দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ আমরা সবাই জানি বিয়ে নারী পুরুষের একটি বৈধ সামাজিক বন্ধন। ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি ভেদে বিয়ের ধরণ, আচার-অনুষ্ঠানের ভিন্নতা রয়েছে। তবে এমন এক আজব রীতির দেশ রয়েছে যেখানে মৃতের সঙ্গে জীবিত মানুষের ‘ভূত বিয়ে’ দেওয়া হয়!
মৃত ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের কথা শুনলে হয়তো অনেকেই অবাকই হবেন। তবে এই মৃত ব্যক্তির ‘ভূত বিয়ের’ প্রথা প্রাচীনকাল হতেই প্রচলিত ছিল। এখনও অর্থাৎ এই আধুনিক যুগেও কয়েকটি দেশে অবিবাহিত মৃত ব্যক্তিদের বিয়ে দেওয়া হয়। অদ্ভুত এই বিয়ের রীতির বিষয়টি উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।
প্রায় ২৫০০ বছরের পুরাতন ভূত বিয়ের ঐতিহ্য। চীনের প্রথম রাজ বংশের সময় হতে এই অদ্ভুত বিয়ের রীতি শুরু হয় বলে জানা যায়। চীনের প্রথম রাজবংশ হলো কিন। খ্রিষ্টপূর্ব ২২১ অব্দ হতে খ্রিষ্টপূর্ব ২০৬ অব্দ পর্যন্ত কিন রাজবংশ শাসন করেছে দেশটি। তবে ভূত বিয়ের রীতি বিস্তৃতি লাভ করে হান রাজবংশের সময় কাল হতে বলে মনে করা হয়। খ্রিষ্টপূর্ব ২০৬ অব্দ হতে ২২০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তাদের শাসনকাল বলবৎ ছিল।
অনেকের হয়তো মনে হতে পারে যে, ভূত বিয়ের রীতি প্রচলিত হওয়ার কারণটি আসলে কী ছিল? অদ্ভুত সব রীতি-নীতি বা ঐতিহ্য প্রচলিত হয়েছে সাধারণত কোনো এক বিশ্বাস হতে। সেটি ধর্মীয় বা সামাজিক বিশ্বাসও হতে পারে। তবে এসব অচার অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যই থাকে স্বীয় গোষ্ঠীর জীবিত বা মৃত মানুষের মঙ্গল কামনা করা।
চীনের এই ভূত বিয়ের ঐতিহ্য প্রচলনের ক্ষেত্রেও তেমনই একটি উদ্দেশ্য ছিল। মৃত ব্যক্তির পরকালে সঙ্গীর ব্যবস্থার জন্যই নাকি এই ভূত বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। তারা মনে করতেন কোনো পুরুষ বা নারী যদি অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তাহলে পরকালে তাদের স্বামী কিংবা স্ত্রীর ব্যবস্থা থাকা উচিত।
মনে করা হতো যে, এতে করে মৃত পুরুষ কিংবা নারীর সঙ্গীর ব্যবস্থা হবে এবং তার পরিবারের জীবিত সদস্যদের মঙ্গল হবে। ভূত বিয়ের সর্বাধিক প্রচলিত রীতিই ছিল একজন মৃত পুরুষকে মৃত নারীর সঙ্গে বিয়ে দেওয়া। এক্ষেত্রেও জীবিত অবস্থায় তাদের বিয়ে ঠিক ছিল কিনা সেটা অবশ্য গুরুত্বপূর্ণ নয়। মৃত অবিবাহিত পুরুষ বা নারীর পরকালে সঙ্গীর ব্যবস্থা করা ভূত বিয়ের মুখ্য উদ্দেশ্য থাকলেও শুধু এটিই যে একমাত্র কারণ, তা কিন্তু নয়।
কিংবদন্তী অনুসারে জানা যায়, যদি কেও অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন এবং যথাযথ ভূত বিয়ের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে তার আত্মা পরিবারের জীবিত সদস্যদের আশেপাশেই ঘোরাফেরা করে। যথাযথ ভূত বিয়ের আয়োজন না করা পর্যন্ত সে নাকি থেকেই যায়। মৃত ব্যক্তির আত্মা তাদের পরিবারের সদস্যদের থাকার সময় তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যেও থাকে বলে তাদের বিশ্বাস ছিলো।
সুতরাং ভূত বিয়ের ব্যবস্থা শুধু যে মৃতদের জন্যই করা হতো তা না। কখনও তা পরিবারের জীবিত সদস্যদের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভূত বিয়ে শুধু মৃত নারী ও পুরুষের মধ্যেই যে হতো তাও না। কোনো পুরুষ যদি অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতেন এবং তার বাগদত্তা থাকলে সেই নারীকেই ভূত বিয়ে করতে হতো।
সে নারী কোনো প্রতীক বা অন্য কোনো ব্যক্তি তার স্থানে রেখে এই বিয়ে সম্পন্ন হতো। মৃত ব্যক্তির পরিবার মেয়েটির সুরক্ষার ব্যবস্থা করতো। এটি প্রাচীন চীনা সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ রীতি। তবে একজন নারী অবিবাহিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে তারসঙ্গে জীবিত পুরুষের ভূত বিয়ের রেওয়াজ ছিল না।
