বয় না হলে ভারতে তেল পাচার হয় সেই কথাও বলা হয়েছে। কিন্তু সাধারণ জনগণের রুটি-রুজির উপরে কী আর কিছু থাকতে পারে। পাচার রোধ করার দায়িত্ব সরকারের। পাচার রোধ করতে না পেরে দাম বাড়িয়ে জনগণের উপর সেই বোঝা চাপানো কতোখানি যুক্তিযুক্ত সেটিও ভাববার বিষয়।
অথচ সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ববাজারে তেলের দাম আরও কমেছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেশ ঊর্ধমুখী ছিল। ব্যারেল প্রতি তেলের দাম উঠে গিয়েছিলো ১৩৯ ডলারে। ক্রমাগত সেই দাম কমতেও শুরু করেছে। গতকাল শনিবার (৬ আগস্ট) আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম ৯০ ডলারেরও নিচে এসে পৌঁছেছে! চলতি বছরের শেষের দিকে ব্যবসায়ীরা বিশ্বজুড়েই মন্দার আশঙ্কা করছেন। এতে করে জ্বালানির চাহিদা কমবে- এমন শঙ্কার কারণে কমে যাচ্ছে তেলের দাম।
অয়েল প্রাইস ডটকম এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দুই ধরনের অপরিশোধিত তেলই এখন ১০০ ডলারের কমেই বিক্রি হচ্ছে। এই রিপোর্ট লেখার সময় ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট অপরিশোধিত তেল ব্যারেল প্রতি ৮৮ ডলার ৪৩ সেন্ট এ বিক্রি হয়েছে। অন্যদিকে ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল বিক্রি হয় ৯৩ ডলার ৯৫ সেন্ট এ।
অপরদিকে গত বৃহস্পতিবার বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ড ক্রুড প্রতি ব্যারেল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বা ২ দশমিক ৬৬ ডলার কমে ৯৪ দশমিক ১২ ডলারে বিক্রি হয়, যা গত ১৮ ফেব্রুয়ারির পর ছিলো সর্বনিম্ন দর।
অথচ আমাদের দেশে আমরা কী দেখলাম! অস্বাভাবিকভাবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে বর্তমান সরকার রেকর্ড গড়েছেন। আর এই রেকর্ডের যাতাকলে পিষে যাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। কিন্তু আর কতো দিন এভাবে চলতে পারে? কারণ জনগণের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।
# লেখক: সম্পাদক, দি ঢাকা টাইমস্ এবং সম্পাদক ও প্রকাশক, মাসিক উন্নয়ন অর্থনীতি।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকার চেষ্টা করি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের কাপড়ের মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।