দি ঢাকা টাইমস্ ডেস্ক ॥ সৌর পরিবারের সবচেয়ে ছোট সদস্য হলো বুধ গ্রহ। এর অন্দরে লুকিয়ে রয়েছে অমূল্য সম্পদ। সম্প্রতি নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযান হতে প্রাপ্ত তথ্য বলছে যে, বুধ গ্রহে থাকতে পারে ১৬ কিমি দীর্ঘ এবং পুরু হিরার স্তর। নাসার বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কারকে অপ্রত্যাশিত ও চমকপ্রদ বলছেন গবেষকরা।
নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযান হতে পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা জানতে পেরেছেন যে, বুধপৃষ্ঠ হতে প্রায় ৫০০ কিমি নীচে হিরার এই পুরু স্তরটি বিদ্যমান রয়েছে।
ডেলি এক্সপ্রেসের এক খবরে বলা হয়, ২০০৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নাসার মেসেঞ্জার মহাকাশযানটি বুধকে প্রদক্ষিণ করে। এই দীর্ঘ সময় ধরে ছোট্ট গ্রহটির গঠন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে এই মহাকাশযানটি। নতুন এই আবিষ্কারটির কারণে গ্রহটির গঠন সম্পর্কে পূর্ববর্তী যেসব তত্ত্ব নাসার হাতে ছিল, তা খারিজ হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
বুধের পৃষ্ঠে গ্রাফাইট প্যাচের উপস্থিতি দেখে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন, গ্রহটিতে একসময় কার্বনসমৃদ্ধ ম্যাগমার মহাসাগরের উপস্থিতিও ছিল। সে কারণে ম্যাগমা বুধপৃষ্ঠের উপরে গ্রাফাইটের স্তরটি তৈরি করেছে ও গ্রাফাইটের জন্যই বুধের রং কালো।
নতুন গবেষণার কারণে এটা মনে করে হচ্ছে, বুধ গ্রাফাইট গঠিত নাও হতে পারে। বরং কার্বনের আরও মূল্যবান রূপ হিরা দিয়ে তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। বুধের পৃষ্ঠ ও কেন্দ্রের সীমানার মধ্যবর্তী প্রবল চাপের কারণে কার্বনসমৃদ্ধ ম্যাগমা হিরায় পরিণত হয়ে যেতে পারে বলে ভাবছে নাসা।
এতে করে দেখা যায় যে, বুধ বিজ্ঞানীদের বছরের পর বছর ধরেই বিভ্রান্ত করেছে। এর প্রধান কারণই হলো ঘন অন্ধকারে ঢেকে থাকা বুধপৃষ্ঠ। গ্রহটির কেন্দ্রের ঘনত্ব ও পৃষ্ঠে থাকা আগ্নেয়গিরিগুলো অসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ার কারণে সমস্যায় পড়েছেন নাসার গবেষকরা।
গবেষকদের ধারণা মতে, দুটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হিরার ওই স্তরটি গঠিত হতে পারে। কার্বন-সমৃদ্ধ ম্যাগমা জমাট বেঁধে স্ফটিকের আকারও ধারণ করতে পারে। কিংবা বুধের কেন্দ্রের তরল জমাট বেঁধে এই দীর্ঘ এবং পুরু হিরার স্তর তৈরি হয়েছে।
আসলেও বিষয়টি কতোটা সত্যি, তা জানার জন্য মহাকাশবিজ্ঞানীরা নাসার পরীক্ষাগারে বুধের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ তৈরি করেন। বুধের চরম পরিবেশকে অনুকরণ করে কৃত্রিম সিলিকেটের উপর ৭ গিগাপাস্কালেরও বেশি চাপ প্রয়োগ করে এই পরীক্ষাটি করা হয়।
এই আবিষ্কারটি থেকেই মহাকাশবিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছেন যে, কেনো বুধের প্রধান আগ্নেয়গিরির কার্যকলাপ প্রায় ৩৫০ কোটি বছর পূর্বে তুলনামূলকভাবে দ্রুত শেষ হয়। হিরার স্তরের দ্রুত তাপ শুষে নেওয়ার ক্ষমতাও রয়েছে। যে কারণে আগ্নেয়গিরিগুলোর অকালসমাপ্তি ঘটেছে বলেও মনে করছেন মহাকাশ গবেষকরা।
নাসার গবেষক দলটি বুধ গ্রহের ‘ম্যান্টেল-কোর’ সীমানায় হিরার স্তরের তাপীয় প্রভাব নিয়ে আরও বেশি করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিকল্পনাও করেছেন। বুধের অভ্যন্তরীণ গঠন ও বিবর্তন সম্পর্কে আরও বিশদভাবে জানতে ২০২৬ সালের ‘বেপিকলম্বো মিশন’ থেকে নতুন তথ্য আনানোর প্রচেষ্টা করবে নাসা।