চীনে প্রাচীনকাল হতেই ভূত বিয়ের রীতি প্রচলিত ছিল বলে শোনা যায়। তবে পরবর্তীতে চীনের দেখে অন্য কয়েকটি দেশেও এই রীতি প্রচলিত হয়ে যায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ফ্রান্সেও একই রকম রীতি নাকি প্রচলিত হয়। বিশ্বযুদ্ধে অসংখ্য নারীর বাগদত্তা পুরুষ মৃত্যুবরণ করেন। এসব নারীরা তখনও তাদের বিয়ে করতে ইচ্ছুক ছিল। যে কারণে এভাবেই মৃত ব্যক্তির সঙ্গে কাল্পনিক বিয়ে হতো তাদের।
প্রায় ৪০ বছর ফ্রান্সে এমন ভূত বিয়ের রীতি প্রচলিত থাকার পর তা স্থগিত হয়ে যায়। তবে স্থগিত হয়ে যাওয়ার কয়েক বছর পরেই, এক নারীর বাগদত্তা দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ হয়। এই নারী কর্তৃপক্ষের কাছে মৃত বাগদত্তাকে বিয়ের অনুমতি চান। সেও অনুমতি পেয়েছিলেন এবং রীতিটি ‘মরণোত্তর বিবাহ’ নামে সেটি পরিচিত লাভ করে।
তারপর হতে এই রীতি ফরাসি বিবাহ আইনের অধীনে সংরক্ষিত হয়। এখনও বিভিন্ন কারণে ফ্রান্সে মৃত ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের অনুমতি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। বিশ্বের বেশ কয়েকটি উপজাতি সংস্কৃতিতে ভূত বিয়ের প্রথা নাকি প্রচলিত রয়েছে।
সুদানের নুয়ের উপজাতি হলো এর মধ্যে অন্যতম। তাদের রীতিটি বেশ অদ্ভুত ধরনের। নুয়ের উপজাতির বাগদত্তা পুরুষটি মৃত্যুবরণ করলে সাধারণত তার ভাই প্রতীকী পাত্র হিসেবে এই বিয়েতে অংশগ্রহণ করে। জীবিত ভাই মৃত ভাইয়ের পক্ষে ভূত বিয়ের আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকেন। এই স্ত্রী তার মৃত ভাইয়ের স্ত্রী হিসেবেই স্বীকৃত হয়ে থাকে। তবে সে প্রতীকী পাত্র হলেও ‘ভাইয়ের স্ত্রীর’ সঙ্গেই বাস্তবে সংসার করেন। যদি তাদের সন্তান জন্মগ্রহণ করে তাহলে সেই সন্তান মৃত ব্যক্তির বংশধর হিসেবেই বিবেচিত হয়।
প্রাচীন চীনে উদ্ভূত মৃত ব্যক্তির ভূত বিয়ের রীতি ১৯৪০- এর দশকের শেষের দিকে চীনে তা নিষিদ্ধ করে। তবে চীনের কয়েকটি প্রদেশের গ্রামাঞ্চলে এই রীতি এখনও নাকি পালিত হয়। ভূত বিয়ের রীতি পালনের জন্য কবর হতে মৃত দেহ চুরি হওয়ার নিদর্শনও রয়েছে বহু। বিশেষ করে নারীদের মৃতদেহ চুরি হয়ে থাকে।
এক তথ্যে জানা যায় যে, ২০১৩ সাল হতে ২০১৬ সালের মধ্যে চীনের শানজি প্রদেশের হ্যাংটন কাউন্টিতে কয়েক ডজন নারীর মৃতদেহ চুরি হয়ে যায়। অবিবাহিত মৃত পুরুষের বিয়ে দেওয়ার জন্যই তার পরিবার এসব চুরি হওয়া নারী মৃতদেহ চড়া দামে কিনে নেয় বলে শোনা যায়। একবার একটি পরিবার এক লাখ ৮০ হাজার উয়ান দিয়ে মৃতদেহ কিনেছিল বলেও জানা যায়। নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই মৃতদের বিয়ে দেওয়ার কাজ পেশা হিসেবেও গ্রহণ করেছে বলে শোনা যায়।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়
# সব সময় ঘরে থাকি।
# জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বের হলে নিয়মগুলো মানি, মাস্ক ব্যবহার করি।
# তিন লেয়ারের সার্জিক্যাল মাস্ক ইচ্ছে করলে ধুয়েও ব্যবহার করতে পারি।
# বাইরে থেকে ঘরে ফেরার পর পোশাক ধুয়ে ফেলি। কিংবা না ঝেড়ে ঝুলিয়ে রাখি অন্তত চার ঘণ্টা।
# বাইরে থেকে এসেই আগে ভালো করে (অন্তত ২০ সেকেণ্ড ধরে) হাত সাবান বা লিকুইড দিয়ে ধুয়ে ফেলি।
# প্লাস্টিকের তৈরি পিপিই বা চোখ মুখ, মাথা একবার ব্যবহারের পর অবশ্যই ডিটারজেন্ট দিয়ে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে।
# কাপড়ের তৈরি পিপিই বা বর্ণিত নিয়মে পরিষ্কার করে পরি।
# চুল সম্পূর্ণ ঢাকে এমন মাথার ক্যাপ ব্যবহার করি।
# হাঁচি কাশি যাদের রয়েছে সরকার হতে প্রচারিত সব নিয়ম মেনে চলি। এছাড়াও খাওয়ার জিনিস, তালা চাবি, সুইচ ধরা, মাউস, রিমোট কন্ট্রোল, মোবাই, ঘড়ি, কম্পিউটার ডেক্স, টিভি ইত্যাদি ধরা ও বাথরুম ব্যবহারের আগে ও পরে নির্দেশিত মতে হাত ধুয়ে নিন। যাদের হাত শুকনো থাকে তারা হাত ধোয়ার পর Moisture ব্যবহার করি। সাবান বা হ্যান্ড লিকুইড ব্যবহার করা যেতে পারে। কেনোনা শুকনো হাতের Crackle (ফাটা অংশ) এর ফাঁকে এই ভাইরাসটি থেকে যেতে পারে। অতি ক্ষারযুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট ব্যবহার থেকে বিরত থাকাই ভালো।