দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ অস্বাস্থ্যকর খাওয়া, কম ঘুম হওয়া, বেশি ভাজাভুজি ও তেলমশলাদার খাবারের প্রতি আসক্তি বাচ্চাদের ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে সাম্প্রতিক সময়। শিশুর এই বাড়তি ওজন ডায়াবিটিসের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে না তো?
বাচ্চাদের বাড়তি ওজনের কারণে লিভারের অসুখ, ডায়াবেটিসের কারণও হয়ে উঠছে। ভারতের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেল্থ সার্ভে (এনএফএইচএস)-র রিপোর্ট বলছে যে, ২০১৫-১৬ সালের তুলনায় ২০২১ সালের পর হতে বাচ্চাদের স্থূলত্বের হার অনেকটাই বেড়েছে। গ্রামীণ এলাকাতেও বাচ্চাদের মধ্যে স্থূলত্বের হার ৩০ শতাংশেরও বেশি। অস্বাস্থ্যকর খাওয়া, কম ঘুম হওয়া, বেশি ভাজাভুজি ও তেলমশলাদার খাবারের প্রতি আসক্তি বাচ্চাদের ওজন বাড়িয়ে দিচ্ছে।
এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলেছেন, ছোট থেকে যদি শরীরে মেদ জমতে থাকে, তাহলে তা পরবর্তী সময় গিয়ে ফ্যাটি লিভার, টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কারণও হয়ে উঠতে পারে। এমনকি হৃদরোগের অন্যতম কারণও হতে পারে এই স্থূলত্ব।
কী কারণে ওজন বাড়ছে বাচ্চাদের?
প্রথমত: ছোট থেকে অতিরিক্ত তেলমশলাদার খাবার এবং প্যাকেটজাত রাস্তার খাবার খাওয়ার প্রবণতা।
দ্বিতীয়ত: কম পরিশ্রম করা এবং খেলাধূলা কম করা।
তৃতীয়ত: কোনও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াতেও এমনটি হতে পারে।
বর্তমান সময়ে বাবা-মায়েরা বাচ্চাদের নিয়ে হোটেল-রেস্তরাঁয় গিয়ে খাবার খাচ্ছেন। ছোট থেকেই বাচ্চারা বাইরের খাবার খাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠছে। হাতে তৈরি হালকা টিফিনের বদলে মায়েরা বাচ্চাদের টিফিন বাক্সও গুছিয়ে দিচ্ছেন পিৎজ়া-বার্গার-চকোলেট পেস্ট্রিতে। খুব বেশি চিনি কিংবা মিষ্টিজাতীয় খাবারেও আসক্তি হচ্ছে বাচ্চার, যা স্থূলত্বের অন্যতম একটি কারণ। যে কারণে বাচ্চার পেট এবং তলপেটে মেদ জমে যাচ্ছে। চওড়া হচ্ছে তার কোমর। এই দশাকে ‘ট্রাঙ্কাল ওবিসিটি’ বলা হয়। চিকিৎসকরা বলেছেন, মেদ তো কেবল বাইরেই জমে না, পাকস্থলীর ভিতরেও জমে যায় মেদ। আর তখন অগ্ন্যাশয়ে চাপ পড়তে থাকে। যে কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণও তখন বেড়ে যায়। আর তখন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে।
ছোটদের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে অনেকটা দেরিতে। কারণ অভিভাবকদের মধ্যে এই নিয়ে সচেতনতাও থাকে কম। ছোটবেলায় ডায়াবেটিস হতে পারে, তা ভাবতেও পারেন না অনেকেই। যে কারণে তলে তলে রোগ বাড়তে থাকে। তাই বাবা-মায়েদের আরও অনেক বেশি সতর্ক হতে হবে।
তাহলে বাবা-মায়েরা কী করবেন?
# বাচ্চার খাওয়া-দাওয়ায় নজর দিন। বায়না করলেই রাস্তার খাবার, চকোলেট, বার্গার কিংবা নরম পানীয় কিনে দেবেন না। চোখের খিদেতে বাচ্চারা অনেক সময় এটা-খাবো-সেটা-খাবো বলে বায়না করতে থাকে। পেট ভর্তি থাকলে কিংবা কিছুক্ষণ আগে খাওয়ালে আর তাকে খেতে দেবেন না। দিনে ৬টা মিলে অভ্যস্ত করাতে হবে। অল্প অল্প করে বারে বারে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তথ্যসূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org