বুধে হিরার উপস্থিতি নিয়ে মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্রে আলোড়ন উঠলে এই মুহূর্তে তা অধরাই থেকে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। কেনোনা- যে গভীরতায় এই হিরার স্তরটির অস্তিত্ব রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেখান থেকে সেটি খনন করা কার্যত অসম্ভব হিসেবে দেখছে নাসা।
>>>>>>>>>>>>>>
ডেঙ্গু প্রতিরোধ করবেন যেভাবে
মশা বাহিত একপ্রকার ভাইরাস জ্বর হলো ডেঙ্গু। এই জ্বর অন্যান্য ভাইরাস কিংবা ব্যাকটেরিয়াজনিত জ্বর থেকে ভিন্ন। অবশ্য এই জ্বর কোনোভাবেই ছোঁয়াচে নয়। এই ভাইরাস জ্বর এককভাবে বা অন্যান্য ভাইরাস (চিকুনগুনিয়া, ইয়েলো ফিভার, বার্মা ফরেস্ট, ফ্লু, রেসপাইরেটরি সিনসাইটিয়াল) এবং ব্যাকটেরিয়া (নিউমোক্কাস)-এর সঙ্গেও হতে পারে।
লক্ষণ ও জ্বরের তীব্রতার ওপর নির্ভর করে ডেঙ্গুজ্বরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর
২. রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বর।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে চোখে পড়ে মূলত নিচের এই লক্ষণগুলো-
১. হঠাৎ করে তীব্র জ্বর ও তা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হওয়া।
২. তীব্র মাথাব্যথা হওয়া।
৩. চোখের পেছনের অংশে ব্যথা হওয়া।
৪. জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে সারা শরীরে লালচে ফুসকুড়ি চোখে পড়া।
৫. সম্পূর্ণ শরীরে তীব্র ব্যথা ও সেইসঙ্গে কোমরে ব্যথা।
৬. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া।
৭. ত্বকে র্যাশ বা লাল দানা দানা দেখা দেওয়া।
রক্তপাতসহ ডেঙ্গুজ্বরের ক্ষেত্রে :
১. ২ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তীব্র জ্বর সঙ্গে নাক, মুখ বা বমির সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
২. জ্বরের পাশাপাশি বুকে বা পেটে পানি জমে যাওয়া।
এইসব লক্ষণের যে কোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলেই দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
অপরদিকে
জ্বরের প্রথম ৩ দিন বাড়িতে অপেক্ষা করুন। অপরদিকে সারা শরীর পানি দিয়ে স্পঞ্জ করুন কিছুক্ষণ পরপর। এতে করে জ্বরের মাত্রা কমে আসবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান ও বিশ্রাম নিতে হবে। এরপরেও জ্বর না কমলে বা কিছু সময় পরপর বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিষয়:
১. বাড়ির আশপাশ যতোটা সম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে চেষ্টা করুন।
২. ঘরের ভেতরে থাকা ফুলের টব বা ভাঙা প্লাস্টিকের বোতল, ডাবের খোসা, টায়ার অথবা পলিথিন থাকলে তা দ্রুত পরিষ্কার করে ফেলুন ও ফুলের টব থেকে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করুন।
৩. মশা নিধনের জন্য সপ্তাহে অন্তত ৩ বার স্প্রে বা ফগিং করুন।
৪. বাড়ির বাইরে যাওয়ার সময় মশা নিধনে ব্যবহৃত ক্রিম সঙ্গে রাখতে পারেন।
৫. সন্ধ্যার পর বাড়ির ছোট থেকে বড় সদস্যরা মশারি ব্যবহার করুন।
৬. যেখানে-সেখানে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিষ্কার করে ফেলুন, কারণ এতে এডিস মশা ডিম পেড়ে থাকে এই সময়।
৭. অপরদিকে মশার প্রকোপ থেকে বাঁচতে মশারির সঙ্গে সঙ্গে ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
৮. এডিস মশা যেহেতু দিনের বেলা কামড়ায় তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানিয়ে ঘুমানোর দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সূত্র: https://dmpnews.org